জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পদায়নপ্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। একদিনের ব্যবধানে ১৩ ডিসির নিয়োগে পরিবর্তন করায় পদায়নপ্রক্রিয়াতে গলদ রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। গত দুই দিনে দেশের ৫৯ জেলা প্রশাসক পদায়ন করা হয়। মাঠপ্রশাসনে দায়িত্ব পালনকালে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় পদায়নের পর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আওয়ামীপন্থী দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের দেয়া দক্ষ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে ৯ জেলা প্রশাসকের পদায়ন বাতিল করা হয়। রদবদল করা হয় চারটি জেলার জেলা প্রশাসককে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর প্রশাসনে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক পরিবর্তনের জন্য ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের ৬১৮জন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর গত দুই দিনে ৫৯ জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়।
নিয়োগের প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজন শেখ হাসিনার শাসনামলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কাজ করেছেন। আটজন রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। যদিও এই দুই মন্ত্রণালয়ে পদায়নের সময় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কঠিনভাবে পর্যালোচনা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক না হলে এই দুই মন্ত্রণালয়ে পদায়ন পাওয়া সম্ভব হয় না। অথচ স্বৈরাচার পতনের পর সেই সরকারের সমর্থক ও সুবিধাভোগী এই ১৬ কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীর একান্ত সচিব, স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতির মেয়ে ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নেতার স্ত্রীকে জেলা প্রশাসকে পদায়ন করা হয়েছে। বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে শেখ হাসিনার অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করেছেন এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন কয়েকজন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে এই পদায়নপ্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এটি অনুসরণ করলে আগের সরকারের ফিটলিস্টে ছিলেন তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ফিটলিস্টে আসার কথা না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, জেলা প্রশাসক পদায়নের জন্য যে তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হচ্ছে তা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে পরিবর্তন করা হচ্ছে। সেখানে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
৯ ডিসির নিয়োগ বাতিল : সদ্যনিয়োগ পাওয়া ৯ জেলার ডিসি পদে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। সিলেটের পি কে এনামুল করিম, লক্ষ্মীপুরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব সুফিয়া আক্তার রুমী, জয়পুরহাটে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো: সাইদুজ্জামান, কুষ্টিয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারহানা ইসলাম, রাজশাহীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনির হোসেন হাওলাদার, শরীয়তপুরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব আব্দুল আজিজ, দিনাজপুরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোবাশশেরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে আরপিএটিসির উপপরিচালক মনোয়ারা বেগমকে ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের ডিসি সাবেত আলী পঞ্চগড়ে, নীলফামারীর ডিসি শরিফা হক টাঙ্গাইলে, নাটোরের ডিসি রাজীব কুমার সরকারকে লক্ষ্মীপুরে এবং পঞ্চগড়ের ডিসি নায়িরুজ্জামানকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে।
বঞ্চিতদের বিক্ষোভ তদন্তে কমিটি গঠন : ডিসি নিয়োগ ইস্যুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানায়, মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে দেশের ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল করেন উপসচিব পর্যায়ের একদল কর্মকর্তা।
এদিন দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কে এম আলী আযম ও জিয়াউদ্দিনের কক্ষে হট্টগোল করেন তারা। বিকেল ৩টায় বঞ্চিত কর্মকর্তারা এ দুই যুগ্মসচিবের কক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখেন। কর্মকর্তাদের রোষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে যুগ্মসচিব আলী আযম পাশের রুমের টয়লেটে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর সিনিয়র কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে তাকে বের করে আনেন। পরে দুই কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে বিকেল ৫টার দিকে প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন বঞ্চিতরা। বৈঠকে দুই সচিব ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের আশ্বাস দিয়ে জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলবেন এবং সমাধানের চেষ্টা করবেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply