কোটা বিরুধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে লন্ডনে জামাত-বিএনপি ও আওয়ামীলীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে লন্ডনে প্রবাসী বাঙ্গালীদের মাঝে আতংক বিরাজ করলেও শেষ পর্জন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে উভয়েই সমাবেশ করেছে। কখন কে কার উপর হামলা করে এনিয়ে উদবেগ উৎকণ্টা ছিল সকলের।
২৯জুলাই ২০২৪ খৃষ্টাব্দ সোমবার লন্ডন সময় দুপুর এক ঘটিকায় বাংলাদেশে–সাধাররণ শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বাংলাদেশে জামাত-বিএনপি ও দুষ্কিতিকারীরা যে ধ্বংশ যঙ্গ চালিয়েছে এবং প্রাণ হানির ঘটনাও ঘঠেছে । স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশে বিদেশে গুজব ও মিথ্যাচার এবং লন্ডনের ছাত্রলীগের সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলগ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অব কমন্সের সামনে আয়োজন করে শান্তি সমাবেশের। এছাড়া ছাত্রলীগ যুবলীগ ও মহিলাআওয়ামীলগের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ ব্যনার নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়।
আওয়ামীলগের সমাবেশে বক্তরা বলেন সাধারন শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে জামাত বিএনপি দেশব্যাপী এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গণভবন দখলে নেয়া, দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তা হতে দেয়নি। যারা দেশব্যাপী তান্ডব চালিয়েছে এরা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা। তারা চাইছে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিনত করতে। এই জঙ্গিরা নরসিন্দিতে জেল ভেঙ্গে জঙ্গি ও জঘন্য অপরাধিদের পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের আক্রমন ছিল পরিকল্পিত। দেশের মেট্র্রোরেল, টেলিভিশন ভবন, ফ্লাইওভার সহ দেশের স্থাপনাগুলো ধ্বংশ করেছে। মিছিলের ভিতর থেকে গুলি করে সাধারন ছাত্রদের হত্যা করে সরকারের উপর দোষ চাপাতে চেয়েছে।
পুলিশ এবং সাধারন মানুষকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। এর সাথে সাধারন ছাত্রদের কোন সম্পৃক্ততা নেই যারা করেছে এরা জঙ্গি। যেভাবে তারা রাষ্টীয় সম্পদ ধ্বংশ করেছে ঠিক সেই ভাবে তারা ২০১৩ এবং ২০১৮ সালেও করেছিল। সব কিছুইরই ইন্দন দাতা তারেক রহমান ও স্বাধীনতা বিরোধীরা। এখানেই শেষ নয় এরা বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধের অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের অপপ্রচারে কেউ বিভ্রান্ত হবেননা। আমরা দেশের বাস্তব অবসস্থা তুলে ধরতে এখানে এসেছি। কোটার ব্যাপারে সরকার এবং ছাত্রদের অবস্থান এক এবং অভিন্ন , কিন্তু দেশবিরোধী ও জঙ্গিগোষ্টী ছাত্রদের ভেতরে প্রবেশ করে দেশব্যাপী যে ধ্বংশযঙ্গ চালিয়েছে আমরা এর বিচার চাই।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, সেক্রেটারী সৈয়দ ফরুক, সহসভাপতি হরমুজ আলী, সৈয়দ মোজম্মিল আলী,জালাল উদ্দিন, মারুফ চৌধুরী, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, নইমুদ্দিন রিয়াজ, রবিন পাল, কাওয়ার আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়াও মহিলা আওয়ামীলগের সিনিয়র সহসভাপতি আনজুমান আরা অঞ্জু , মেহের নিগার চৌধুরী, খালেদা চৌধুরী, যুবলীগের সেলিম আহমদ খান, জামাল খান ছাত্রলীগের সজিব ভূইয়া, যুবলীগ সভাপতি ফখরুল ইসলাম মধু, ছাত্রলগের সভাপতি তামিম আহমদ, শাহিনা আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জামাত-বিএনপিঃ আওয়ামীলগের শান্তি সমাবেশের খবরে জামাত-বিএনপি ‘জাষ্টিজ ফর ভিকটিম‘‘ ইউকের ব্যানারে মাত্র ৫০০ গজ দূরত্বে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০নং ডাউনিং ষ্ট্রীটের সামনে ঠিক একই সময়ে স্বাধীনতা সার্বেবৌমত্ব রক্ষা, বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল বন্দির মুক্তি, ভারতের সাথে হাসিনা সরকারের করা সকল চুক্তি বাতিল এবং সাস্প্রতিক ঘটনায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দেয়।
জামাত বিএনপি দুপুর ১২টায় পূর্বলন্ডনের আলতাব আলী পার্কে তাদের সৃষ্ট ভিন্ন ভিন্ন ব্যানার নিয়ে সমবেত হয়। এর পর চলে যায় ১০ নং ডাউনিং ষ্ট্রীটে। সেখানে তারা সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা বলেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহায়তার অবৈধ ভাবে শেখ হাসিনা দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। বিনিময়ে বালাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব তুলে দিয়েছে ভারতের হাতে।
অগণতান্ত্রিক হাসিনা ভারতের সাথে একের পর এক অবৈধ চুক্তি করে ভারতকে সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে প্রতিদিনই সীমান্তে ভারতীরা নীরিহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে, হাসিনা সরকার এর কোন প্রতিবাদও করছেনা। আমরা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এখানে সমবেত হয়েছি। হাসিনাকে বলছি বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যে সব ছাত্র ও সাধারন মানুষকে হত্যা করেছে হাসিনার পোষা পুলিশ র্যাব ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এর বিচার করতে হবে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যাদের হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে। আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি খুনের সঠিক বিচার করতে হবে।
সেই সাথে এই সরকারে আমলে যাদের পুলিশ র্যাব সহ অন্যান্য বিভাগে চাকুরী দিয়েছে প্রত্যেকের চাকুরী বাতিল করতে হয়ে। হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা বিদেশে যে অর্থ পাচার করেছে, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই সাথে নিরপেক্ষ সরকারে হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মধ্যবর্তি নির্বাচন দিতে হবে। যদিও এই সমাবেশের মূল ভমিকা পালন করেছে জামাতে ইসলামী , তবে তারা দলীয় ব্যানার ব্যবহার নাকরে তাদের সৃষ্ট লন্ডন ভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়। সংগঠন গুলোর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, সেইভ বাংলাদেশ, সেইভ ফর হিউম্যানেটি, ভয়েস ফর জাষ্ট্রিজ, গ্লোবাল ভয়েস ফর জাষ্ট্রিজ, ফাইট ফর রাইট, জাষ্ট্রিজ ফর ভিকটিম ইত্যাদি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামাত নেতা ড. হাসনাত এম হোসেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম.এ. মালেক, সেক্রেটারী কয়সর এম আহমদ, যুগ্মসম্পাদক খসরুজ্মামান খসরু, পারভেজ মল্লিক, কামাল উদ্দিন, মুজিবুর রহমান মুজিব.অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির উদ্দিন শাহিন, সেক্রেটারী আবুল হোসেন, যুবদলের সভাপতি রহিম উদ্দিন, সেক্রেটারী আফজাল হোসেন, ডালিয়া বিনেতে লাকুরিয়া, মৌলানা শামীম, জামাত নেতা ব্যারিস্টার আবুবকর মোল্লা, জামাত নেতা বোরহান উদ্দিন, জামাত নেতা নাজির রাজ্জাক, ব্যারিস্টার নৌশিন মোস্তারী মিয়া, সলিসিটর একরাম, জামাত নেতা অলিউল্লাহ নোমান, সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন, ব্যারিস্টার হাবিবুর রহমান, সোমেনা বেগম প্রমুখ। সমাবেশে আগদের অধিকাংশই জামাত-শিবিরের কর্মি সমর্থক এর বেশীর ভাগই দেশ থেকে সদ্যআগত অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থি। সমাবেশে জামাত বিএনপির সদস্যরা বিভিন্ন ধনের ব্যানার ফেষ্টুর ব্যবহার করে ও অশ্লিল শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি আওয়ামীলগের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে সমাবেশকারীদের বক্তব্য শুনেন একজন হলেন ,পাকিস্তানী বংশদ্বোত আফজাল খান যিনি গেলে ২২জুলাই বিএনপির সমাবেশেও উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্য এমপিরা হলেন পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পীকার কারলাইল নকস এমপি, পাইল্ট হ্যামিলটন এমপি, স্টেইট মিনিষ্টার জিম ম্যাক মোহন এমপি, এমা লয়েল বাক এমপি, রিচার্ড বার্গোয়েন এমপি, লিএন্ডারসন এমপি। এসময় আওয়ামীলগের পক্ষ থেকে এমপিদের হাতে একটি স্মারক লিপি দেয়া হয়।
অন্যদিকে আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংতা নিয়ে বাংলাদেশী বংশদ্ভোত লেবার দলীয় ব্রিটিশি এমপি ড. রুপা হক হাউজ অব কমন্সের গ্রেন্ড কমিউনিটি রুমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply