1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
আলোক নক্ষত্র মতিয়ার চৌধুরীর গ্রন্থ 'কামারগাঁও চৌধুরী পরিবারের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত' পাঠের পরিধি - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

আলোক নক্ষত্র মতিয়ার চৌধুরীর গ্রন্থ ‘কামারগাঁও চৌধুরী পরিবারের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত’ পাঠের পরিধি

বিশেষ প্রতিনিধি
  • বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

মেকদাদ মেঘ

পৃথিবী বৈচিত্র্যময়, বৈচিত্র্যময় জীবজগতের বংশ পরম্পরা। বংশগতি, বংশবিদ্যার বৈজ্ঞানিক নয় সামাজিক গবেষণামূলক একটি গ্রন্থ পাঠ করলাম। গ্রন্থটি সাংবাদিক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরীর ‘কামারগাঁও চৌধুরী পরিবারের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত’। গ্রন্থটি স্মৃতি পাঠ্য। পাঠ করতে করতে নিজের বংশের স্মৃতি বিস্মৃতি হৃদয়ে ভাসে। প্রথমেই উল্লেখ করছি কামারগাঁও গ্রামের চৌধুরী বংশের নছরের বিবরণ—

আমি লিখক মাং আব্দুল মজীদ ইবনে আব্দুল হেকিম
চৌধুরী মরহুম ইবনে মাং কাজিম চৌধুরী মরহুম ইবনে
মাং আজিম চৌধুরী মরহুম ইবনে মাং আলী চৌধুরী মরহুম
ইবনে আরিফ চৌধুরী মরহুম ইবনে মাং বাহরাম মরহুম
ইবনে আমান উল্লা মরহুম ইবনে হাবিব উল্লা খাঁ মরহুম
উক্ত হাবিব উল্লা খা মরহুম ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।
তাহার হিন্দু নাম মাকাই ঠাকুর।
আমি লিখক আমার প্রপিতামহ মরহুম মৌলভী
মাং আজিম চৌধুরীর লিখিত পার্সী ভাষায় লিখিত
নছব নামার বিবরণী হইতে আমার নিম্নতম বংশধর
গণের অবগতির জন্য লিপিবদ্ধ করিলাম। আমার-
প্রপিতামহের লিখিত নছবনামা উইপোকা দ্বারা
ধ্বংস হওয়ায় বাংলা ভাষায় লিখার অন্যতম কারণ।
কারণ, এখনই প্রায় বিনষ্ট ইইয়া গিয়াছে। পাঠ করা
কষ্ট সাধ্য হইয়া পড়িয়াছে। খোদাওন করিম আমিও
আমার পিতামাতাও উর্ধতন আবাও আজদাদ এবং
বংশধর গণের গোনাহ খাতা মাফ করিয়া দেওয়ার
জন্য দরগায়ে গফুরুর রহিম প্রার্থনা করিতেছি।

নছরের বিবরণ, বংশ, পরিবার, গোত্র সংক্রান্ত গবেষণাকর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্পষ্টবাদী মতিয়ার চৌধুরী পাঠকের কাছে নছবে বর্ণিত বংশের পূর্বপুরুষ মাকাই ঠাকুরই হলেন শ্রী মহেন্দ্র ঠাকুর চৌধুরী বা মানাই ঠাকুর এ ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি ও লেখকদ্বয় মহেন্দ্র ঠাকুর চৌধুরীকে কোনো কোনো সময় মানাই ঠাকুর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পারিবারিক বংশতালিকা শত শত বছরের বিশাল অধ্যায়। মতিয়ার চৌধুরী একটি গ্রামের চৌধুরী বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত রচনার মধ্য দিয়ে অনেককে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন শিকড় ও শেখরের কথা। পারিবারিক ইতিহাসও সামাজিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইতিহাস পাঠের পরিধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই ধরনের গ্রন্থ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মতিয়ার চৌধুরীর জন্ম সিলেটে। আদি নিবাস হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পুরাদিয়ার মৌজার (নূরগাঁও) পুরাদিয়া গ্রামে। রফিকুল হক চৌধুরী এবং তৌফিকুন নেছা চৌধুরীর পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে মতিয়ার চৌধুরী পঞ্চম। তাঁর লেখা গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে: ১। কুশিয়ারার বাঁকে (১৯৮১), ২। নৌপথে নাবিক (ভ্রমণ কাহিনি, সম্পাদিত), ৩। নবীগঞ্জের ইতিকথা (ইতিহাস গ্রন্থ, ১৯৮৫), ৪। সিলেট গাইড (সম্পাদিত, ১৯৮৯), ৫। সিলেট বিচিত্রা (সম্পাদিত, ১৯৯০), ৬। সিলেট ও সিলেটি ভাষা (গবেষণা গ্রন্থ, ১৯৯৯), ৭। সিলেটি ভাষা শিক্ষার বই (আট খণ্ড, ১৯৯৮-২০০০), ৮। টেন সিলেটি পোয়েম (অনুবাদ যৌথভাবে জেমস লয়েড উইলিয়ামের সাথে), ৯। যুক্তরাজ্যে সিলেটবাসী (১ ম খণ্ড, ২০০১), ১০। বন্ধু ছাড়া কেমনে রই (প্রকাশিতব্য গানের বই), ১১। সিলেটের মরমি সাহিত্যে রাধাকৃষ্ণের প্রভাব, ১২। স্মৃতির মণিকোঠায় (বাছাইকৃত লেখা) এবং ১৩। কামারগাঁও চৌধুরী পরিবারের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত (২০২১)। এছাড়া পঞ্চাশটিরও বেশি সিলেটি নাগরি পুথির অনুবাদসহ সিলেটি ভাষার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মতিয়ার চৌধুরী।

সকলেই কোন না কোনভাবে শেকড় সন্ধানী। পূর্বপুরুষের স্মৃতিচিহ্নময় মহৎগাথার অনুসন্ধানী। বংশপরম্পরায় মানুষ পৃথিবীর ক্ষণিকের মুসাফির। উক্ত গ্রন্থটি কামারগাঁও চৌধুরী বংশের মুসাফিরনামা। বাসিয়া প্রকাশনী মার্চ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থটি প্রকাশ করে একটি ব্যতিক্রম কর্ম সম্পাদন করলো। তবে লেখকের প্রতি অনুরোধ, আরও বিস্তৃত পরিসরে পরবর্তী সংস্করণে মুদ্রণ করার। এ গ্রন্থটি ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠুক পরিপূর্ণ ইতিবৃত্ত— এটা আমাদের প্রত্যাশা। কেননা গ্রন্থটি ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী পাঠকের পরিধি বৃদ্ধির সহায় একটি গ্রন্থ।

গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য— একই বংশের বিভিন্ন পরিবারের পরিমার্জিত বংশতালিকাচিত্র, বংশের আলোচিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনকথার বিবরণ। এছাড়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কামারগাঁও চৌধুরী বংশের সূর্যসন্তানদের অংশগ্রহণ ও বীরত্বের গাথা আমাদেরকে নিয়ে যায় স্মৃতির একাত্তরে। এ গ্রন্থে জনকল্যাণে কামারগাঁও চৌধুরী পরিবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবদান হৃদয়কে আন্দোলিত করে। বহির্বিশ্বে কামারগাঁও চৌধুরী বংশের প্রবাসীদের অবদান আমাদেরকে কর্মমুখী বহির্বিশ্ব ভ্রমণে সাহস যোগায়। গ্রন্থের ২৫৫ পৃষ্ঠা থেকে ৩৩৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখকের যে এ্যালবামটি আমরা দেখতে পাই, তা লেখকের সাফল্যময় জীবনের প্রতিচ্ছবি। এ্যালবামে আমরা আশির দশক থেকে বর্তমান দশকের দূলর্ভ কিছু আলোকচিত্র দেখতে পাই যা লেখকের অর্জন ও বিসর্জনের ক্ষেত্র বা বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে।

গ্রন্থের রাঢ়দেশীয় ব্রাহ্মণ, গুজরাট থেকে শ্রীহট্ট, ধর্মান্তরিত হওয়ার পর করিমপুর থেকে কামারগাঁও আগমন, চৌধুরী পরিবারের আদি পুরুষদের কথা— এই সূচনামূলক অধ্যায়গুলো তাৎপর্যপূর্ণ। পরবর্তীতে ব্যক্তিদের নাম ও বিভিন্ন শাখার নামকে কেন্দ্র করে যে অধ্যায়গুলো রচিত হয়েছে তা শুধু ব্যক্তি নয় সমাজ সংশ্লিষ্ট পারিবারিক সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, বংশীয় পরম্পরা ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বহমান জীবনধারার আংশিক ছায়া প্রচ্ছায়া। গ্রন্থটি স্মৃতিপাঠ্য।

কামারগাঁও চৌধুরী পরিবারের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত পাঠ করলে অনেকেই নিজেদের বংশের কথা কাহিনি ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। যার যার বংশীয় অবদান লিপিবদ্ধ করতেও অনুপ্রাণিত হবে। যদিও পৃথিবীর সবাই একই মায়ের সন্তান, একই গ্রহের আলো ছায়ায় ক্ষণিক মুসাফিরের ছায়াচিত্র।

[লেখক: কবি ও গীতিকার- সিলেট ২২ আগষ্ট ২০২২ খৃষ্টাব্দ।]

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD