1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি জাতীয় গৌরবের প্রতীক - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি জাতীয় গৌরবের প্রতীক

Reporter Name
  • রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

আমাদের পরিচয় আমাদের সংস্কৃতি’ –এই স্লোগানটি ততক্ষণে আলো ঝলমলে হয়ে ওঠেছে। মঞ্চের লাল, নীল, হলুদ প্রভৃতি রঙের বাতি সুবিধাবঞ্চিত নৃজনগোষ্ঠীর সৃজনশীল মানুষদের মুখশ্রীকে উজ্জ্বল করার নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছে। যেন সুবিধাবঞ্চিত চা বাগান আর পাহাড়ি মানুষদের আত্মসত্ত্বাটুকু নিয়ে ঝলছে ওঠার মহেন্দ্রক্ষণ

দরিদ্রতার চৌকাঠকে পেছনে ফেলে মাথা উঁচু করে বুক টান করে দাঁড়াবার প্রত্যয় কিংবা তাদের অধ্যবসায়লব্ধ নৃত্যের শৈল্পিক মুদ্রা অথবা ছন্দনির্ভর হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাবার গতিপ্রকৃতি; সব যেন একই মঞ্চে অমর হয়ে উঠতে চায়। নৃত্যের তালে তালে বেজেছে আত্মবিজয়ের অবিনাশী সুর।

কাউকে পেছনে ফেলে নয়শীর্ষক প্রান্তিক বিছিন্ন জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সুরক্ষা বিষয়ে ২২২৩ নভেম্বর দুদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে বিভিন্ন নৃজনগোষ্ঠীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক আয়োজন। বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) এর প্রথম আয়োজন এটি অনুষ্ঠিত হয় শ্রীমঙ্গলের মহসীন অডিটরিয়ামে।

সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক। আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা সংস্কৃতির ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন দিনাজপুর সরকারি

সাংস্কৃতিক পরিবেশনার উদ্বোধন করেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান . হোসেন জিল্লুর রহমান।

পরিমল সিং বাড়াইকের সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। প্রথমেই পরিবেশিত হয় পালকিছড়া চা বাগানের নৃজনগোষ্ঠীর (মুন্ডা, সাওতাল, খাটোয়াল, ওরাং প্রভৃতি) নৃত্য।জাগো বাংলাদেশদেশাত্ববোধক গানটির সাথে সমবেত নৃত্য পরিবেশিত হয়।

দ্বিতীয়পর্বে কালেঙ্গাপুঞ্জির খাসিয়া জনগোষ্ঠী পরিবেশন করে সাদ মাস্তি নাচ। মিউজিকের তালে তালে নৃত্যে অংশ নেয় নীরব তার দল।

তৃতীয়পর্বে পরিবেশিত হয় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে মোট তিনটি নৃত্য। রাখাল রাসলীলা, কলস নৃত্য এবং মৃদঙ্গ নৃত্য। রাখাল রাসলীলার মুগ্ধতা ছড়ালো দারুণভাবে। তাদের সমবেত এই নাচ অপূর্ব নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে। এক পরিবেশনায় প্রত্যেকের দর্শকের দৃষ্টি কাড়লো কলস নৃত্যটি। মৃদঙ্গ নৃত্যের কথা তো না বললেই নয়। সমবেত পরিবেশনাটি যেন নৃত্যের উচ্চ শাখায় অধিষ্ঠিত।

মণিপুরী ভাষা সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রাচীন সমৃদ্ধ। সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো নৃত্যকলা। মণিপুরী নৃত্যকে প্রধান দুটি ধারায় ভাগ করা যায়। এর একচি লোকনৃত্য, অন্যটি শাস্ত্রীয়নৃত্য

মণিপুরী রাখাল রাসনৃত্য পরিবেশন। ছবি: বাংলানিউজলাইহারাউবা, খাম্বাথোইবী, থাবল চোংবী, মাইবী জাগোই, লৈইমা জাগোই ইত্যাদি পড়ে লোকনৃত্যের আওতায়। আর রাসনৃত্য, গোষ্ঠলীলা উদূখল, মৃদঙ্গ নৃত্য পড়ে শাস্ত্রীয়নৃত্যের আওতায়। নৃত্যগুলো সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠান কার্তিকীয় রাস উৎসব, রথযাত্রা, পৌষ সংক্রান্তি, দোলযাত্রা এবং চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।

চতুর্থ পরিবেশনা ছিল তেলেগু সম্প্রদায়ের লাঠি নৃত্য। এই নৃত্যটি তেলেগু জনগোষ্ঠীদের স্বতন্ত্র একটি নাচ মূলত হলি উৎসব কেন্দ্রিক যুবকদের এই নাচটি। অনান্য চা জনগোষ্ঠীর যুবকরাও করে থাকেন। তবে তেলেগুরা বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই লাঠির বাজনা বাজিয়ে গানের তালে তালে নাচেন।

অন্যরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচেন। এই নাচটি যেকোন শুভ অনুষ্ঠান আনন্দ অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। শুভ অনুষ্ঠানের প্রতীক হিসেবে নাচটিতে পোশাক হিসেবে তেলেগু যুবকরা কাপড় ধুতি গামছা গেঞ্জি পরিধান করে ছিলেন। এই তেলেগু জনগোষ্ঠীরা এসেছেন শসসেরনগর চা বাগান থেকে।

পঞ্চম পরিবেশনায় ছিল তেলেগু সম্প্রদায়ের ডাল নৃত্য। এটি তেলেগু জনগোষ্ঠীদের নিজস্বভাষায় কীর্তন কেন্দ্রিক নাচ গান। মাঝখানে মঙ্গলদ্বীপ রেখে কীর্তনের গানে গানে খোল করতালের তালে তালে দাঁড়িয়ে, ঘুরে ঘুরে নাচ গান করা হয়।

সাঁওতালদেরদং নৃত্যএবংলাগড়ে নৃত্যছিল ষষ্ঠ পরিবেশনার অংশ। সাঁওতালদেরবাহা উৎসব’ (অর্থাৎ সাঁওতালি ভাষায় বর্ষবরণকেবাহাবলা হয়)সহ বিবাহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এই নৃত্যটি পরিবেশন করা হয়। ফুলছড়ি চা বাগান থেকে এসেছিল সাওতাল জনগোষ্ঠীরা।

সপ্তম এবং শেষ পরিবেশনা ছিল সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য। সমবেত নৃত্যটি পরিবেশন করেন শ্রীমঙ্গলের নোওয়াগাঁও এলাকার শব্দকর সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা। নৃত্যটি সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অধিবাসের দিনে পরিবেশন করা হয়।

এটি সবার কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় আজকাল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই নৃত্য পরিবেশিত হয়ে থাকে। এই নৃত্যে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক গান গাওয়া হয়। নৃত্যটিতে পুরুষ নারা শাড়ি ধুতি পরিধান করে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সোসাইটি ফর এনভারনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন।

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD