জিতলো বাংলাদেশ, জেতালেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭৫ রানের পর বল হাতে মাত্র ৩৫ রানে ৪ উইকেট; তার এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভর করে বিষণ্ণতা দূর হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি যদিও জেতা যায়নি, তবে হাসিমুখেই শেষটা স্মরণীয় করে রাখলো টাইগাররা। সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটিকে ৫০ রানে রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের এ ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৪৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ফলে ২৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামেন ইংলিশরা। তাদের শিবিরে প্রথম আঘাতটা আনেন সাকিব আল হাসান, আগ্রাসী মেজাজে খেলতে থাকা ফিলিপ সল্টকে ফেরান তিনি। ২৫ বলে ৩৫ রান করেন সল্ট। আউট হবার আগে জেসন রয়কে সাথে নিয়ে রান তাড়ায় বেশ সাচ্ছন্দ্যেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। কোনো উইকেট না হারিয়েই স্কোরবোর্ডে যোগ করেছিলেন ৫৪ রান।
নবম ওভারের শেষ বলে ফিলিপ সল্টকে ফেরানোর পর পরের ওভারের প্রথম বলেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়কেও ফেরান তিনি। সাকিবের জোড়া শিকারের সিরিজের আরেক সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড মালানকে ফেরান এবাদত হোসেন। ইংলিশদের সংগ্রহ তখন ১০.১ ওভারে ৫৫ রানে ৩ উইকেট।
চাপ কমাতে স্যাম কারানকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দেয় ইংলিশ ম্যানেজমেন্ট, কাজেও দেয় সেই পরিকল্পনা। জেমস ভিন্সকে সাথে নিয়ে ৪৯ রানের এক জুটি গড়ে তুলেন কারান। অবশেষে কারানকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন মেহেদী মিরাজ, আউট হবার আগে ৪৯ বলে ২৩ রান আসে তার ব্যাটে। তবে এবার অধিনায়ক জশ বাটলারকে সাথে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ভিন্স।
তবে তাদের সেই আশায় পানি ঢেলে দেন সাকিব আল হাসান, ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা ভিন্সকে সাজঘর দেখিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব। পরের ওভারেই মইন আলির স্ট্যাম্প ভেঙে দেন এবাদত; মাত্র ৩ রানের ভেতর জোড়া উইকেট হারিয়ে ইংলিশদের চোখে তখন শর্ষে ফুল। এমতাবস্থায় থ্রি লায়ন্সরা তখন ভরসা খুঁজছিল জশ বাটলারে।
তবে জশ বাটলারকে জোশ পেতে দেননি তাইজুল, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার আগেই ইংলিশ অধিনায়ককে ফেরান তিনি। ২৪ বলে ২৬ রান করে বাটলার যখন আউট হন, দলীয় রান তখন ৩৪.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৮। পরের উইকেটটাও দখলে নেন তাইজুল, আদিল রাশিদকে ফেরান এই স্পিনার। জয়ের জন্য ইংলিশদের প্রয়োজন তখন ৬৮ বলে ৭৩ রান, হাতে মাত্র ২ উইকেট।
দ্বিতীয় পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে বল করতে এসেই ইংলিশদের নবম উইকেট তুলে নেন সাকিব, রেহান আহমেদকে মেহেদী মিরাজের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। সেই সাথে সাকিব উঠে যান ইতিহাসের পাতায়, বিশ্বের ১৪তম বোলার, ৬ষ্ঠ স্পিনার আর প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে উইকেট শিকারের কীর্তি গরেন তিনি। যা ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম, মাত্র ২২৭ ইনিংসে।
শেষ উইকেটটা তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান, ৩৪ রান করা ক্রিস ওকসকে ফিরিয়েছেন তিনি। সেই সাথে নিশ্চিত করেন দলের জয়। তাছাড়া চারটি উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান, দুটো করে উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন।
এর আগে ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রান করে শেষ হয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন সাকিব আল হাসান। পাঁচ নাম্বারে নেমেও ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। অর্ধশতক ছুঁয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তও। তবে যথারীতি ব্যর্থ তামিম, লিটন, মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন।
এদিন উদ্বোধনী জুটি টেকে মাত্র ৫ বল, ফের শূন্য রানে আউট হন লিটন দাস। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজটা একেবারেই ভুলে যেতে চাইবেন লিটন। ভরসার ন্যূনতম প্রতিদানও দিতে পারেননি তিনি। এক ম্যাচেও যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে। প্রথম ম্যাচে ১৫ বলে ৭ রানের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে আউট হলেন কোনো রান করেই। অর্থাৎ ৩ ম্যাচে লিটনের রান মাত্র ৭, গড় ২.৩৩। দুই ম্যাচেই স্যাম কারানের শিকার তিনি।
অধিনায়ক তামিমও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি, ১১ রান করে স্যাম কারানের দ্বিতীয় শিকার তিনি। ৩ ওভারে মাত্র ১৭ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম।
এক ম্যাচ পর এদিন আবারো অর্ধশতকের দেখা পান শান্ত। নিজের ক্যার সিরিজে যা তার দ্বিতীয় অর্ধশতক। তবে ইনিংসটা বড় হয়নি, ফিফটি ছোঁয়ার পরপরই মুশফিকুর রহিমের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন তিনি। ৭১ বলে ৫৩ রান আসে তার ব্যাটে।
ফিফটি তুলে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিমও, সাত ইনিংস পর অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন তিনি। তবে তার ইনিংসটাও আশানুরূপ হয়নি, ৯৩ বলে ৭০ রান করে আদিল রাশিদের শিকার হন তিনি। তবে শান্তর সাথে তার গড়ে তোলা ১৩০ বলে ৯৮ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পায় বাংলাদেশ।
যেখানে দাঁড়িয়ে দলকে বলার মতো একটা সংগ্রহ এনে দেন সাকিব আল হাসান। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৫২তম ওয়ানডে অর্ধশতক। আগের ম্যাচেও ফিফটি পেয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত জেসন রয়ের দারুণ ক্যাচে থামে তার ইনিংস, আউট হওয়ার আগে করেন ৭১ বলে ৭ চারে জার্সি নাম্বার সমান ৭৫ রান।
তবে এদিন তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। মুশফিক তো ফেরেনই, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেনও তাকে অপরপ্রান্ত থেকে ভরসা দিতে পারেননি। পারেননি মেহেদী মিরাজও। অর্থাৎ মাঝপথ থেকে ভাঙা নৌকাকে একাই টেনেছেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ ৮, আফিফ ১৫ ও মিরাজ আউট হন ৫ রান করে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply