প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথে ‘কমনওয়েলথ-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিনইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। মালাউই-এর কৃষিতে সবুজ প্রযুক্তির প্রসারে বিশেষ অবদান রাখায় ‘প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকা’কে এই পুরস্কার দেয়া হয়। মঙ্গলবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ‘কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাকে এই পুরস্কার প্রদান করেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে গ্লাসগোতে কফ-২৬ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কমনওয়েলথ-সিভিএফ-এর ‘ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি ও কমনওয়েলথ-এর ব্যবসায় ও বাণিজ্য সংগঠন কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি)-এর চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড যৌথভাবে এই পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
পরবর্তীতে কমনওয়েলথ মনোনীত একটি জুরিবোর্ড কমনওয়েলথ-ভুক্ত ৫৪টি সদস্য দেশের পরিবেশ-বান্ধব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে, যার মধ্য থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ঘানা ও মালাউই-এর চারটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়।এরপর জুরিবোর্ড এই চার প্রতিষ্ঠান থেকে প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতকরে।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগেই ১৯৭২ সালের ১৮ এপ্রিল কমনওয়েলথে বাংলাদেশ সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মালাউই-এর প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাকে এই পুরস্কার হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আশা করি, এই পুরস্কার কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪টি সদস্য দেশে জলবায়ু-বান্ধব ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি-নির্ভর টেকসই ব্যবসায়ের প্রসার উৎসাহিত করবে।
”সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কমনওয়েলথেরমহাসচিব এবং সিডব্লিউইআইসির চেয়ারম্যানকে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ঘোষণার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিডব্লিউইআইসি-এর অফিসিয়াল কৌশলগত সদস্য হিসেবে যোগদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কমনওয়েলথের বিজনেস-টু-বিজনেস কানেক্টিভিটি লিড কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ত্বরান্বিত করতে সিডব্লিউইআইসি -এর গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ, জ্বালানি, জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়কমন্ত্রী লর্ড গোল্ডস্মিথ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, পরিবেশের অনুকূল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে তাঁর সরকারের অসাধারণ ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের বছরের পর বছর ধরে আশ্রয় ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম অনুষ্ঠানে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে প্রথম কমনওয়েলথ-এর সদস্যপদ লাভ করে এবং বঙ্গবন্ধু কমনওয়েলথ-এর মূল্যবোধের প্রতি তাঁর দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতি ও একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে আমি কমনওয়েলথের মহাসচিব এবং সিডব্লিউইআইসির চেয়ারম্যানের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' প্রবর্তনের প্রস্তাব করি। আজ এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে কমনওয়েলথের ৫৪টি দেশে জাতির পিতার মূল্যবোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংক মোকাবিলার পাশাপাশি জলবায়ু-বান্ধব প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ উৎসাহিত করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হল।”
কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকায় তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এই পুরস্কার কমনওয়েলথে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ও অংশীদারিত্বের আরেকটি বড় উদাহরণ যা কমনওয়েলথে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ব্যবসায় সবুজ অর্থায়ন আর উৎসাহিত করবে এবং আমাদেরকে কম কার্বন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও জলবায়ু সহনশীল অর্থনীতি গড় তোলার ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।” কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড তাঁর স্বাগত বক্তব্যে কমনওয়েলথব্যাপী নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে, বিশেষ করে জলবায়ুর সুরক্ষা সহায়ক ব্যবসা-বাণিজ্যে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' অসীম প্রেরণা যোগাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগামীতেও এই পুরস্কার প্রদান অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান এসএলএম পার্টনারস-এর চেয়ারম্যান ও ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-এর জুরিবোর্ডের অন্যতম সদস্য জাস্টিন মুন্ডি অনুষ্ঠানে পুরস্কারের মনোনয়ন ও চূড়ান্ত নির্বাচনের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন।
‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' গ্রহনের পর প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকার প্রতিনিধি এমবুনডেরি কাম্পেসি এই পুরস্কার প্রদানের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “কমনওয়েলথ এবং বাংলাদেশের জাতির পিতার নামে প্রবর্তিত এই বিশেষ অ্যাওয়ার্ড প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাসহ কমনওয়েলথ পরিবারে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও জলবায়ূ-বান্ধব ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্যোগকে আরো উৎসাহিত করবে।
অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী এবং বিভিন্ন পেশাজীবীসহ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply