ড্রেন ও রাস্তা সংস্কার না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের চককোবদাস পাড়া, কোবদাসপাড়া,রানীগ্রাম সহ আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার হাজারো মানুষের। জনমনে এখন প্রশ্ন কবে শেষ হবে ড্রেন ও রাস্তার সংস্কার কাজ? গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ থাকায় প্রায় ১০টি মহল্লাবাসীর যাতায়াতে দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সরেজমিন ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, প্রায় বছর খানেক আগে ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করে বিশ্ব ব্যাংক।
পৌসভারনরানীগ্রাম থেকে চককোবদাস পাড়া ডাবতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশ দিয়ে ড্রেনের কাজ করা হয়। পরবর্তীতে (ডাবতলা মোড়) থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলের বাড়ি পর্যন্ত কার্পেটিংয়ের পাকা রাস্তা খনন করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে ড্রেনের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বর্তমান সংস্কারের কাজটি প্রায় ৩থেকে ৪ মাস ধরে রহস্যজনক কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে মহল্লাবাসীর হাজারো মানুষ প্রতিদিন চলাচলে ভোগান্তির পাশাপাশি পণ্য আনা নেওয়ায় পরেছেন দুর্ভোগে। দ্রুত রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় মুমূর্ষু রোগী নিয়ে বিপাকে পরেন স্বজনেরা। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে শহরে। এদিকে বৃষ্টির পানি জমে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে পানি জমাট বেধে খানাখন্দ হচ্ছে। ড্রেনের দুপাশে মাটি না থাকায় প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। এ যেন দেখার কেউ নেই।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মালসা পাড়ার কাজ তদারকির অফিস সূত্রে জানা যায়, ৭নং ওয়ার্ড রানীগ্রাম থেকে ৮নং ওয়ার্ড দত্তবাড়ী ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা প্রায় ১১০০মিটার ও ড্রেন সংস্কারের জন্য প্রায় ৭২৭ মিটার কাজের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় বিশ্বব্যাংক। আর এই কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব পায় মেসার্স ষ্টার লাইট সার্ভিস লিঃ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
চককোবদাস পাড়া মহল্লার বাসিন্দা শিক্ষক এসবি শাহীন রেজা বলেন,শহরে যাতায়েতের একমাত্র রাস্তা এটি। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্থানীয় মোঃ ইসা শেখ বলেন, দীর্ঘদিন যাবত চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পৌহাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য জোরদাবী জানান তিনি।
মহল্লার প্রবীন মুরুব্বী আব্দুর রশিদ কালু জানান, প্রায় এক বছর যাবত বিশ্বব্যাংকের ঠিকাদার ড্রেন ও রাস্তার কাজটি ঠিকমতো না করায়। বর্তমান রাস্তাটি একে বারে হজবরল অবস্থায় পরে আছে। পুর্বে প্রতিদিন এই রাস্তাটি দিয়ে প্রায় ৪/৫ হাজার রিকসা,ভ্যান, ইজিবাইক,মটর সাইকেল,মাইকোবাস, মিনিট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। রাস্তাটিতে চলাচল বন্ধ হওয়ায় এলাকাবাসীর চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পৌহাচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের জন্য দাবী জানান।
স্থানীয় চিকিৎসক বেলাল হোসেন জানান, রাস্তাটি বেহাল অবস্থা হওয়া আমাদের সময় ও রিকশা ভাড়া বেশি লাগে। পাশাপাশি অসুস্থা রোগী আনা নেয়ায় ব্যবপক সমস্যা হচ্ছে। আমরা দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছি। কর্তৃপক্ষের কাছে অতিতারাতারি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নাজমুল শেখ জানান, এলাকার মানুষ রাস্তাটির কারণে যে পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বলে ভাষা প্রকাশ করা যাবে না। চলাচলে যেন দুঃখের শেষ নেই। রিকশা উল্টে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছে সাধারণ যাত্রী। আমরা চাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করবে কর্তৃপক্ষ।
রুহুল আমীন, সাকলাইন শিহাব, আফসান সবুজ, বিপ্লব শেখসহ একাধিক কলেজ শিক্ষার্থীরা বলেন,চলচলের ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাগুলোর দিকে কারো কোন নজর নেই। রাস্তা গুলো খুবই খানাখন্দের জর্জরিত হয়ে রয়েছে। অটোরিকশায় করে চলাচল করা যায়না। এগুলো মেরামত করা খুবই দরকার।
রিকশা,ভ্যান ও অটোরিকশা চালক সাইদুল শেখ, মুনজু শেখ, মোতালেব হোসেন, রাজ্জাক শেখ, আমিনুল ,শাহাদত, আলী আকবরসহ একাধিক চালকেরা বলেন, আমরা এই রাস্তা দিয়ে অনেক ভয়ে চলাচল করি। কখন উল্টে যায়। অনেকেই আহত হয়েছে। রাস্তায় খানাখন্দ হওয়ায় যাত্রীরা অটোরিকশায় যেতে চায় না। অনেক ঝাঁকুনি হয়। সময় বেশি লাগে। রাস্তাটি মেরামত করার খুবই প্রয়োজন তা না হলে আমাদের দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হবে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হোসেন আলী জানান, সাধারণ জনগনের মতই আমিও দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার কারার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এবিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কাজ তদারকির দায়িত্বরত প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার জাকারিয়া কবির বলেন, দ্রুত রাস্তা ও ড্রেনের কাজটি শুরু হবে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ষ্টার লাইট সার্ভিস লিঃ এর দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হোসেনকে ফোন করলে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সালাম জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে কাজটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার জন্য একাধিকবার বলা হয়েছে। আবারও সংশ্লিষ্ট দফতর বরাবর লিখিত চিঠি দেবেন বলে তিনি উল্লেখ্য করেন।
Leave a Reply