নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে নৃশংসভাবে হত্যা ঘটনায় নিহতের ছেলেসহ ৭ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির হিমু (৩২), নিরব (২৬), নুর ইসলাম (৩২), কালাম (৩০), সুমন (৩৩), হামিদ (২৮) ও ইসমাইল (৩০)।
জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামে মা নূরজাহান বেগমকে (৫৭) সম্পত্তির লোভে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করে নিজ সন্তান হুমায়ন কবিরসহ আসামিরা। পরে চরজব্বার ইউনিয়নে জাহাজমারা গ্রামের প্রভিটা ফিড নামে একটি কারখানার পাশের ধানক্ষেতের মাটির নিচে লাশের টুকরোগুলো পুঁতে রাখে। পরে এলাকাবাসী লাশের টুকরোর একটি অংশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ও দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি হুমায়ুন কবির একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহীম এই হত্যাকাণ্ডের সাথে হুমায়ুনের সম্পৃক্ততা পেএয় উল্টো বাদী হুমায়ুন কবিরসহ সাতজনকে আসামি করে চরজব্বার থানায় একটি হত্যা মামলা করে পুলিশ।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সাথে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসাথে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পায় পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, রায় ঘোষণার সময় আদালতে সাত আসামি উপস্থিত ছিলেন। এই মামলায় ২৭ জনের স্বাক্ষী গ্রহণ করা হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। একইসাথে আটক নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও নিহতের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, নিহত ওই নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মা ভিকটিমকে জিম্মা রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চার লাখ টাকা সুদের ওপর ঋণ নেন। ঋণ থাকা অবস্থায় দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
হুমায়ুন তার মাকে এ বিষয়ে অবহিত করে। হুমায়ুন তার মাকে জানান, মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধ করার জন্য। এতে তার মায়ের জোর অসম্মতি ছিল।
অপরদিকে ভিকটিম তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য তিনি ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করতেন। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন ভিকটিমের ওপর বেজায় ক্ষুদ্ধ ছিলেন। এ ছাড়াও ভিকটিমের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। তাই তারাও হুমায়ুনকে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে।
হুমায়ুন জবানবন্দীতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়। তারপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেয়া হবে।
এ প্রতিশ্রুতিতে সবাই গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে হমায়ুন, কালাম, সুমন ও অন্য আসামিদের সহযোগিতায় ওই রাতের কোনো একসময়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে ভিকটিমকে হত্যা করে বটি, চাপাতি, কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে শরীরের পাঁচ টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তারা।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply