বৃহত্তর সিলেটের সাহিত্য সাংবাদিকতার অঙ্গনে মোহাম্মদ নোওয়াব আলী একটি সুপরিচিত নাম, সিলেট বিষয়ক গবেষণায় ও রয়েছে তাঁর প্রচুর অবদান। শুধু গবেষণাই নয় একজন প্রকাশক হিসেবেও দেশব্যাপী রয়েছে তাঁর প্রচুর সুখ্যাতি। বিশেষ করে লেখালেখি এবং সাংবাদিকতার সুবাদে এই মানুষটির কাজের সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটলেও ২০২১ সালের আগে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি। প্রথম এই মানুষটি সম্পর্কে জানতে পারি ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত মরমী কবি পীর শাহ মোহাম্মদ ইসকন্দর মিয়ার মাধ্যমে। ইস্কন্দর মিয়ার সুবাদে তাঁর সম্পাদিত মাসিক ‘’ বাসিয়া ‘’ পত্রিকায় আমার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে নিয়মিত ফোনালাপ হলেও দেখা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সিলেটে।
এর আগে ২০১৩ সালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘’ দক্ষিন সুরমার ইতিহাস ঐতিহ্য পড়ে মানুষটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। শুধু ‘’ দক্ষিন সুরমার ইতিহাস ঐতিহ্যই নয় তাঁর সম্পাদিত মাসিক ’বাসিয়া’ ও অনলাইন বাসিয়াটেুয়েন্টিফোর.ডট.কমে তাঁর পান্ডিত্ব সম্পর্কে আঁচ করা যায়। তিনি বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন নিবন্ধিত গীতিলোকারও । সিলেট বেতারের নিয়মিত অনুষ্টান ’’ সুরমা পার‘র কথার গ্রন্থকারও বটে।
ইতমধ্যেই তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল (ক) দক্ষিন সুরমার ইতিহাস ঐতিহ্য (গবেষণাগ্রন্থ -২০১৩) (খ) আমার দেখা হিমালয় সুকন্যা (ভ্রমণ কাহিনী নেপাল ২০০৭) (গ) সুরমা গাঙ্গের নাইয়া ( গানের বই ২০০৭) (ঘ) ভেজাল (ছড়াগ্রন্থ ১৯৯৮) (ঙ) মাখন কলসুমার কিচ্ছা ( কিচ্ছা-২০২২) (চ) ভালোবাসা চিরদিন (ছোটগল্প-২০২১) (ছ) বর্ণমালার মিছিল ( বর্ণশিক্ষা ২০২১)।
এছাড়াও তিনি কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন এর মধ্যে রয়েছে (১) স্বাধীনতার মহানায়ক শেখ মুজিব ২০২১ (২) মুক্তিযুদ্ধের ছড়া ২০১৭ (৩) প্রবাসী কবিদের নির্বাচিত প্রেমের কবিতা (২০১৭), পীর শাহ মোহাম্মদ ইসকন্দর মিয়া স্মারক গ্রস্থ (২০১৭), হাজী তোয়াব আলী স্মারকগ্রন্থ (২০২১), নবীর নামে দুরূদ পড় (২০১৬), প্রিয়তমার জন্য (১৯৯৯)। তার সম্পাদিত চারটি লিটল ম্যাগাজিন এগুলো হল মৃত্তিকা (সেপ্টেম্বর ১৯৯৪), স্রোত ছড়া সংখ্যা (১৯৯৫), স্রোত গল্প সংখ্যা ( নভেম্বর ১৯৯৬), স্রোত কবিতা সংখ্যা (জানুয়ারী- ১৯৯৮), রয়েছে প্রকাশিত দুটি অডিও এগুলো হলো নবীর নামে দুরূদ পড় (যৌথ) ও পিঞ্জির ।
এর পাশাপাশি তিনি কয়েকটি সাহিত্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন সভাপতিঃ -বাসিয়া বেতার শ্রোতা ক্লাব ও দক্ষিন সুরমা সাহিত্য পরিষদ। সহসভাপতি দুর্বিন শাহ সেতু নামকরণ বাস্তবায়ন পরিষদ। বিভাগীয় আহবায়ক জাতীয় গীতি কবি পরিষদ ও সেবা সংস্থা নিয়মিত রক্তদাতা। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট। প্রতিষ্টাতা সভাপতি আফলাতুন নেসা পীর বক্স পাঠাগার দক্ষিন সুরমা-সিলেট।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থার নাম বাসিয়া প্রকাশনী। রাজধানীর বাইরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই প্রকাশানা সংস্থাটি ইতিমধ্যেই দেশের একটি নামকরা প্রকাশনী হিসেবে সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন লেখেকের প্রায় দুই শতাধিক গ্রন্থ এই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সিলেটের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এই প্রশাশনা সংস্থাটি তিনি প্রতিষ্টা করেন। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের গবেষণার পাশাপাশি নবীব লেখকদের তুলে ধরতে কাজ করছে প্রকাশনা সংস্থা বাসিয়া। এছাড়া এই প্রকাশনীর আরো একটি বিশেষত্ব রয়েছে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো ওয়েবসাইটে বিশ্বের যে কোন প্রান্থ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে। এই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো খুবই মান সম্পন্ন হয়। এর পেছনে তিনি নিজে পরিশ্রম করেন।
আইন শাস্ত্রে গ্রাজুয়েশন করা মোহাম্মদ নওয়াব আলীর জন্ম ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিলেট জেলার দক্ষিন সুরমা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গুপ্তর গাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম মোহাম্মদ পীর বক্স মায়ের নাম আফলাতুন নেসা। পীর বক্স ও আফলাতুন নেসার তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের মধ্য নোয়াব আলী দ্বিতীয়।
তিনি শাহানারা আক্তারের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ , বিাহিত জীবনে তিনি তিন সন্তনের জনক তার সন্তানেরা হলো নাবিল, তাসনিম ও নাফিস। আইন শাস্ত্রের বাইরেও তিনি বিভিন্ন সময় একাধিক কোর্স সম্পন্ন করেছেন , ১৯৯৩ সালে তিনি হোমিও চিকিৎরার উপর ডিএইচএমএস কোর্স সম্পন্ন করেন, ২০০০ সালে কম্পিউটার গ্রাফিক ডিজাইন এর উপর ডিপ্লমা করেন সেই সাথে ১৯৯৩ সালে পোল্টি কোর্স সম্পন্ন করেন।
তিনি একজন ভ্রমণ পিপাসুও বটে- তিনি নেপাল এবং ভারত সফর করেছেন। ২০২১ সালে তাঁকে শিক্ষাবিদ ড. মন্জুশ্রী সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। চাল চলনে অত্যন্ত সাদামাঠা বিনয়ী নম্র ভদ্র এই মানিুষটিকে দেখলে বুঝার উপায় নেই তাঁর ভেতর লুকিয়ে আছে অগাধ জ্ঞানের ভান্ডার। নিভৃতচারী এই মানুষটির সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে লিখার ইতি টানছি।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply