বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই জোটের পক্ষ থেকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের’ ভোটের দায়িত্ব থেকে বিরত ও স্থানীয় সাংসদদের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক বজায় রাখা’ কর্মকর্তাদের অন্য জেলায় বদলির দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৩ দফা দাবি নিয়ে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জোটের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে।
বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের উদ্যোগে গঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইসিতে ১৩ দফা দাবি জানিয়ে এসেছিল কয়েক দিন আগেই।
তাতে তিন সচিবসহ প্রশাসনের ২২ কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত আইজিপি, র্যাবের ডিজি, ডিএমপি কমিশনারসহ ৭০ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
২০ দলীয় জোটের প্রতিনিধি দলের নেতা এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি তালিকা ইসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা তা চাই না, এসব কর্মকর্তাদের ক্ষতি হোক বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা চাই, খুব বেশি পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের ভোটের দায়িত্ব থেকে যেন বিরত রাখা হয়।
“বিশেষ করে ভোটে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার যাদের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তাদের অন্য জেলায় বদলি করার দাবি জানানো হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরও কর্মস্থল পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে।”
অলি বলেন, “এখনও দৃশ্যমানভাবে সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মামলা দিয়ে হয়রানি না করার বিষয়ে পুলিশকে ইসি যে নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর হয়নি।”ভোটকে সামনে রেখে ‘গায়েবি মামলা বা অজ্ঞাত আসামিসহ মামলাগুলো’ ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘সাসপেন্ড’ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে জোট।
সার্বিক দাবির বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে ‘বিবেচনার আশ্বাস’ দিয়েছে বলে জানান অলি আহমেদ।
১৩ দাবি
১. নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিতে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি;
২. গেল ১ বছরের ভোটের দায়িত্বে থেকে স্থানীয় নির্বাচনে রাতে ব্যালট পেপার কেটেছে তাদের ভোটের দায়িত্বে নয়;
৩. নেতাকর্মীদের মামলা-গ্রেফতার চলছে; ভোটের আগে বিএনপির এজেন্টদেরও মামলা দিয়ে গ্রেফতারের শঙ্কা;
৪. আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসিকে কঠোর হতে হবে;
৫. নারায়ণগঞ্জ এসপি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিয়ে শঙ্কা;
৬. সরকারি রেডিও ও বিটিভি ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে; বেসরকারি গণমাধ্যমে আগাম ফল প্রচার নয়;
৭. গণমাধ্যমকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে অবাধ সুযোগ;
৮. পুলিশের মতো সশস্ত্রবাহিনীকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া;
৯. সেনা মোতায়েন ও টহল ১৫ ডিসেম্বর থেকে;
১০. নির্বাহী হাকিম নিয়োগ ১১ ডিসেম্বর থেকে;
১১. ইভিএম ব্যবহার করা উচিত নয়, পুনর্বিবেচনার আহ্বান;
১২. ভোটের সময় নিবন্ধিত দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দুই জন স্পেশাল ব্রাঞ্চের অস্ত্রধারী দুই জন নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া;
১৩. ইসি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় থাকবে। ক্ষমতা সীমিত হলেও বিরোধী দলের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার দাবি।
সিইসির সঙ্গে হাফিজের বৈঠক
এর আগে বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার) কেএম নূরুল হুদা সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বৈঠক করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাফিজ বলেন, “বিএনপির মহাসচিবের নির্দেশে আমি সিইসির সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারা এলাকা ছাড়া।
“আমি নিজে ছয়বার নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। এখন এলাকায় যেতে পারছি ভোলা-৩ আমার আসনে তফসিল ঘোষণার পর হয়রানিমূলক যে সব মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা সিইসিকে জানিয়েছি।”
Leave a Reply