কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় সরকারি ডিগ্রী কলেজ চত্বরে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার সকাল দশটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টায় কলেজ চত্বরের শহীদ মিনারে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের অনুসারীদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম রেনু ও তার লোকজন। সকাল দশটার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন তার অনুসারীদের নিয়ে এমপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে অস্ত্রশস্ত্রসহ ওই শহীদ মিনারের দিকে যান। এ সময় রেনুর পক্ষের কয়েকজন নেতা-কর্মী তাদের বাধা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ইটের আঘাতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সংঘর্ষের মধ্যেই সোহরাব উদ্দিন উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিনসহ অন্য নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে পাকুন্দিয়ার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মঠখোলা সড়কের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থানে ছিল সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন ও তার লোকজন। উপজেলা বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে তারা এমপি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগান দিচ্ছিল।
এ পরিস্থিতিতে সদর বাজারজুড়ে আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখেন। সকাল পৌনে ১০টা থেকে পুরো পাকুন্দিয়া উপজেলা শহর সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাবের কর্মী-সমর্থকদের দখলে চলে যায়। এরপর তারা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছালেই সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম রেনু নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সাবেক এমপি সোহরাবের নেতৃত্বে তার লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শহিদ মিনারে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের অশালীন স্লোগানের কারনে সাধারণ মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেতে পারেনি। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে তারা হামলা চালায়।’
অভিযোগ অস্বীকার করে সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে শান্তভাবে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলাম। প্রথমে আমাদের পুলিশ বাধা দেয়। ওই বাধা উপেক্ষা করে আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে ওঠামাত্র এমপি নূর মোহাম্মদের নির্দেশে তার কিছু অনুসারী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আমরা এ হামলা প্রতিহত করেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে এসেছি। আমাদের ওপর যতই বাধা আসুক, সেসব উপেক্ষা করে পাকুন্দিয়ার আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করব।’
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো: সারোয়ার জাহান সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। উপজেলা সদরের বাজার ও শহীদ মিনার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিনের দলবিরোধী কর্মকাণ্ড ও তার উশৃংখল আচরণের প্রতিবাদে আহ্বায়ক কমিটি থেকে ১০ জন নেতা একযোগে পদত্যাগ করেছেন।
তারা সবাই ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
পদত্যাগকারীরা হলেন – পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক মো: রফিকুল ইসলাম রেনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ, পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র মো: নজরুল ইসলাম আকন্দ, পাটুয়াভাঙ্গা ইউপির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: সাহাব উদ্দিন, চন্ডিপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো: শামছু উদ্দিন, নারান্দী ইউপির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো: শফিকুল ইসলাম, মো: শাহাব উদ্দিন, নারান্দী ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো: মুছলেহ উদ্দিন ও মো: শাহাব উদ্দীন।
পদত্যাগপত্রে তারা পাকুন্দিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো: সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন। সোমবার দুপুরে তারা সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply