হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হযরত ইব্রাহিম (আ) জামে মসজিদে জুমার খুৎবায় মুফতি শেখ সালেহ আহমেদ বলেছেন- আল্লাহ পাক শিরিককারীদেরকে বরদাশত করেন না। কবিরাহ, সগিরাহ যে কোনো গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন, কিন্তু আল্লাহর সাথে শিরককারীকে আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। এটা আল্লাহর ঘোষনা। শিরক হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ মনে করা, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করে অন্য কাউকে শ্রেষ্ঠ মনে করা।
রাসুল (সা) এর আমলে কাফের মুশরিকরা তাদের দেবদেবীকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতো, তাদের পূজা করতো, সেজদা করতো, ভাল মন্দের জন্য দেবদেবীকে খুশি করার চেষ্টা করতো, তারা কোনো কোনো সময় আল্লাহকেও মানতো, তবে দেবদেবীর মাধ্যমে মানতো, তারা মনে করতো দেব দেবীরা আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করলে তারা বেহেশত পেয়ে যাবে। বর্তমান যোগে কিছু মুসলমান মাজারে মাজারে গিয়ে কবর পূজা করে, কেউ কেউ মাজারে গিয়ে সেজদা দেয়, পীরকে সামনে রেখে অনেক মুসলমান সেজদা দেয়।
মাজার ও পীর না কি নিঃসন্তানকে সন্তান দিয়ে দেবে, আখেরাতে সুপারিশ করে বেহেশতে নিয়ে যাবে, দেশে বিদেশে ভাল রাখবে। যদি কেউ মনে করে কোনো পীর বা মাজার তার ভাল মন্দ করে দেবে, নিশ্চিত জেনে রাখুন সে আল্লাহ সাথে অন্য কাউকে শরিক করার কারণে সে কাফের হয়ে গেছে। কারণ কাউকে সন্তান দেয়া, ভাল রাখা, বেহেশত দেয়া সেটা আল্লাহর একান্ত কাজ, অন্য কারো নয়। মুফতি সালেহ আহমেদ বলেন- প্রত্যেক মানুষ একত্ববাদে বিশ^াসী হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
পিতা মাতা সন্তানকে অসভ্য বানায়, সভ্যও বানায়। ঘুম থেকে উঠেই যদি মা বাবা সন্তানকে ইসলামের কথা বলেন, আদব কায়দার কথা বলেন, সুন্নতী তরিকায় খাবার গ্রহণ, গোসল, কথা বলা ইত্যাদি শিক্ষা দেন তাহলে সন্তান সুসন্তান হয়ে বেড়ে উঠবে, আর কার্টুন শিখিয়ে বড় করলে সন্তানও কার্টুনই হবে। তিনি বলেন- সহিহ হাদিস হচ্ছে শুক্রবারে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার কবরের আযাব মাফ করে দেয়া হয়, কিন্তু সেই ব্যক্তি কে, যিনি মৃত্যুবরনের সময় কালেমা পড়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন, ইমানী হালতে মৃত্যু বরণ করেন, জীবনে চলার পথে ইসলামের বিধি বিধান মেনে চলতেন, তার জন্য শুক্রবারের মৃত্যু, একটি ভাল মৃত্যু।
যিনি সারা জীবন আল্লাহর নাফরমানী করেছেন, ইসলাম মানেননি, মাজার পূজা, পীর পূজা করেছেন, তার জন্য কিসের শুক্রবার, কিসের শনিবার, শাস্তি অবধারিত। দুনিয়াতে বেহেশতের সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত সাহাবী আবু বকর (রা) পাহাড়ের দিকে থাকিয়ে, গাছের দিকে থাকিয়ে, ছাগল ভেড়া কুকুরের দিকে থাকিয়ে কাদতেন, আর বলতেন- তোমরা আমার চেয়ে কত ভাল, মৃত্যুর পর তোমাদের কোনো হিসাব নেই, বিচারও হবে না, কিন্তু আমি বকরের মৃত্যুর পর বিচার হবে, যিনি আমাকে বেহেশতের সার্টিফিকেট দিয়েছেন, না জানি আমার কোন অপরাধে আমার বেহেশতের সার্টিফিকেট কেড়ে নেয়া হয়। এটা হচ্ছে আল্লাহভীতি।
মুফতি সালেহ আহমেদ বলেন- ইমানদার মুসলমানের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা) সুপারিশ করবেন, কোনো বেঈমান মুনাফিক কাফেরের জন্য তিনি সুপারিশ করবেন না। যদি এ ধরনের সুযোগ থাকতো তাহলে রাসুল (সা) এর প্রিয় চাচা আবু তালিবের জন্য তিনি প্রথম সুপারিশ করতেন। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকারী মুফতি শেখ সালেহ আহমেদ প্রায় ৪৫ মিনিটের জুমার খুৎবায় বর্তমান যোগে ইসলামের নামে প্রচলিত বিভিন্ন অসংগতির কথা তুলে ধরেন।
নবীগঞ্জের বিশিষ্ট দানবীর আলহাজ্জ আব্দুর রহমান বুরহানী নবীগঞ্জ পৌর এলাকার প্রাণকেন্দ্রে শত কোটি টাকা মূল্যের একশত শতকের বেশি জায়গা জুড়ে ইব্রাহিম (আ) মসজিদ, মসজিদ কমপ্লেক্স, ঈদ গা, মসজিদ মার্কেট প্রতিষ্ঠা করেন। মুফতি শেখ সালেহ আহমেদ বিগত ১২ বছর যাবত বিনা বেতনে ইব্রাহিম মসজিদ ও ঈদগার খতিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এম এ মজিদ, হবিগঞ্জ, ১৩ জানুয়ারী
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply