অস্কারখ্যাত ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের প্রবর্তক ও স্পাইস বিজনেন্স ম্যাগাজিন সম্পাদক ব্রিটেনে বাঙ্গালী কমিউনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব এনাম আলী এমবিই আর নেই, (ইন্না…..লিল্লা…..হি…রাজিউন)। গেল রোববার লন্ডন সময় ভোর ৩টায় সারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সকিনা আলী, এক মেয়ে জাষ্টিন আলী, দুই ছেলে জেফ্রি আলী ও জায়েদ আলীসহ চার ভাই তিন বোন অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে গত দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রিাববার ভোরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ তথা এশিয়ান রন্ধন শিল্পকে ব্রিটিশ মূলধারার অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন এনাম আলী।তিনি নব্বই দশকের শুরুতে গিল্ড অব বাংলাদেশী রেষ্টুরেটরস প্রতিষ্টা ও এর মাধ্যমে হাউজ অব কমন্সে “ডাইন বাংলাদেশ” ক্যামপেইন পরিচালনা করে বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট ব্যবসাকে স্বনামে পরিচিতি করার কাজে হাত দেন। তিনি প্রথমত শেফ অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হয়ে লাইম লাইটে আসেন এবং সেই সময়ে লীরাজ এভিয়ন নামে উড়ন্ত রেষ্টুরেন্টের জন্ম দিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
এনাম আলী ১৯৯৮ সালে রেষ্টুরেন্ট ম্যাগজিন স্পাইস বিজনেস প্রকাশের মাধ্যমে ব্রিটিশ অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি বাঙালির কারী ইন্ডাষ্ট্রিকে ব্রিটিশ মূলধারায় নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম শুরু করেন। সারের বিখ্যাত লী রাজ রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী স্বপ্নবাজ মি: আলী স্পাইস বিজনেস প্রকাশনা শুরু করেই ক্ষান্ত হননি, কারী ইন্ডাষ্ট্রিকে ব্রিটেনসহ বিশ্ব নাগরিকদের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চালু করেন ‘ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড’। বিগত ১৬ বছর ধরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই এওয়ার্ড অনুষ্ঠানগুলোতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সহ মেইন ষ্টীম রাজনীতিবিদসহ হাই প্রোফাইল সেলিব্রেটিরা অংশ নিয়ে আসছেন।কারী ইন্ডাষ্ট্রির সাথে জড়িতদের মূলধারায় স্বীকৃতি সর্ব প্রথম ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ডের মাধ্যমেই শুরু হয়।
কারী শিল্পে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৯ সালে এই কারি কিংবদন্তী ভূষিত হন এমবিই খেতাবে। ২০১১ সালে তাকে ‘ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব লন্ডন’ সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়। তিনি সব সময় বাংলাদেশী কমিউনিটির স্বার্থ সংরক্ষনে তৎপর ছিলেন। ২০১৭ সালে অক্টোবরে তিনি বিবিসিসিআই’র প্রেসিডন্ট নির্বাচিত হলে সিলেট চেম্বারের সাথে যৌথ ভাবে সিলেটে এনআরবি কনভেনশন এনআরবিদের নিয়ে বিশ্ব সম্মিলনীর আয়োজনটি ছিল ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যেখান থেকে এনআরবি ডে’র ঐতিহাসিক ঘোষনা উচ্চারিত হয় আজকের পররাস্ট্র মন্ত্রী ডঃ একে আব্দুল মোমেন সাহবের মুখ দিয়ে ।
জনাব এনাম আলী গ্রেটার লন্ডনের সারে এলাকায় বসবাস করতেন । তাঁর দেশের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলা বাজার এলাকায়। সিলেট শহরের দাড়িয়া পাড়া এলাকায় তাদের বাসা বাড়ী।
মরহুম এনাম আলী এমবিই’র প্রথম নামাজে জানাজা আজ ১৯ জুলাই মঙ্গলবার বাদ-জোহর ইস্ট লন্ডন মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা-পিছিয়ে নেয়া হয়েছে আগামী ২২ জুলাই শুক্রবার বাদজুমা অনুষ্ঠিত হবে । একই দিন সারের এপসম সেমিট্রি প্রাঙ্গনে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে । জানাজা শেষে এপসম সেমিট্রিতে তাকে সমাহিত করা হবে।
বৃটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস’র প্রবর্তক এনাম আলী ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে এবং বরিস জনসনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বৃটেনের মূলধারায় একজন প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বিভিন্ন সময় বিবিসি, চানেল ফোর, সিএনএন, আল-জাজিরা সহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার অভিমত কারি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে খুবই অর্থবহ এবং সময়ের দাবি পূরণে সহায়ক হয়েছে।এনাম আলী এমবিই বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সরকারের হসপিটালিটি এডভাইজারি কমিটির সদস্য হিসেবে ৫ বছর সার্ভিস প্রদান করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সময়কাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এ সময় কারি ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন নীতিমালা ফেয়ার থাকার ব্যাপারে তিনি সর্বাত্বক ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রস্তাব নিয়ে হাউজ অব কমন্সে জমজমাট বিতর্ক হয়েছে। সাম্প্রতিক বিন্দালূ ভিসা চালুর প্রক্রিয়ায়ও তার সরব ভূমিকা অব্যাহত ছিলো।
বিভিন্ন মহলের শোকঃ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি‘র শোক
বৃটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড এর প্রবর্তক, স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এনাম আলী এমবিই এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি। এক শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনাম আলী এমবিই বৃটেনে কারি শিল্পের অগ্রযাত্রায়, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের জন্য অনুকরণীয় ভূমিকা রেখে গেছেন। তাঁর উদ্যোগেই ২০০৫ সালে বৃটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয় যেটা সারাবিশ্বের কারি শিল্পের অস্কার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনাম আলী বৃটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি তাঁর শ্রম ও মেধা দিয়ে কারি শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এছাড়া বৃটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মরহুম এনাম আলীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়া এনাম আলী এমবিই‘র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, বিবিসিএ, রিপোর্টার্স ইউনিটি ইউকে, বাংলাদেশ সেন্টার সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণ।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply