আবারো বদলে যাচ্ছে কারিকুলাম। ২০২৫ সালের মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে গেলেও ২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে আবারো পরিবর্তন আসছে। মাধ্যমিক এবং প্রাথমিকের পাঠ্যবই নতুন কারিকুলামের আলোকে লিখিত হয়ে ২০২৭ সালের শিক্ষাবর্ষ থেকেই পুরোপুরি নতুন এবং পরিবর্তিত কারিকুলামে বাস্তবায়নের চিন্তা করা হচ্ছে। যদিও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিতর্কিত কারিকুলাম নিয়ে দেশজুড়ে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ আর তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নে জনমতকে উপেক্ষা করেই ডিমভাজি আলুভাজি আর বিজাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও তার দেশী-বিদেশী দোসররা। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়ে ভিনদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নের গভীরতম ষড়যন্ত্রের ছক এঁকেছিলেন তারা।
শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতন হলে দেশের লক্ষ কোটি ছাত্র-শিক্ষক এবং অভিভাবক যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। তারা প্রথমেই বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিলের দাবি জানান। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে এক ঘোষণা দিয়েই আগের বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আগের বই বাতিল করে নতুন করে মাধ্যমিকের সব বই পরিমার্জনের নির্দেশনা দেন। ফলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং দিনরাত পরিশ্রমের মাধ্যমে মাধ্যমিকের বই নতুন করে পরিমার্জন করা হয়। প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়েও নতুন নতুন বেশ কিছু কনটেন্ট সংযোজন বা বিয়োজনও করা হয়।
পাঠ্যবইয়ের নতুন কারিকুলাম বিষয়ে এনসিটিবির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী আমলে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ভুল তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে খারাপ উদ্দেশ্যেই বিতর্কিত কারিকুলাম চালু করেছিলেন। এখন সেই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। তিনি বলেন, কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হলে সেটা চালু করতে হয় প্রাথমিক পর্যায় থেকে এবং পর্যায়ক্রমে এই কারিকুলাম মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া কারিকুলামের ভিত্তি অভিজ্ঞতাভিত্তিক না হয়ে এটা হতে হয় কনসেপ্ট বা শিখন কৌশলের ওপর ভিত্তি করে। একইভাবে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের পরিবর্তে শিখন পদ্ধতি থেকে প্রশ্ন লেখার সক্ষমতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের পারঙ্গম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম এর একটি রূপরেখা এনসিটিবি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও জমা দিয়েছি। সেই রূপরেখার আলোকে বেশ কিছু কাজও এগিয়ে নেয়া হয়েছিল। এখন বাকি কাজগুলো সুচারূভাবে এগিয়ে নিতে পারলেই ২০২৭ সালে শিক্ষার্থী একটি পরিপূর্ণ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ কারিকুলাম নিয়ে লেখাপড়া শুরু করতে পারবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, আমাদের এখনো অনেক বিষয়ই পাঠ্যপ্স্তুকে সংযোজন করতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সর্বজনবিদিত লেখকদের লেখাগুলো পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করতে হবে। কবি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান এবং আবুল মনসুর আহমদের মতো লেখকদের লেখাগুলো শ্রেণীভেদে পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করতে হবে। আশা করছি নতুন কারিকুলামে বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া হবে। এ দিকে এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী বছরের (২০২৬ সালের) বই পরিমার্জনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই মধ্যে সেই কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি। অবশ্য এ বিষয়ে শিক্ষা গবেষকেরা বলছেন সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
সূত্র মতে এর আগে আওয়ামী লীগ প্রবর্তিত বিতর্কিত কারিকুলাম ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন শুরু হয়। যদিও শুরু থেকেই কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে সেই উদ্যোগ। গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরই চালু হওয়ায় নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে দেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার। ফিরে যায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নূর-ই-আলম সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের। উল্লেখ্য, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ডা: দীপু মনি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও শুরুর কথা ছিল। পরে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হলে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগস্ট নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করা হয়।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply