মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার বার্ষিক সাধারণ সভা। সাধারণ সভার শেষ পর্বে বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশাকে সভাপতি এবং মুনিরা পারভিন ও সংস্কৃতিকর্মী স্মৃতি আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী এক বছর সংগঠনকে নেতৃত্ব দিতে গঠন করা হয়েছে নতুন কার্যকরী কমিটি। ১৩ নভেম্বর, রবিবার পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক সুলতান শরীফ, প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক মাহমুদ এ রউফ, রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, সাহিত্যিক ও সিনিয়র সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ প্রমূখ।
সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুনিরা পারভিনের পসঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭১ এর ১৪ই ডিসেম্বর নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবী, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ, ১৯ ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট ঘাতকের বুলেটে প্রাণ বিসর্জন দেয়া বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার সদস্য, ৩রা নভেম্বর জেল হত্যার শিকার জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ ৭৫ পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কেন্দ্রীয় ও যুক্তরাজ্যশাখা নির্মূল কমিটির উপদেষ্ঠা, কিংবদন্তী সাংবাদিক কলামিষ্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রুবি হক ও সংগঠনের বার্মিংহাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সদ্য প্রয়াত এলাহি হক শেলুর মৃত্যুতে সভায় শোক প্রস্তাব উত্তাপন করেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি আজাদ।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুনিরা পারভিন সভায় সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন। কোষাধ্যক্ষ এনামুল হক আর্থিক রিপোর্ট ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মুস্তাফিজুর রহমান বেলাল উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক রিপোর্ট। এরপর রাজনৈতিক রিপোর্ট উত্তাপন কালে সংগঠনের সহসভাপতি সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ১৯৭১ সালের গনহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং আদালতের রায়ে দন্ডিতসহ বিদেশে পলাতক ২০জন যুদ্ধাপরাধীকে অবিলম্বে বাংলাদেশের হাত তুলে দেয়ার দাবী জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত এই যুদ্বাপরাধীরা যে যে দেশে পালিয়ে আছে সেই দেশের কারাগারে তাদের প্রেরণ করার দাবি জানান।
’ রাজনৈতিক রিপোর্টে বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক সংখ্যালঘু নির্যাতনের সকল ঘটনার দ্রুত বিচার, মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জান মাল ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনসহ সামরিক স্বৈরাচার কর্তৃক আনীত সংবিধানে সকল সাম্প্রদায়িক সংশোধনী বাতিল করে বাহাত্তরের সংবিধান পরিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবোনাল গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানান। প্রস্তাবে বলা হয়, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এই শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও দেশে তালেবানি শাসন চালুর ঝুঁকি তৈরী হবে। আজকের সম্মেলন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ক্ষমতা দখলের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান।
সাধারণ সভার শেষ পর্বে আগামী এক বছরের জন্য গঠিত হয় সংগঠনের নতুন কমিটি। সংগঠনের তিন উপদেষ্ঠা প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান শরীফ, প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক মাহমুদ এ রউফ, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক হামিদ মোহাম্মদ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য, ইউরোপীয়ান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার কর্মি আনসার আহমেদ উল্লার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্বে সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশাকে সভাপতি এবং মুনিরা পারভিন ও সাংস্কৃতিক কর্মি স্মৃতি আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী এক বছরের জন্য নতুন নির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণা দেয়া হয়।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা হলেন:
সভাপতি: সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা। সহসভাপতি: সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, হরমুজ আলী, জামাল আহমেদ খান, নাজমা হোসেইন, হিফজুর রহমান খান (মিডল্যান্ড) ও মকিস মনসুর (ওয়েলস)। সাধারণ সম্পাদক: মুনিরা পারভিন ও স্মৃতি আজাদ। সহকারী সাধারণ সম্পাদক: সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল ও জুয়েল রাজ। কোষাধ্যক্ষ : মো: এনামুল হক। সাংগঠনিক সম্পাদক: সুশান্ত দাশ প্রশান্ত।তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক: রুকসানা পারভিন জোসনা। প্রেস সেক্রেটারী: সাংবাদিক আবু সালেহ মোহাম্মদ মাসুম প্রকাশনা সম্পাদক: রুমানা রাখি সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক: সেলিনা আখতার জোসনা। নির্বাহী সদস্যরা হলেন: সৈয়দ এনামুল ইসলাম, নুরুদ্দিন আহমেদ, কাউন্সিলার পুস্পিতা গুপ্তা, আন্জুমান আরা অন্জু, কাউন্সিলার মঈন কাদরী, জেসমিন চৌধুরী (ওয়েলস) ও সাংবাদিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply