নবীগঞ্জে বানিয়াচং ও হবিগঞ্জ সদরের দায়েরকৃত দুটো হত্যা মামলায় দুই আসামি গ্রেফতার নিয়ে তোলপাড় চলছে। দুই মামলায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় আসামীযুক্ত ও গ্রেপ্তার নিয়ে মেগা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে বানিয়াচং উপজেলায় আলোচিত ৯ মার্ডার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে বদলি করা হয়েছে।
৩ ও ৪ আগষ্ট হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু জাহির কর্তৃক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিরোধ কর্মসূচীতে অংশ নেয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আলোচিত ১ নেতা, সাবেক ২ কাউন্সিলর, আবু জাহির সহচর সক্রিয় দুই দুসর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। পক্ষান্তরে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজিমুদৌলার পিতার দায়েরকৃত একটি মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন লাভের পর কারাগার থেকে মুক্তির মুহুর্তে আটক হন নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল জাহান চৌধুরী।
এছাড়াও স্থানীয় জামায়াত নেতার দায়েরকৃত একটি মামলায় আটক হলেও জামিন মুক্ত হন তিনি। সমালোচনার মুখে জামায়াতের ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০২২ সালের ২১ মে আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগকারী দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি ও উপজেলা পরিষদের সদ্য বিলুপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল জাহান চৌধুরীকে শোন এরেষ্ট দেখায় পুলিশ।
এনিয়ে বিস্তর বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। সাইফুল পরিবারের দাবি, স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জের হিসেবে যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের বিশেষ একটি চক্র দুটো মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছে। রাজনীতি নিস্ক্রিয় সাইফুলকে চলতি বছরের ৪ ও ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বানিয়াচং উপজেলার আলোচিত ৯ মার্ডার এবং হবিগঞ্জ জেলা শহরে নিহত ছাত্র মোস্তাক হত্যা মামলায়ও শোন এরেষ্ট দেখানো হয়। দুটো মামলায় আসামী হিসেবে এজহারে তার নামই ছিলনা।
প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ দুটি হত্যা মামলায় ঘটনার সময় সন্দেহভাজন আসামীদের অবস্থান জানার সহজ মাধ্যম হতে পারে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল সীম। গুগলের সাহায্যে নিবন্ধিত সীমের গ্রাহকের অবস্থান সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। অহেতুক কাউকে হয়রানী করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদদের বিদেহী আত্মাকে কষ্ট দেয়া দুঃখজনক। উপজেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বিলুপ্ত সংসদের সাবেক এমপি এডভোকেট আবু জাহির এবং সাবেক এমপি আওয়ামীলীগ নেতা শাহ নওয়াজ গাজী মিলাদের সাথে বিরোধের জের হিসেবে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি নেন সাইফুল জাহান চৌধুরী।
এনিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দলীয় পদত্যাগ ও মামলা সূত্রে প্রকাশ, ২৮ নভেম্বর উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক নাজিমুদ্দৌলা চৌধুরীর পিতা কর্তৃক দ্রæত বিচার আইনে দায়েরকৃত মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন সাইফুল জাহান চৌধুরী। শুনানি শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ১৩ আসামীর মধ্যে সাইফুলসহ ৬ জনের জামিন নামঞ্জুর করেন। ২৯ নভেম্বর শাশুড়ির মৃত্যুতে শ্যালক আলমগীরসহ প্যারুলে মুক্তি পেয়ে জানাযায় অংশ নেন তিনি।
১ ডিসেম্বর আদালতে ৬ জনের জামিন মঞ্জুর হয়। এর মধ্যে ৪ জনকে মুক্তি দেয়া হলেও শ্যালক আলমগীর চৌধুরী ও সাইফুল জাহান চৌধুরীকে হবিগঞ্জের মুস্তাক হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে ৫ ডিসেম্বর বানিয়াচংয়ে ৯ মার্ডার মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটকের আবেদন করেন এসআই জাহাঙ্গীর আলম। মামলা বাণিজ্যের অভিযোগের কারণে তাকে বদলী করা হয়েছে। ওই মামলায় নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই আমিনুল মামলাটি তদন্ত করছেন।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ৫ আগষ্ট পটপরিবর্তনের পরও থানা পুলিশকে সহায়তাসহ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করেন সাইফুল জাহান চৌধুরী। পটপরিবর্তনের ক্রান্তিকালে ব্যাবসায়িদের পাশে থেকে সক্রিয় সহযোগিতা করেন নবীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল।
এনিয়ে নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু বলেন, স্থানীয় একটি অশুভ চক্র উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিরোধের জের হিসেবে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি দুষ্কৃতকারীদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান। এদিকে, পুলিশ ও আইনজিবী তদন্তনাধীন মামলার সর্বশেষ কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply