1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
সংসারের ঘানি টানতে দুই যুগ ধরে  গরুর বদলে  নিজেদের কাঁধে তুলে তেল ভাঙছে আজাদ-আসমা দম্পতি - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

সংসারের ঘানি টানতে দুই যুগ ধরে  গরুর বদলে  নিজেদের কাঁধে তুলে তেল ভাঙছে আজাদ-আসমা দম্পতি

হারুন অর রশিদ খান হাসান, সিরাজগঞ্জ
  • বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩
  • ১৮৯ বার পড়া হয়েছে
সংসারের ঘানি টানতে দুই যুগ ধরে  গরুর বদলে  নিজেদের কাঁধে তুলে তেল ভাঙছে আজাদ-আসমা দম্পতি
গরু কেনার অর্থ নেই। তাই  দুই যুগ ধরে খাঁটি সরিষার তেল তৈরি কাঠের তৈরি ঘানি নিজেরাই টানছে সিরাজগঞ্জ জেলা রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের শ্রীদাসগাঁতী গ্রামের আজাদ-আসমা দম্পতি।
আবুল কালাম আজাদের বাড়ীতে দেখা যায় গরুর বদলে শরীর দিয়ে তেল ভাঙ্গানো জন্য কাঠের ঘানি টানছে এই দম্পতি। আবুল কালাম আজাদ (৫৫) ও আসমা খাতুন (৪৫) নামে এই দম্পতি দুই যুগের বেশি সময় ধরে তারা পরিবার এবং নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে এভাবে ঘানি টেনে যাচ্ছে।
কাকডাকা ভোর থেকে কাঠের ঘানির উপর কয়েকটি ভারী পাথর চাপিয়ে ঘুরতে থাকেন আবুল কালাম আজাদ ও আসমা খাতুন দম্পতি। এভাবে তারা সরিষা থেকে ঘানির মাধ্যমে ফোটায় ফোটায় তেল বের করেন। শরীর না পারলেও কেবল পেটের তাগিদে সকাল থেকে কত পাক যে তাদের ঘানি ঘুরাতে হয় তার হিসেব জানা নেই। তারা জানে কেবল ঘানির চাকা ঘুরলেই দিন শেষে পরিবারের সবার মুখে একমুঠো খাবার জুটবে।
এভাবেই তারা প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে গরুর বদলে নিজেরাই ঘানি ঘুরান। যে বয়সে তাদের বিশ্রাম নেয়ার কথা, সেই বয়সেই গরুর বদলে টানছেন ঘানি। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে তারা এ কাজ করছেন। ঘানি টানার অমানুষিক পরিশ্রম করে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে এই দম্পতি। দিনের পর দিন এভাবে ভারী ঘানির চাকা ঘুরালেও তাদের ভাগ্যর চাকা ঘোরেনি আজও। দীর্ঘদিন ধরে তারা অমানুষিক পরিশ্রম করে গেলেও তাদের উপর নজর পড়েনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ বিত্তবানদের। তাদের কপালে জোটেনি সরকারি কোন সাহায্য সহযোহীতা।
ভাঙ্গা ঘরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। দুই সন্তান বড় হয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। বাবা মায়ের ঘানি ভাঙ্গানো আয়ে তারা বড় হলেও এখন তারা তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এই দম্পতি ঘানির বোঝা টেনে চলেছে নীরবে। কবে তারা এই বোঝা থেকে মুক্ত হবে তা জানা নেই তাদের। একটি ঝুপড়ি ঘরে ঘানির চাকায় কয়েকটি পাথর বসিয়ে ঘুরাচ্ছে আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন।
আবুল কালাম আজাদ জানান, দুই যুগের বেশি সময় ধরে এভাবে ঘানি টানছে। অপুষ্টি আর শারিরিক অসুস্থতার কারণে এখন ঠিক মতো ঘানি টানতে পারেন না। তবুও এই ঘানি টেনেই তিনি ৬ সন্তানকে মানুষ করেছে। প্রতিদিন ফজর আযান থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত তারা দুই দফায় ৮ কেজি সরিষা ঘানিতে ভাঙ্গান। এ থেকে আড়াই কেজি তেল বের হয়। সেই তেল ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। আর ৫০ টাকা কেজি দরে খৈল বিক্রি করেন। এ থেকে প্রতিদিন তাদের ২শ’৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে এখন ৩ ছেলে এবং স্বামী স্ত্রী খাবার জোটে। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোরার বাজারে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন পার করছে তারা।
আবুল কালামের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকে ঘানি টেনে যাচ্ছি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো ভারী ঘানি টানতে পারি না। মাথা ঘোরে। পা চলে না। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তবুও পেটের তাগাদায় ঘানি টানি। তিনি আরো বলেন, একটি গরু পেলে তাদের খুব উপকার হতো। ঘানি টানা হাত থেকে রক্ষা পেত।
তেলি পরিবারটি সমাজের বিত্তশালী মানুষের কাছে সহযোগীতার আশা করেছেন। যদি তাঁকে কেউ একটা ঘানি টানার গরু কিনে দিত তাহলে তার আয় রোজগার একটি বাড়ত। পরিশ্রম কমে আসতো। তখন উৎপদিত ঘানির তেল বিক্রিতে সময় দিতে পারত। এখন তেল উৎপাদন করতে হয় আবার নিজেকে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে হয়।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা তৃপ্তি কণা মন্ডল জানান, এভাবে শরীর দিয়ে দম্পতির ঘানি টানার বিষয়টি আমার জানা নেই। তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহযোগীতা করা হবে বলে তিনি জানান।
#

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD