ইহুদী-খৃষ্টান. বৌদ্ধ, শিখ ও অন্যান্য বর্ণের বিপুল সংখ্যক নন-মুসলিমের অংশগ্রহণে ব্রিটেনে সপ্তম বারের মতো উদযাপিত হলো ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসূচি । গেল ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর শনি এবং রবিবার ব্রিটেনের দুই শতাধিক মসজিদ নন-মুসলিম নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় । রোববার ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ মুসলিম-অমুসলিমদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে । সারাদিনই দলে-দলে আসতে থাকেন খৃস্টান, ইহুদীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ । তাঁরা মসজিদের ভেতর ঘুরে ঘুরে দেখেন । মসজিদ উপসনার স্থান, সকল মসজিদে গোপনীয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়না- এ ধরনেরই একটি স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে ফিরে যান দর্শনার্থীরা।
অন্যান্য মসজিদের মতোই ইস্ট লন্ডন মসজিদ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা ছিলো। এলএমসি’র গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলো ইসলামের প্রদর্শনী এবং মারিয়াম সেন্টারের দু’তলায় বারাকা খান গ্যালারিতে ছিলো মস্ক আর্কাইভ এক্সিবিশন ও প্রশ্নোত্তর সেশন । এক্সিবিশনে প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো হাতেলেখা কুরআন শরীফ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিলো নন-মুসলিমদেরকে মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখানো, মসজিদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে ডুকমেন্টারি প্রদর্শন, জামাতে নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখানো, মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রদর্শনী, চিলড্রেন এক্টিভিটি কর্ণার ও চা-কেক আপ্যায়ন। দর্শনার্থীদের ফেরার সময় মসজিদের পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআন সহ বিভিন্ন ধরনের গিফট প্রদান করা হয়।
বিকেলে এলএমসি গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলো সমাপনী আলোচনা অনুষ্ঠান । এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইস্ট লন্ডন মসজিদের ফাইন্যান্স এন্ড এনগেইজমেন্ট ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান বলেন, মসজিদ উপাসনার স্থান, এখানে গোপনীয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়না- এই বার্তাটি নন মুসলিমদের মধ্যে পৌঁছে দিতেই ভিজিট মাই মস্ক এর আয়োজন । তিনি বলেন গুটি কতেক মানুষের জন্য সমগ্র বিশ্বে মুসলিমরা আজ সমালোচিত, তিনি আরো বলেন ইসলামে উগ্রবাদের কোন স্থান নেই । মসজিদকে ঘিরে যাতে কোন ধরনের বিদ্ধেশ হিংসা ও উগ্রবাদ এবং গোপন কোন কর্মকান্ড পরিচালিত না হয় আমাদেরই খেয়াল রাখতে হবে। মিঃ খান বলেন আমাদের বাংলাদেশ সহ বেশ কয়েকটি দেশে এক শ্রেণীর অশিক্ষিত আলেম মনে করেন, মসজিদের ভেতর অন্য ধর্মের লোকেরা প্রবেশ করলে মসজিদ অপবিত্র হয়ে যায়। এটা মোটেই ঠিক নয়, প্রার্থনার জায়গা সকলের জন্য উম্মুক্ত।
ইস্ট লন্ডন মস্ক ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে আসছে । তিনি বলেন, মুসলমানদের সম্পর্কে নন-মুসলিমদের নেতিবাচক ধারণা দূর করতে মুসলমানদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আমাদেরকে গুটিয়ে রাখলে চলবে না । নন মুসলিমদের সঙ্গে মিশতে হবে।
সারাদিন বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ মসজিদ পরিদর্শনে আসেন । ইস্ট লন্ডন মস্ক ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান দুপুরে ভিজিট মাই মস্ক-এর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং মিডিয়ার সাথে কথা বলেন । তিনি ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসুচি বাস্তবায়নে যারা ভুমিকা রেখেছেন সকলকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন (এমসিবি) ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচি উদ্বোধন করে । প্রথম বছরই নন-মুসলিমদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। ওই বছর যুক্তরাজ্যের ২০টি মসজিদ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে । পরের বছর ২০১৬ সালে দ্বিতীয় অপেন ডে’তে অংশগ্রহণ করে ৮০টি মসজিদ। ২০১৭ সালে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেড়-শতাধিক মসজিদ । এরপর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সারাদেশের প্রায় ১৮০টি মসজিদে ব্যাপকভাবে এই কর্মসূচি পালিত হয় । তবে কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে ভার্চূয়ালি আয়োজন করা হলেও ২০২১ সালে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি । কোভিডের পর এই প্র্রথম মানুষের শারিরীক উপস্থিতিতে ভিজিট মাই মস্ক ওপেন ডে উদযাপিত হলো।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply