1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬দফা বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬দফা বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ

মতিয়ার চৌধুরী
  • মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬দফা বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬‘র ৬দফাই বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ। পাকিস্তানী শাসন শোষন ও বৈশম্যের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে জাতির জনক ছয়দফা উত্থাপন করেন। স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে ৭ই জুন এক অবিস্মরণীয় দিন। এই ছয় দফার ভেতরই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র নিহিত ছিল।

১৯৬৬ খৃষ্টাব্দের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা আন্দোলন  বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন মাত্র যোগ হয়। তাই ছয়দফা-বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা।  অধিকার আদায়ের  সংগ্রাম বাঙ্গালীরা  অনেক আগে থেকেই করে আসছে। কিন্তু নিজেদের আত্মপরিচয়ের চাহিদা, এর জন্য সংগ্রামের প্রেরণা, নিজেদের স্বপ্নের বাস্তবিক কাঠামো বাঙ্গালি জাতি ছয় দফার মাধ্যমেই  পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা উত্থাপনের পরই পাকিস্থানী স্বৈরশাসক আইয়ুব খান  ভীত হয়েই  আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।

আর এই ছয়দফাকে ইস্যু করে  ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ছয়দফার জন্য বংলার মানুষ  জাতির জনককে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। বঙ্গবন্ধুর  ছয়দফা কর্মসূচিকে ঘিরে দেশে-বিদেশে গবেষণা করেছেন অনেকেই। পক্ষে-বিপক্ষে  আলোচনা-সমালোচনা ছিল তখনও। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পারছিলেন ছয়দফা ছাড়া মুক্তির কোন বিকল্প নেই।   তাই জাতির জনক এই কর্মসূচিকে বলেছিলেন “আমাদের বাঁচার দাবি”?

পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে  সর্বদলীয় সভায় ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। দেশে ফিরে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন। বাংলার মানুষ ব্যাপকভাবে ৬ দফার প্রতি সমর্থন জানান। তাই ৬ দফা হয়ে ওঠে দেশের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ।ঐতিহাসিক ৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার ৬ দফার রূপকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় ।

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাংলার মানুষ ঐক্যবন্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।  তখন সমগ্র বাংলায়  বাঙ্গালীদের একটাই ছিল শ্লোগান ’’ জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো। ‘‘ আইয়ুব মোনায়েম ভাই ভাই এক রশিতে ফাঁসি চাই। দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা ছয়দফাকে কেন্দ্র স্বাধীকার আন্দোলনের প্রস্তুতি  নিতে শুরু করে।

ব্রিটেন থেকে প্রবাসী বাঙ্গালীরা আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনজীবি হিসেবে লন্ডন থেকে ব্যরিস্টার টমাস উইলিয়াকে পাঠায়। মামলায় পাক সরকার হেরে যায়।  ছয়দফাকে কেন্দ্র করে স্বাধীকার আন্দোলন গতি পায় এই আন্দোলনের সাথে যোগ হয় ১১দফা, আন্দোলনের মুখে অইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় ক্ষমতায় আসে আরেক স্বৈর শাসক ইয়াহিয়া খান, ছয় দফা ১১ দফার আন্দোলনে বাধ্য হয়েই পাকিস্তান সরকার ১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচন দিয়ে বাধ্য হয়।

সত্তর এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সংখ্যা গরিষ্টা লাভ করলেও পাকিস্তানীরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি। তাই বঙ্গবন্ধু আবাও ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দেন। ‘’ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।  বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে   শুরু হয় মুক্তি যুদ্ধ। বিজয় ছিনিয়ে আনে জাতি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রোডম্যাপ মূলত রচিত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা থেকেই। এটি ছিলো রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।

স্বাধীনতার ইতিহাসে ছয় দফা এতোটাই গুরুত্ব বহন করে যে, এই কর্মসূচিকে বলা হয় বাঙালির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানের ইতিহাসে ছয় দফার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর  ছয় দফায় পাকিস্তানি শাসকের ভিত এতোটাই কেঁপে গিয়েছিলো  যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯’র ২২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ একটানা ৩৩ মাস কারাবন্দি ছিলেন  বঙ্গবন্ধু।  বাঙ্গালীর  মুক্তির  জন্য ১৪ বছরের কারাজীবনে এটাই ছিল তার  দীর্ঘ কারাবাস।

 

দেখা যাক ঐতিহাসিক দফা দাবির মধ্যে কি কি ছিলঃ

প্রস্তাব :

শাসনতান্ত্রিক কাঠামো রাষ্ট্রের প্রকৃতি:

দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের। আইন পরিষদের (Legislatures) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম। এবং এই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারণের সরাসরি ভোটে।

প্রস্তাব :

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা:

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।

প্রস্তাব :

মুদ্রা বা অর্থসমন্ধীয় ক্ষমতা:

মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু’টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারেঃ-

(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।

অথবা

(খ)বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

প্রস্তাব :

রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:

ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব :

বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা:

(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।

(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।

(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।

(ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।

(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব :

আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ছয় দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেওয়া হবে। ছয় দফা কর্মসূচি জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সমগ্র পূর্ব বাংলা সফর করেন। ছয় দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী,  জহুর আহমদ চৌধুরী সহ, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা  গণসংযোগে অংশ নেন। যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ  সমগ্র বাংলায় ছয় দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। এই দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।

ছয় দফা দেওয়ার পরই পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী বুঝতে পেরেছিল, এ দেশের মানুষ পর্যায়ক্রমে তাদের আত্মঅধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করবেই। তারা বলেছিল, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধান শত্রু আর বাঙালির প্রধান মিত্র। এই একজন নেতা বঙ্গবন্ধু আপসহীন। বাঙালির স্বার্থের প্রশ্নে তিনি আপস করেননি, করছেনও না। পাকিস্তানিরা আরও বলেছিল, ছয় দফার জবাব দেওয়া হবে অস্ত্রের ভাষায়। এ অস্ত্রের ভাষায়ই তারা জবাব দিয়েছিল। কিন্তু জনগণের আন্দোলনের কাছে তারা পরাভূত হয়।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুর ওপর নেমে আসে অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন। দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার রূপরেখা তৈরি করতেই ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফার ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে তৎকালীন আইয়ুব সরকার চিন্তায় পড়ে যান।  তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রতিরক্ষা আইনে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে এবং ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে কারাদণ্ড দেয়।  বাঙালীর স্বাধীকার আদয়ে বঙ্গবন্ধু আপোষ করনেনি।  আমাদের স্বাধনিতার ইতিহাসে ছয় দফাই ছিল মূলমন্ত্র। তাই  প্রাথমিক থেকে  বাধ্যতামূলক ছয়দফাকে পাঠ্যূচীর অন্তর্ভুক্ত করা হোক। অমার বিশ্বাস বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD