1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
ভ্রমনঃ ফ্রুটস ভ্যালী টু স্মৃতি সৌধ - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

ভ্রমনঃ ফ্রুটস ভ্যালী টু স্মৃতি সৌধ

এম এ মজিদ
  • সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২
  • ২২১ বার পড়া হয়েছে
ভ্রমনঃ ফ্রুটস ভ্যালী টু স্মৃতি সৌধ
ভ্রমনঃ ফ্রুটস ভ্যালী টু স্মৃতি সৌধ। ছবিঃ সংগৃহীত

তেতুল গাছে ভূত! গ্রাম বাংলার এক রুপ কথার গল্প। তেতুল গাছ তো কমবেশি সবাই দেখেছেন, তেতুল গাছে ভূত থাকার গল্পও শুনেছেন। কিন্তু লিপস্টিক তেতুল গাছ কি দেখেছেন? সেই তেতুল গাছে কি ভূত থাকে? আমাদের অল্প সময়ের গাইড মাহবুব যখন জানালেন- এই দেখেন লিপস্টিক তেতুল গাছ।

গাছে তখন তেতুল নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু একটি তেতুল দেখা যাচ্ছে, তাও একেবারেই ছোট। তারপরও মাহবুব কষ্ট করে একটি তেতুল পেরে আনলেন। তেতুলটি ভাঙ্গার পর অবাক হলাম। ভেতরটা একেবারে লাল লিপস্টিকের মতো। আমি একটি কঞ্চি দিয়ে আরও কয়েকটি তেতুল সংগ্রহ করলাম।

বন্ধু সেলিম, এডঃ শিবলী খায়ের, এডঃ আঙ্গুর, এডঃ জুয়েল আমরা বেশ কয়েকটি তেতুল খেলাম। সচরাচর তেতুলের চেয়ে লিপস্টিক তেতুলের স্বাদও ভালো। কয়েকটি তেতুল নিয়ে আসলাম বাসায়। আমার মেয়ে নাজাত তেতুল ভেঙ্গে লাল লিপস্টিকের মতো দেখে আরও বেশি আশ্চর্য্য হল।

২০০৫ সালে অতি বিরল লিপস্টিক তেতুল গাছটি উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন কুষ্টিয়া জেলার হিজলাবট গ্রামের রাশিদা মালেক। মহুয়া বা ডুরিয়ান গাছ আমি কখনো দেখিনি। ডুরিয়ান গাছটি রুপন করেছেন পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান আমাদের হবিগঞ্জের প্রিয় জালাল আহমেদ ভাই। করমচার খসে মুখ ভরে গেলেও টক ফলটি নির্বিঘ্নে খেয়েছেন এডঃ সফিক ভাই। বন কাঠাল, দেশী কাঠাল, নীল কাঠাল, বারমাসী কাঠাল, লাল কাঠাল, গোলাপী কাঠাল, সাদা কাঠাল, সীডলেস কাঠাল, এগফ্রুট, মনকাটা, লাভ লাভ, জংলি বাদাম, বক্স বাদাম,পেস্তা, কাঠ, কাজু বাদাম, সুর্যডিম(সাদা আম), ব্ল্যাক স্টোন (কালো আম), ফিঙ্গার লেমনসহ অন্তত ১৫০ প্রজাতির ফলের গাছ, ৩৭ প্রজাতীর ঔষধী ও ১৪ প্রজাতির মসলার গাছ গাছালির সমারোহ দেখতে আপনাকে যেতেই হবে ফ্রুটস ভ্যালীতে।

একই গাছে জাম্মুরা ও কমলা ধরে, তা দেখতে পাবেন সেখানে। অত্যান্ত সাজানো গোছানো মনের মাধুরি দিয়ে মেশানো একটি দর্শনীয় স্থান ফ্রুটস ভ্যালি। হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের পাহাড়ী পরিবেশে গড়ে উঠা ফ্রুটস ভ্যালি রাষ্ট্রের একটি অতি সংবেদনশীল সংরক্ষিত এলাকা। সকলের প্রবেশাধীকার সেখানে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। আমরা ১০জন আইনজীবী ও ৪জন আইনজীবী বন্ধু মোটর সাইকেল যোগে রওয়ানা দেব মাধবপুর ও চুনারুঘাটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য। শুরুতেই মফিজ ভাই বললেন- চলেন আমরা প্রথমে ফ্রুটস ভ্যালীতে যাই। সেখানে জাহাঙ্গীর আলম নামে তার পরিচিত এক বন্ধু রয়েছেন, তিনি ভেতরে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করে দেবেন। ১৩ আগষ্ট শনিবার সকাল ১০টার দিকে আমরা পৌছি শাহজিবাজারস্থ হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডে। ফায়ার সিকিউরিটি মাহবুবু আমাদেরকে সংগ দিলেন।

গ্যাস কুপের অনেক অজানা তথ্য জানালেন তিনি। বড় ধরনের বিপদে তারা কিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম তাও জানালেন। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান শেল ওয়েল কোম্পানী গ্যাস ফিল্ডের আবিস্কার করে। বর্তমানে সেটি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানী লিঃ তার অপারেট করছে। সেখানে ২টি গ্যাস কূপ রয়েছে। এর একটি ৫ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার ফুট গভীর, অন্যটি ৪হাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার ফুট গভীর। বাংলাদেশের বৃহত গ্যাস ফিল্ডের মধ্যে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড অন্যতম। সেখান থেকে বিপুল পরিমান মিথেন গ্যাস আমরা পেয়ে থাকি।

১৯৬৮ সনে গ্যাস উত্তোলনের সময় এর রিজার্ভ ছিল ২হাজার ৭৮৭ বিলিউন কিউবিক ফিট। বর্তমানে ৩শ ৪৫ বিলিউন কিউবিক ফিট গ্যাস সেখানে মজুদ আছে। আর প্রতিদিন হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে ২২৫ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস। সাড়ে ৪ কিলোমিটার ব্যসার্ধের ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্যাস কূপের আশপাশে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান না পেলে বাংলাদেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গ্যাস ফিল্ডকে ঘিরে সেখানে গড়ে তুলা হয়েছে একটি আবাসিক এলাকা ও অতিথি ভবন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অতিথি ভবনে এসে রাত্রী যাপন করে থাকেন। খনিজ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ন মিটিং হয় সেখানে।

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে আমরা ছিলাম প্রায় ২ ঘন্টার মতো। যেকোনো ভ্রমনে অত্যন্ত সহনশীল ও উৎসাহ প্রদানকারী ব্যক্তিত্ব এডঃ দেওয়ান জাকারিয়া ও এডঃ হাবিবুর রহমান খান। এডঃ জসিম ভাই সবসময়ই অগ্রবর্তীদের একজন। আমাদের ভ্রমনে নতুন সংযোজন এডঃ আইয়ুব আল আনসারী। দুপুর ১টার দিকে আমরা গেলাম বহরা রাবার ড্যাম দেখতে।

২০০৩ সালে প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যামটি তৈরী করা হয়। উজানের শতশত একর জমিতে অসময়ে পানি সেচের জন্য তৈরী করা রাবার ড্যামটি এলাকাবাসীর জন্য আশির্বাদে। এডভোকেট ইয়াকুব খান রাবার ড্যামে আমাদেরকে হাজি বিরিয়ানী খাইয়ে আপ্যায়িত করায় তার প্রতি অশেষ ভালবাস। পরের গন্তব্য তেলিয়াপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধ। লেক দেখেই সাধ জাগল একবার গোসল করে নেই।

আমরা অন্তত ৮জন লেকের পানিতে গা ভেজালাম। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সাতছড়ি মোস্তাক হোটেলে এসে দেখি আমাদের অর্ডারের খাবারের কোনো খবর নেই। এরই মাঝে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬০ জনের একটি পর্যটক দল এসেছে খাবার খেতে।

এক হযবরল অবস্থার মধ্যেই আমরা হাস মুরগী আলু ভর্তা ও ডাল দিয়ে খেয়ে নিলাম। চুনারুঘাট শহরে এসে দেখি শতশত চা শ্রমিক রাস্তা অবরোধ করেছে তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবীতে। বিকালের দিকে যখন বাসায় ফিরলাম রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করল পুরো শরীরে। আবছা আবছা ঘুমের মধ্যেই ভাবতে থাকি- লিপস্টিক তেতুল গাছে কি সত্যিই ভূত আছে?

লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ১৫ আগষ্ট ২০২২
০১৭১১-৭৮২২৩২

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD