1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
লন্ডনে সাংবাদিক অজয় পালের প্রতি ব্রিটেনের বাঙালী কমিউনিটির শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

লন্ডনে সাংবাদিক অজয় পালের প্রতি ব্রিটেনের বাঙালী কমিউনিটির শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন থেকে
  • মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৯১ বার পড়া হয়েছে
লন্ডনে সাংবাদিক অজয় পালের প্রতি ব্রিটেনের বাঙালী কমিউনিটির শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন

সোমবার, ১৬ই জানুয়ারী একাত্তরের কলমযোদ্ধা, বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় পালের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিলেত প্রবাসী বাঙালিরা। ঐদিন বিকেল ১.৩০ থেকে ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সদ্য প্রয়াত এই সাংবাদিকের মরদেহ রাখা হবে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে। সিনিয়র এই সাংবাদিকের প্রতি প্রবাসীদের শেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য মরহুমের বন্ধু ও সাংবাদিক সহকর্মীদের উদ্যোগে গঠিত নাগরিক কমিটির তত্বাবধানে এই আয়োজন করা হয়। সহকর্মী ও স্বজনদের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত হওয়ার পর প্রয়াত অজয় পালের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শেষকৃত্যের জন্য। উল্লেখ্য,  ৭ জানুয়ারী, শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন একাত্তরের কলমযোদ্ধা  সিনিয়র সাংবাদিক, ছড়াকার, গীতিকার শ্রী অজয় পাল।। এর আগে ৪ঠা জানুয়ারী বুধবার ব্রেন স্ট্রোক করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্রসহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সদ্য কৈশোর পেরোনো অজয় পাল উত্তাল উপকূল থেকে প্রথম রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন  সিলেটের প্রাচীনতম সংবাদপত্র যুগভেরীতে। ফুঁসে ওঠা সমুদ্র থেকে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি নিয়েছিলেন বলেই বুঝি পথপরিক্রমায় প্রবল জোয়ার ভাটার সাক্ষী হয়ে আছেন। পাঁচ দশকের অধিক সাংবাদিকতা জীবন তাই বিরল সব অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, কর্মে বর্ণাঢ্য আর বিপুল প্রাপ্তির মনিমুক্তো ছড়ানো। এসব প্রাপ্তি আর গৌরবের খতিয়ানে সবচেয়ে বেশি ঝলমলে অধ্যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের আগরতলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জাগরণ-এ কাজ করার অভিজ্ঞতা। অজয় পাল আক্ষরিক অর্থেই একাত্তরের কলম সৈনিক।
সত্তর ও আশির দশকে যে সব মেধাবী সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনে সনাতনী গুরুগম্ভীর অবয়ব ভেঙে নতুন একটি ধারার সূচনা করেন তাঁদেরই একজন অজয় পাল।

যাদের সংবাদের ভাষা প্রাঞ্জল, বিষয় বৈচিত্র্যপূর্ণ। যাদের হাত ধরে বদলে যায় রিপোর্টিংয়ের গৎবাঁধা উপস্থাপন এবং ছকবাঁধা বর্ণনা। এ কথা বলা অতিশয়োক্তি হবে না যে, বাংলা সাংবাদিকতায় আধুনিকতায় অজয় পালেরও রয়েছে বিশেষ অবদান। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের যুগ বদলের ধারায় বৃহত্তর সিলেটকে সংযুক্ত করার কৃতিত্ব তাঁর অবশ্য প্রাপ্য। এই যে কৃতিত্ব এটি নিশ্চিতে কৈশোর, তারুণ্য‌, যৌবন এবং পরিণত বয়সের অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন পরিপূর্ণ সংবাদ পরিমণ্ডলে। কাজ করেছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, কানাডার স্বনামধন্য সব সংবাদপত্রে। জাতীয় দৈনিকের মধ্যে বাংলার বাণী, দৈনিক সংবাদ, দেশবাংলা ও বাংলাবাজার পত্রিকা ছাড়াও সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকায়ও কাজ করেন কিছুদিন। আর সাপ্তাহিকের মধ্যে যুগভেরী, সিলেট সমাচার, দেশবার্তা ও সিলেটধ্বনি পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন বহুদিন।

শুরুর দিকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সূর্যের দেশ পত্রিকায় কিছুদিন সিলেট প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। যুক্ত ছিলেন লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা, জাগরণ, পত্রিকা, দেশবার্তা, পূর্বদেশ ও কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা নিউজ পত্রিকার সঙ্গে। ২০০৮ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মাসিক  হৃদয়ে বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।সাংবাদিক অজয় পাল মানেই ঘটনার গভীরে প্রবেশ, সংবাদের ভেতরে জীবনের অনুসন্ধান। আর এ কারণে একাধিকবার বাংলাবাজার পত্রিকা তাঁকে দেশসেরা সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচিত করে। সাংবাদিকতার সুবাদে ২০০১ সালে অজয় দা কিউবার হাভানায় অনুষ্ঠিত ইন্টার–পার্লামেন্টারি কনভেনশনে বাংলাদেশ সংসদীয় দলের সঙ্গে সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছড়াসাহিত্যেও অজয় পাল অনন্য, অনবদ্য। শব্দে-বাক্যে টানতে জানেন চমৎকার অন্তমিল। এ কারণেই গান রচনায়ও তিনি ছিলেন বেশ সাবলীল। তাঁর লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী, হিমাংশু গোস্বামীর মতো খ্যাতনামা শিল্পীরা।

প্রয়াত এই সাংবাদিকের কফিন পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে নিয়ে আসলে  তৈরী হয় এক ঋদয় বিদারক  দৃশ্যের। সহকর্মিদের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবুর সঞ্চালনায় প্রয়াতের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন ছড়াকার দিলু নাসের, এর পর প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা ও  ব্রিটেনের প্রীবণ সঙ্গীত শিল্পি হিমাংশু গোস্বামী ও গৌরি চৌধুরীর নেতৃত্বে আগতরা জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। সাংবাদিক অজয় পালের স্মৃতিচারন করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের  মিনিষ্টার প্রেস আশিকুন নবী চৌধুরী, সত্যবাণী সম্পাদক  যুক্তরাজ্য ঘাতক-দালাল  নির্মুল কমিটির সভাপতি সৈয়দ আনাছ পাশা, জনমতের সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সত্তার, ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন বাংলা ক্লাবের সহ সভাপিত রহমত আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলাগের পক্ষে আব্দুল আহাদ চৌধুরী, শহীদ মিনার কমিটির পক্ষে আলতাবুর রহমান মোজাহিদ,  পরিবারের পক্ষে প্রয়াতের পুত্র দিপন পাল, কাউন্সিলার ঈকবাল হোসেন , কাউন্সিলার আবদাল উল্লাহ, টাওয়ার  হামলেটস মেয়রের প্রতিনিধি মোহাম্মদ জোবায়ের, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব উদ্দিন প্রমুখ। এর পর তার কফিনে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান  বাংলাদেশ হাইমিশন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব, ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি, সনাতন এসোসিয়েশন, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটি, যুক্তরাজ্য জাসদ, সাপ্তাহিক স্বদেশ-বিদেশ, বিশ্ববাংলা নিউজ  উদিচি সহ বিভিন্ন সমাকিজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD