1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
নবীনগরে বিলুপ্ত প্রায় প্রেসিডেন্ট পদক প্রাপ্ত বিপিন মাঝির পুতুল নাচ! - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন

নবীনগরে বিলুপ্ত প্রায় প্রেসিডেন্ট পদক প্রাপ্ত বিপিন মাঝির পুতুল নাচ!

সঞ্জয় শীল নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেন এন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীদের পুতুল নাচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হলে তা সারা বাঙলাদেশেসহ সংস্কৃতি প্রেমী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। যা সোজা ভাষায় বলা চলে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহেক জিয়ার ট্রেনিংয়ে শিক্ষার্থীরা গানের তালে মানব পুতুল নাচের ভূমিকায় অভিনয় করলেও উপমহাদেশে হাতে তৈরি সুঁই -সুতা, কাপড়, স্প্রিং-কাঠির জড় পুতুল নাচের জনক বিপিন দাস বা বিপিন মাঝির জন্ম ১৮৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বৃটিশ ভারতের কৃষ্ণনগর গ্রামে। যা বর্তমান বাঙ্লাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউপির (নবীনগর টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া রোডের মাঝামাঝি) কৃষ্ণনগর নামে পরিচিত।
পৃথিবীতে পুতুল নাচের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো হলেও বিপিন মাঝির পুতুল নাচ ইতিহাসে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ছোট বেলা পুতুলকে মানুষের মতো হাঁটা-চলা, কথা বলার ইচ্ছা থেকেই তিনি গড়ে তুলেছেন পুতুল নাচের দল, “পৌরাণিক কাহিনি পুতুল শো”। জানা যায়, তিনি তার পুতুল নাচের দল নিয়ে ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর ২৭ টি দেশে পুতুল নাচের খেলা দেখিয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর সুনাম ও পুতুল নাচের কথা তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ ও সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর সান্নিধ্য ও কৃষ্ণনগরের জমিদার গোবিন্দ রায়ের বাড়ির আঙ্গিনায় শখের বাদ্যযন্ত্র বাজানো বিপিন মাঝি  বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন পাকাপোক্ত। গান-বাজনা, যাত্রা ও সংস্কৃতির নেতৃত্বের গুনে তিনি হয়ে উঠেন পুতুল নাচের জাদুকর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিপিন মাঝির বাড়িতে বেড়াতে এসে তার গান শুনে প্রশংসা করেছিলেন। কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায় তার পুতুল নাচের ইতিকথা বইটি লেখার আগে বিপিন মাঝির সান্নিধ্যে ছিলেন দীর্ঘ দিন।
বৃটিশ ভারতে সবাক ও নির্বাক চলচ্চিত্র সোনা গাঙের নোনা মাঝি, শুইয়ে নদীয়া জাগে পানি (পাকিস্তান শাসনামল), Wox doll, Silence tower, Broken idolater stle নামে চলচিত্রের কারিগর বিপিন মাঝি ছিলেন রাজনীতি সচেতন মানুষও।  ১৯৪৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষ্ণনগরে এলে তাকে নিজের হাতের তৈরি নৌকা দিয়েছিলেন বিপিন মাঝি।
তার পুতুল নাচের সবচেয়ে বেশি ব্যাপ্তি ঘটে রেডিও- টেলিভিশনে সম্প্রচারে মাধ্যমে। বিপিন মাঝির  চার পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের মধ্যে ওস্তাদ গোবিন্দ দাস ও ওস্তাদ কবি বাদল দাস পুতুল নাচ দেখিয়ে বেশ সুনাম কেড়েছেন। ওস্তাদ গোবিন্দ দাসের পুতুল নাচের ভাব শিষ্য দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার ধারাবাহিক ভাবে বাঙলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এ নিজ হাতে গড়া পুতুল শো করতেন। বর্তমাসে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিটিভিতে চলমান হাজার পর্বের অধিক শিশুতোষ-সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান “সিসিমপুর” এর মূল আর্কষণ পুতুল শো।
এছাড়া বিপিন মাঝির পুতুল নাচে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নোয়াখালী,  চট্টগ্রাম,  ময়মনসিংহ,  নরসিংদীসহ অনেকে অঞ্চলেই ব্যক্তি উদ্যাগে পুতুল নাচ দেখানোর দল গড়ে উঠে। বিপিন মাঝি নিজে তাদের অনেকে শিখিয়ে গেছেন। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেড্ডার সবুজ বাগের খাঁ বাড়ির অনেকেই উল্লেখযোগ্য। স্থানিয় এনজিওর সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রাম গঞ্জে কুসংস্কারের কুফল, তাবিজ-টোনার ভন্ডামি, স্ব্যাস্থ ও রাজনৈতিক সচেতনতা, উদ্যোক্তা হয়ে উঠার অনুপ্রেরণার জন্য  ২০২০ সালে সর্বশেষ পুতুল নাচের শোর কথা জানা যায়।
পৈতৃক সূত্রে কলকাতাগামী নৌকার মাঝি থেকে পুতুল নাচের মাধ্যমে মানুষের বিনোদনের খোরাক যোগানোর পাশাপাশি ধর্ম, শিক্ষা, স্ব্যাস্থ, ইতিহাস, সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিতেন বিপিন মাঝি। তারই কৃতিত্বের ঝুলিতে উঠেছে মরনোত্তর  প্রেসিডেন্ট পদক, একাডেমি পদক, বিশ্বভারতী পদক,  পদ্মভুষণ পদক সহ ভারত ও স্বাধীন বাঙলাদেশের সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক পদক ও সম্মান। ১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই মহান শিল্পী ৯৯ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।
তাঁর মৃত্যুর ৪ দশকের ব্যবধানে নবীনগর থেকে হারাতে বসছে তাঁর অমর সৃষ্টি। বর্তমান পৃথিবীতে রাশিয়ার কাঠি টানা পুতুল নাচ, চীনের ছায়া পুতুল শো, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান মানুষের সুঁতায় টানা শো, ইটালির পাপেট শো বেশ সুনামের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ নবীনগরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গর্ব পুতুল নাচ প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পারে এখানের হারানো পুতুল নাচকে আবার ফিরিয়ে আনতে।
নবীনগর পৌর মেয়র এড. শিব শংকর দাস বলেন, একটা অঞ্চলকে চিনে তার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সুনাম দিয়ে। আমরা যদি বিপিন মাঝির এ সৃষ্টিকে জিইয়ে না রাখতে পারি তা আমাদের জন্য ব্যর্থতা।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিপিন মাঝির পুতুল নাচ আমাদের জন্য গর্ব। সেই সাথে পুতুল নাচের মাধ্যমে আমরা সমাজে সুন্দর ও ভালো কিছু ছড়িয়ে দিতে পারি। আমি চেষ্টা করবো, বিপিন মাঝির স্মৃতিধন্য ভিটে ও পুতুল নাচের জন্য কিছু করার।যাতে আগামী প্রজন্মের মানুষ আমাদের বিপিন মাঝির অবদান সম্পর্কে জানতে পারেন।

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD