সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে মধ্যরাতে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্ষুপ্ত জনতার তোপের মুখে পড়েন এ নারী সাংবাদিক। পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
ডিবি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে প্যানিক অ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়াসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় ৪৯৭ ধারায় পরিবারের জিম্মায় মুন্নী সাহাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এজন্য চার মামলায় আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন নেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অসুস্থতার কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় মুন্নী সাহাকে রাতে তার পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
মুন্নী সাহাকে আটকের বিষয়টি তখন নিশ্চিত করেন তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, ‘জনতা ওই নারী সাংবাদিককে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।’ পরে তেজগাঁও থানা থেকে মুন্নী সাহাকে রাজধানীর মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়।
এদিকে মধ্যরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। সেসব মামলায় তাকে আত্মসমর্পণ করে কোর্ট থেকে জামিন নিতে হবে। যেহেতু তিনি প্যানিক অ্যাটকের শিকার এবং নারী সাংবাদিক। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাকে ছাড়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিন নেয়ার শর্তে ৪৯৭ ধারায় পরিবারের জিম্মায় গ্রেফতার মুন্নী সাহাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান বলেন, কারওয়ান বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে পড়ার পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়।
উল্লেখ্য, টেলিভিশন সাংবাদিক ও টকশো সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত মুখ মুন্নী সাহা। তিনি আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজে দীর্ঘ সময় কাজ করার পর একুশে টেলিভিশনে যোগ দেন। এরপর যান এটিএন বাংলায়। সেখান থেকে এটিএন নিউজে যোগ দেন তিনি। ২০২৩ সালের ৩১ মে তাকে এটিএন নিউজ থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে ‘এক টাকার খবর’ নামে একটি প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা নিহতের ঘটনায় সাংবাদিক মুন্নী সাহার বিরুদ্ধে মামলা হয়। গত ৬ অক্টোবর মুন্নী সাহার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে মুন্নী সাহার আমানত, ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, ফরেন ট্রেড, এক্সচেঞ্জ, লকার ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের তথ্য চাওয়া হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহতের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ওই মামলা করেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো: কামরুল ইসলাম।
সেই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সদস্য এবং পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের সাথে যে সাতজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়, তাদের একজন মুন্নী সাহা।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply