হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এতিমখানা মসজিদে জুমার খুৎবায় মাওলানা লুৎফুর রহমান আজাদ বলেছেন- কারবালার প্রান্তরের মর্মান্তিক ঘটনা থেকে মুসলমানদের শিক্ষনীয় আছে অনেক কিছু।
আল্লাহর রাসুল (সা) এর একজন অন্যতম সাহাবী আমিরে মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের মাধ্যামে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এর পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, একজন সাহাবীর পুত্র হয়ে কিভাবে ইয়াজিদ নবী (সা) এর আদরের নাতী ইমাম হুসাইন (রা) কেন শহিদ করল? পিতৃদোষে ইয়াজিদ দোষী ছিল না, বরং মাতৃদোষে ইয়াজিদ দোষী ছিল।
আমিরে মুয়াবিয়া একাধিক বিয়ে করেন। একাধিক স্ত্রীর মধ্যে মায়সুন বিনতে বাজদাল আল কুলাবি আল নাসরানিয়া ছিলেন একজন। মায়সুন ছিল খারাপ চরিত্রের অধিকারী। মায়সুনের গর্ভে জন্ম নেয় ইয়াজিদ। সেই ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হতে হয় নবী (সা) এর কলিজার টুকরা ইমাম হুসাইন (রা)কে। অপরদিকে নবী (সা) এর প্রিয় কন্যা ছিলেন ফাতেমা (রা)। ফাতেমা (রা) এর ঘরে জন্ম নেন ইমাম হুসাইন (রা)।
ইমাম হাসান (রা) ও ইমাম হুসাইন (রা) কে জান্নাতের যুবকদের সর্দার হিসাবে ঘোষনা দেয়া হয়েছে। আপনি যদি ইমাম হুসেইন (রা) এর মতো সন্তান কামনা করেন তাহলে ফাতেমা (রা) এর মতো চরিত্রের অধিকারী কোনো নারীকে বিয়ে করতে হবে, আপনি বিয়ে করলেন মায়সুনের মতো কোনো নারীকে, আর কামনা করেন ইমাম হাসান (রা) ইমাম হুসেইন (রা) এর মতো সন্তান। বরং এর উল্টোটা হতে পারে।
কাজেই নারীর চরিত্রের গুনের কারণে, আমলের গুনের কারণে, ঈমানের গুনের কারণে সন্তানদের কেউ সুসন্তান হয় কেউ কুসন্তান হয়। মাওলানা আজাদ বলেন- নামাজ পড়ার সময় যদি আমাদের সন্তানরা ডিস্টার্ব করে তাৎক্ষনিক আমরা খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখাই, অথচ রাসুল (সা) এর নামাজের সময় তার নাতীরা পিঠে উঠতেন, সেজদার জায়গায় বসে পড়তেন, জামায় ধরে টানা হেছড়া করতেন, রাসুল (সা) কোনো সময়ই বিরক্ত হতেন না। আমাদেরও উচিৎ নামাজের সময় (রা) এর চরিত্র ধারণ করা। মাওলানা লুৎফুর রহমান আজাদ বলেন- আমরা দারিদ্রকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি না।
অথচ নবী (সা), সাহাবী (রা) গন দারিদ্রকে আলিঙ্গন করতেন। হযরত ফাতেমা (রা), হযরত আলী (রা) ছিলেন তখনতার সময়ে মক্কা মদিনার সবচেয়ে আর্থিক দিক দিয়ে গরীব মানুষ। অথচ তাদের ঘরে ছিল সুখ আর সুখ। এমনও হয়েছে- ফাতেমা (রা)এর ঘরে একাধারে ১৫ দিন চুলায় আগুনও জ্বলেনি। না খেতে খাতে জীর্ণশীর্ণ হয়ে যেতেন তারা। ঈদে সন্তানদের নতুন পোষাক দেয়ার ক্ষমতাও ছিল না। এক ঈদে ইমাম হাসান (রা) ও ইমাম হুসাইন (রা) নতুন জামা চাইলেন। মা ফাতেমা বললেন- তোমাদের নানার কাছে যাও।
তারা তাদের নানা নবী (সা) এর কাছে গিয়ে ঈদের নতুন জামা চাইলেন। নবী (সা) এর কাছেও তখন জামা কিনে দেয়ার মতো অর্থ ছিল না। সাথে সাথে জিবরাইল (আ) এসে তাদের চাহিদা মোতাবেক জান্নাত থেকে ইমাম হাসান (রা) সবুজ জামা এবং ইমাম হুসেইন (রা)কে লাল জামা এনে দিলেন। যাওয়ার সময় সবুজ জামা ও লাল জামার মর্মার্থ রাসুল (সা) কে বলে গেলেন। জানিয়ে গেলেন যাকে সবুজ জামা দেয়া হয়েছে তিনি শত্রুর বিষাক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন, যাকে লাল জামা দেয়া হয়েছে তিনি শত্রুর আঘাতে শহিদ হবেন।
এই হাদিস দ্বারা রাসুল (সা) এর দুই নাতী ইমাম হাসান (রা) ও ইমাম হুসাইন (রা) এর মৃত্যুর পূর্বাভাস ছিল। মাওলানা আজাদ সকলে ইসলামের নীতি নৈতিকতা মেনে জীবন পরিচালনার জন্য আহবান জানান।
এম এ মজিদ, হবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ ৬আগষ্ট ২০২২
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply