ভ্রমন করতে কার না ভাল লাগে। যদি আর্থিক সংগতি থাকে তাহলে জীবনটাকে আরো উপভোগ্য এবং স্মৃতিময় কেে রাখতে ভ্রমনের কোন বিকল্প নেই। এটা একদিকে মানসিক প্রশান্তি অন্যদিকে শারিরিক চেতনা শক্তি বৃদ্ধিসহ চলার পথে যে কারো জীবকে গতিশীল বৈচিত্রময় করে তোলে নিঃসন্দেহে। তাই হাতে সময় আর অর্থের সংস্থান থাকলে ভ্রমনে মেতে উঠতে পারি যে যার মত করে। অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভুমি নিজ মার্তৃভূমি বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীতে রয়েছে আরো চোখ জুড়ানো মন জুরানোর অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। যা ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এমনই কিছু ভ্রমন পিপাসুরা ছুটছিলাম নৈসর্গিক সাগরকন্যা নামে খ্যাত মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা ভ্রমনে। প্রমথ চক্রবর্ত্তী,উত্তম কুমার পাল হিমেল,অশোক কুমার দাশ,সলিল বরন দাশ,গৌর শংকর দাশ,তাপস দাশ,নিরুপম দেব ৭ সদস্যের টীম। ৩ রাত ৪ দিন মালদ্বীপ আর ২ রাত ৩দিন শ্রীলংকা সফরে অর্জন হয়েছে বিস্তর অভিজ্ঞতা।
ভ্রমন মালদ্বীপঃ
ভ্রমনের তালিকায় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মালদ্বীপের ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুবই প্রাচীন। সংস্কৃত শব্দ দ্বীপমালা শব্দ থেকেই মালদ্বীপ নামটা এসেছে। আবার কারও কারও মতে মালদ্বীপ হচ্ছে দ্বীপরাজ্য। কারও কারও ভাষায় এটি মহল দ্বীপ। মহল অর্থ প্রাসাদ। মোটকথায় গুচ্ছ গুচ্ছ প্রবাল দ্বীপ নিয়ে এ দ্বীপ রাজ্যে।পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম এই দেশকে বিধাতা যেন দুই হাতে কল্পনাতীতভাবে সাজিয়েছেন।ভারত মহাসাগরের দেশ মালদ্বীপ ১ হাজার ২ শত ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত।দেশটির স্থলভাগের মোট আয়তন ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার। মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ২ লক্ষ লোক নাগরিকত্ব ছাড়াই কাজ করছেন দেশটিতে। মালদ্বীপ ভ্রমণ-হুলেমালে,মালে সিটি #নীলাভ পানির মাঝে এক টুকরো সবুজ(মালদ্বীপের প্যারাডাইস আইল্যান্ড),ডলফিন ক্রুইজ,ইমাপুষি সীবিচ, সেন্ট ব্যাংক,স্নোরকিলিং,আইসল্যান্ড হোপিং সহ অনেক দর্শনীয় স্থান ভ্রমন করে সকলের চোক জুড়িয়েগেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে। দেশের আইনসভার নাম মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র।
ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক এর সদস্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত “মালে দিভেহী রাজ্য” হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। কারো কারো মতে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ অর্থ দ্বীপ-মাল্য বা ‘মহিলা দ্বীপ’।
মালদ্বীপ কেন বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নিতে চায়? পেয়ারা সমুদ্র বন্দরে রমনাবাদ খালে ব্যাপক খনন কার্য ড্রেজিং করে বালি এবং পলি অপসারণ ব্যয়বহুল। বিশেষজ্ঞরা রপ্তানির বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। মালদ্বীপের কাছে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ এ জাতীয় প্রস্তাব দিয়েছে, জলস্তর বৃদ্ধির কারণে মালদ্বীপকে দ্বীপের ভূমি উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করতে হবে। তাদের এই পলি দরকার।
ইসলাম মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় ধর্ম এবং ২০০৮ সালের সংবিধানের ৯ ধারার ডি অনুচ্ছেদের একটি সংশোধনীতে বলা হয় কোন অমুসলিম মালদ্বীপের নাগরিকত্ব পাবে না।। ১২তম শতাব্দীতে এই দ্বীপটির জনগোষ্ঠী কার্যকরভাবে সবাই মুসলমান। মরক্কোর পরিব্রাজক ইবনে বতুতার মতে, মালদ্বীপে ইসলাম্ এসেছে এজিন মুসলিম পরিব্রাজকের দ্বারা যার নাম আবু আল বারাকাত যিনি মরক্কো থেকে এসেছিলেন।
দ্রুত ওপরে উঠে আসা সমুদ্রতল পাছে দেশটাকে ডুবিয়ে দেয় সেই ভয়ে মালদ্বীপ সরকার নাকি পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে জমি কেনার কথা ভাবছে। আপনি মালদ্বীপ গেছেন? আমাদের সেই কাহিনী শোনাতে পারেন?
‘নীল শুধু নীল/সবুজের ছোঁয়া কিনা তা বুঝি না/ফিকে গাঢ় হরেক রকম কমবেশি নীল/তার মাঝে শূণ্যের আনমনা হাসির সামিল/কটা গাঙ চিল।’ খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের ওপর থেকে নীল নীলিমার দেশ মালদ্বীপে যখন নামছি, তখন হেমন্ত মুখার্জির গাওয়া এই গানের সুরই মনে ভাসছিল। মাথার মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিখ্যাত কবিতায় সুধীন দাশগুপ্তের বসানো সুরের মায়াজাল। চারদিকে শুধু নীল জল আর জল। মনে হচ্ছিল বিমানটি কি তবে জলেই নামবে! মনে পড়ে যাচ্ছিল সেদিনটার কথা। তখনও মালদ্বীপ বেড়াতে যাবো ঠিক হয়নি। বিশ্বের মানচিত্র খুলে মালদ্বীপের অবস্থান দেখছিলাম সবে। হঠাৎ বড় একা লেগেছিল দেশটিকে আমার। চারদিকে সফেন সমুদ্রের মাঝে যেন কতগুলি বিন্দু। একক, কিন্তু স্বতন্ত্র।
দ্বীপের নাম হুলহুমালে। সেখানেই মালদ্বীপের ভেনালা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সমুদ্র ভাসমান এক খণ্ড জমি। আকাশ থেকে অবতরন করে দেখলাম ছোট্ট, কিন্তু খুব পরিচ্ছন্ন এই বিমানবন্দর। ইমিগ্রেশন অফিসারকে এখানে আসার উদ্দেশ্য জানিয়ে বিমানের ফিরতি টিকিট, হোটেল বুকিং-এর কাগজ দেখাতেই ৩০ দিন থাকার অনুমতি পেয়ে গেলাম। বাইরে বেরোতেই সমুদ্রের বাতাস চোখে-মুখে এসে লাগছিল। জলের দেশ মালদ্বীপে এসেছি। সব সময়েই সাগরের সঙ্গ মেলে। মজা লাগলো, এয়ারপোর্ট থেকে শহর যাওয়ার জন্য এখানে কোনও গাড়ি পাবো না জেনে। আসলে রাজধানী মালে তো অন্য আর এক দ্বীপে অবস্থিত। আর এ রকম অনেক অনেক দ্বীপ আছে এই আজব দেশে। যাওয়ার জন্য তাই ফেরিই ভরসা।
তবে জলযাত্রাকাল সামান্যই, মাত্র ১০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। পরে আবার একদিন হুলহুমালে দ্বীপে এসেছিলাম। তখন আধুনিক পরিকল্পিত নগরায়নের সুস্পষ্ট ছাপ চোখে পড়েছে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ঝাঁ-চকচকে। রাস্তার দু’ধারে কখনও ঝাউগাছ, কখনও সমুদ্র। কোথাও আবাসন, কোথাও বা বহুতল অফিস। হুলহুমালের সৈকতে বসেছিলাম যখন, সি-প্লেনের ওড়াউড়ি চোখে পড়ছিল। দূরে দূরে যে সব দ্বীপ আছে সেখানে যাতায়াতের জন্য এই প্লেন এখানে বেশ জনপ্রিয়। ভারত মহাসাগরের নোনা নীল জলে মুখ লুকোনো প্রবাল প্রাচীর জেগে উঠেছিল সেই কবে।
ভ্রমণ শ্রীলংকাঃ
রাবণ রাজার লঙ্কাপুরীর বর্তমান নাম শ্রীলঙ্কা। রাজধানী কলম্বো। শ্রীলঙ্কার জনসাধারণ অদ্ভুতরকমের শান্ত। রাস্তাঘাট খুবই পরিষ্কার। পথেঘাটে মানুষ সুশৃঙ্খল। এতোটুকু একটি দ্বীপ রাজ্য অথচ কী সুন্দর ও পরিষ্কার- তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। দেশটিতে ভ্রমণ করার মতো রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান, স্থাপনা এবং ঐতিহ্য। অল্পদিনের ভ্রমণের জন্য দেশটি আদর্শ স্থান।
ডাম্বুলা গুহামন্দির এর অপর নাম ‘গোল্ডেন টেম্পলস ডাম্বুলের’। জায়গাটি কলম্বো থেকে ১৪৮ কিলোমিটার দূরে। ১৯৯১ সালে জায়গাটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্ডি থেকে ৭২ কিলোমিটার উত্তরে। শ্রীলঙ্কার মধ্যভাগে এ জায়গাটি। সব লঙ্কার মধ্যে এই মন্দিরগুলো ভীষণ ভালোভাবে সংরক্ষিত। পাহাড়ের ১৬০ মিটার উপরে এই গুহামন্দিরের অবস্থান। আজ পর্যন্ত ৮০টি গুহামন্দির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
এখানকার সব মূর্তি ও দেয়ালে অঙ্কিত ছবি গৌতম বুদ্ধের জীবন এবং জীবনী অবলম্বনে। মোট ১৫৩টি বুদ্ধের মূর্তি, ৩টি শ্রীলঙ্কার রাজাদের এবং ৪টি ভাস্কর্য হিন্দু দেব-দেবীর। এসব ভাস্কর্য মোট ২১০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে ছড়ানো। অনুরাধাপুরা পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত এ শহরটি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজধানী ছিল। শহরটির উল্লেখযোগ্য হলো ডোগাবস। সেই যুগে এই ডোগাবসগুলো ইট দিয়ে তৈরি, অর্ধগোলাকার বা বৃত্তাকার। এর মধ্যে রূবানভিলিসিয়া উল্লেখযোগ্য। স্থাপন করা হয়েছিল দ্বিতীয় শতাব্দীতে, ব্যাস ৩০০ ফুট। জেটাওয়ানারামা ডোগবার ব্যাস ৩৭০ ফুট। থুপারামা ডোগবাটি গৌতম বুদ্ধের গলার হাড় বহন করে। বিখ্যাত বো-গাছ, যার তলায় স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেছিলেন, সেটিও এই শহরে আছে। গাছটি ২২৫০ বছর আগে রোপণ করা হয়েছিল, ভারতবর্ষ থেকে এটিকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর সব থেকে পুরাতন গাছ বলে এটিকে মানা হয়।
পোলোনারুয়া এটি আর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এটি শ্রীলঙ্কার রাজধানী ছিল ১১ থেকে ১৩ শতাব্দী পর্যন্ত। লঙ্কাতিলকে, তিভাঙ্কা ও থুপারামা- এই তিনটি বৌদ্ধস্তূপগুলো জগদ্বিখ্যাত তাদের ফ্রেসকো ও বৌদ্ধ স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হিসেবে। এগুলো পোলোনারুওয়া রাজত্বকালে শ্রেষ্ঠ শিল্প নিদর্শন। রাণকোট বিহারা এবং কিরীবিহারা হলো সেই যুগে নির্মিত ও সংরক্ষিত দু’টি বিশাল বৌদ্ধস্তূপ। গল বিহার, একটি পাথরের মন্দির, যেখানে বোধিসত্ত্বকে চারটি রূপে পাওয়া যায়। এখানে রাজা পরাক্রমবাহুর অপূর্ব একটি পাথরের মূর্তি আছে। ভাতা-ডা-গে সেই সময়ের লঙ্কান স্থাপত্য শিল্পের উৎকর্ষতা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই রাজধানীটি বাহির এবং অন্দর পরিখা দ্বারা বেষ্টিত। রাজপ্রাসাদ, সভাগৃহ ও অন্যান্য গৃহগুলো আর একটি দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত ছিল।
সিগীরিয়া এটি আর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এর অপর নাম ফোর্টরেস ইন দ্য স্কাই। এটিকে অনায়াসে পৃথিবীর একটি অত্যাশ্চর্য স্থান বলা যেতে পারে। এটিকে আবার সিংহ চাটানও বলা হয়। এই পাথরের চাটানটি ভূপৃষ্ঠের থেকে ৬০০ ফুট ওপরে। ভূপৃষ্ঠের থেকে ডুলিতে করে হাতে টানা দড়ির কপিকলের সাহায্যে রাজধানীবাসীদের ওপরে তোলা হতো। এর দেয়ালগুলো এতোই খাড়া যে সেই দেয়াল বেয়ে ওপরে ওঠা প্রায় দুঃসাধ্য পরিভ্রমণকারীদের জন্য। তবে উপরে উঠলে সৌন্দর্যের উপভোগটাই আলাদা।
শ্রীলঙ্কাকে বলা হয় ‘ভারত মহাসাগরের মুক্তা’। দেশটি ভ্রমণে গেলে এই উপমাকে মোটেও বাড়াবাড়ি বলে মনে হবে না। প্রাকৃতিক বৈচিত্রে ভরা দেশটি এশিয়ার অন্যতম সুন্দর দেশ এবং সারা বছরই বিশ্বের অসংখ্য পর্যটক দেশটি ভ্রমণে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস সাময়িকী ফোর্বস এ বছর বিশ্বের যে ২৩টি স্থানকে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেখানে শ্রীলঙ্কার নামও আছে। দেশটিতে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করা যাবে, তেমনি সাগর পাড়ে বসে বিস্তৃত উপকূলও দেখতে পারবেন। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকেরা প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যের জন্য শ্রীলঙ্কার ঘন জঙ্গলেও যেতে পারবেন।
এটি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় শহর ও দেশটির নির্বাহী ও বিচারিক রাজধানী। শহরটি যেন ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক প্রদর্শনীকেন্দ্র, যা সব পর্যটকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। কলম্বোর স্থাপত্যকলায় এর ডাচ, পর্তুগিজ ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছাপ রয়েছে। ডাচ জাদুঘর এবং স্বাধীনতা চত্বরে গেলে দেশটির ঔপনিবেশিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। কলম্বোর জাতীয় জাদুঘরে গেলেও দেশটির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য দেখার জন্য জামে উল-আলফার মসজিদ, গঙ্গারাময় মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির এবং হিন্দু মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন। কলম্বোর ঐতিহাসিক ডাচ হাসপাতাল, পোর্ট কলম্বো এলাকা ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। শহরে খাওয়ার জায়গার কোনো অভাব নেই। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব থেকে শুরু করে হিলটন’স কারি লিফ, দ্য লাগুন রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে পারেন। স্থানীয় খাবারের স্বাদ পেতে যেতে পারেন পেত্তাহ মার্কেটে।
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে উঁচু ভবন কলম্বো লোটাস টাওয়ার। ৩৫০ মিটার উঁচু এই টাওয়ার থেকে পুরো কলম্বোর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বেইরা লেকে নৌকাভ্রমণ করতে পারেন অথবা সময় থাকলে শহরের সবচেয়ে বড় পার্ক বিহারামহাদেবী পার্কেও একটু ঢুঁ মারতে পারেন।
গিরিয়া নামের ওই স্থানটি ১৮০ মিটার উঁচু এক বিশাল পাথরখণ্ডের চূড়ায় অবস্থিত। অনেকে জায়গাটিকে ‘মেঘের প্রাসাদ’ নামে ডাকেন। পাথর বেয়ে সিগিরিয়াতে উঠতে ও নামতে অনেক সময় লাগে ঠিকই, তবে উপর থেকে যে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন, তাতে এ কষ্টকে স্বার্থক মনে হবে। সিগিরিয়া ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এ ছাড়া আরও দেখতে পারেন পিডুরাঙ্গালা রয়্যাল কেভ টেম্পল, প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির, বিশালাকার পিডুরাঙ্গালা পাথরখণ্ড এবং রয়্যাল কেভ টেম্পল- যেটি আরেকটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বণ্য এশিয়ান হাতি দেখতে চাইলে ও জিপ সাফারি উপভোগ করতে হলে মিনেরিয়া ন্যাশনাল পার্কে যেতে পারেন।
অনুরাধাপুরা শ্রীলঙ্কার উত্তর প্রদেশের একটি পুরানো শহর, যা তার প্রাচীন এবং আধুনিক চরিত্র দিয়ে যে কাউকে অবাক এবং মুগ্ধ করবে। অনুরাধাপুরার গোড়াপত্তন হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। কথিত আছে বোধি গাছ কেটে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছে। এই বোধি গাছের নিচে বসেই গৌতম বুদ্ধ জ্ঞাণ অর্জন করেছিলেন। পরবর্তী ১৩০০ বছর পর্যন্ত এ শহরটির রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব ছিল।
এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। এই শহরটি একটি প্রত্নতাত্বিক বিস্ময়। এতিহাসিক শহরটিতে শ্রী মহা বোধি গাছের দেখা মিলবে। এ ছাড়া বৌদ্ধ ধর্মের আরও বেশি কিছু পবিত্র স্থান আছে শহরটিতে। বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের উইলপাত্তু জাতীয় উদ্যানে যেতে পারেন। ভাগ্য সহায় থাকলে শ্রীলঙ্কান চিতাবাঘও আপনার চোখে পড়তে পারে।
গল শ্রীলঙ্কার ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়াপত্তন হয়েছিল যেসব শহরে, সেগুলোর মধ্যে গল অন্যতম। গল ফোর্ট এখন ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। শহরের সর্বত্র ইউরোপীয় স্থাপত্যকলার উপস্থিতি সহজেই চোখে পড়বে।এই শহরটি প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিল পর্তুগিজরা। পরবর্তীতে ডাচ ও ব্রিটিশদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ ছিল।
নুয়ারা এলিয়া স্থানীয়ভাবে ‘লিটল ইংল্যান্ড’ নামে পরিচিত শহরটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এবং মানুষ মূলত শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে যায়। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ১২৮ ফিট উঁচুতে অবস্থিত।শহরটিকে প্রকৃতির স্বর্গ বলা যেতে পারে। এখানে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে হর্টন প্লেইনস ন্যাশনাল পার্ক, পেড্রো টি স্টেট, মুন প্লেইন, গ্রেগরি লেক, গালওয়ে’স ল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক, ইত্যাদি।
রামের স্ত্রীকে রাবণ এখানেই লুকিয়ে রেখেছিল। সীতার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেখানে এখন একটি মন্দির আছে। রাবণের হাতে বন্দি অবস্থায় সীতা এখানেই তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিল। জাফনা এক সময় প্রাচীন তামিল রাজ্যের রাজধানী জাফনা বর্তমানে শ্রীলঙ্কার উত্তর প্রদেশের রাজধানী। উপকূলীয় শহরটির সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। তামিল ও শ্রীলঙ্কান-উভয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন দেখা যাবে এই শহরে। শহরটি এক সময় ডাচ ও পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। ফোর্ট জাফনায় গেলে সেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।
১৬১৯ সালে পর্তুগিজরা প্রথম এই দুর্গটি তৈরি করেছিল। ৪০ বছর পরে ডাচরা এটির সংস্কার করেছিল এই শহরটিতে প্রচুর প্রাচীন মন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে নাল্লুর কান্দাস্বামী মন্দির, কেরিমালাই নাগুলস্বামী মন্দির, নাগাদ্বীপা মন্দির, নাগাপুষানী আম্মান মন্দির অন্যতম।৩০ শে নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী দু,দেশের ভ্রমনটি ছিল সত্যিই আনন্দদায়ক এবং জ্ঞান অর্জনের অন্যতম একটি উপাদান। মালদ্বীপের ত্রি ষ্টার বীচ গ্রাউন্ড এবং স্পা এবং শ্রীলংকার ওসান কলম্বো ফাইভষ্টার হোটেলের করিডোরে বসে সমুদ্রের মনকাড়া ঢেউের গর্জন এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য বিদ্যমান।
Leave a Reply