1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন

সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু

জয়নুল আবেদীন
  • মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে
ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতে হাসিনা!

কচ্ছপের গড় আয়ুর চেয়ে অর্ধেকেরও কম আমাদের গড় আয়ু। তারপরও ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’ অনন্তকাল বাঁচার জন্য ঘর বাঁধি। যারা একবার ক্ষমতার স্বাদ ও সম্পদের সন্ধান পায় তারা এই ‘সুন্দর ভুবন’ ছাড়ার কথা ভাবতে পারে না। এ বিশ্বাস থেকে প্রাচীন মিসরের রাজা-বাদশাহরা প্রাণহীন দেহ বিশেষ পদ্ধতিতে (মমি করে) রেখে দিত অনন্তকালের জন্য। নিজের অনন্ত সুখ, সম্পদ আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মন দিত আপনজনের দিকে। এই আপনজনের চির সুখ নিশ্চিত করতে বংশানুক্রমিক ক্ষমতা ধরে রাখার আইন ও পদ্ধতি। তা করতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে কেউ কেউ হয়ে ওঠে স্বৈরাচার, ক্ষোভ জমে সাধারণ মানুষের মনে।

প্রকৃতি এখন আর প্রাণহীন সর্বংসহা নয়, গণিতের নিয়মে হিসাব ঠিক মিলিয়ে দেয়। নির্ভুল গণিতের অংশ হিসাবে স্বৈরাচারের হিসাবটাও মিলে যায়। উত্থান যত বড় পতন তত ভয়ঙ্কর। প্রমাণ ফরাসি বিপ্লব। প্যারিসের লুভ্যর বিশ্বের বৃহত্তর মিউজিয়াম। এক সময় সম্পূর্ণ মিউজিয়াম ছিল রাজপ্রাসাদ।

গ্রিসের রাজধানী এথেন্স গণতন্ত্রের সূতিকাগার হলেও গণতন্ত্র সর্বজনগ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা পায় ১৮৬৩ সালে। আমেরিকায় তখন গৃহযুদ্ধ চলছিল। গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের দুই মিনিটের ভাষণ ইতিহাস খ্যাত গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস স্পিচ. অব দ্য পিপল বাই দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য পিপলের অর্থ হলো- গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য। দুই মিনিটের কথা গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। এ মূলমন্ত্র টেম্পারিং বা বিকৃত যারা করে তারা, ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু আগুনে পুড়িয়া গেল’-এর শিকার হয়।

কয়েক দিন আগে ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলাম, ‘ভাষা এক হলেও নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বাঙালি সংকর জাতি। তাই অধিকাংশ রিঅ্যাকটিভ মানসিকতার। প্রো-অ্যাকটিভ মানসিকতা ছাড়া কোনো জাতি বা ব্যক্তি উন্নতি করতে পারে না। আধুনিক ও সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্যে মোট রাজনৈতিক দল দু’টি। আয়তনের দিক থেকে বিশে^র তৃতীয় বৃহত্তর দেশ আমেরিকা ৫০টি রাষ্ট্র নিয়ে ৩৭.৯ লাখ বর্গমাইল। আমেরিকায়ও রানৈতিক দল দু’টি। ৫৬ হাজার বর্গমাইলবিশিষ্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল (৩ সেপ্টম্বর ২০২৪ পর্যন্ত) ৫২টি। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল আমাদের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণেও হতে পারে। নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হয়তো গণতন্ত্রের ছোট্ট সংজ্ঞার সহজ অর্থটিও আমরা জানি না, কিংবা মানি না অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে জনগণকে তাদের হক থেকে বঞ্চিত করি।

গত ২১ জুলাই ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল- ‘ডিসটারবিং ইন ঢাকা’। সম্পাদকীয়ের মূল কথা ছিল, ‘আজকের বাংলাদেশ আসলে গণতন্ত্রের মৌলিক চেকবক্সগুলোতে টিক দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেগুলো হলো- একটি কার্যকরী বিরোধী পক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন এবং নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা।’ গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত করার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের স্বাধীন দেশের বিগত ইতিহাস। শেখ মুজিবুর রহমানের আগমন থেকে শেখ হাসিনার প্রস্থান পর্যন্ত (শেখ হাসিনা সময়কাল বাদে) গণতন্ত্র যে অবস্থায় ছিল।

দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি দেশে আসেন। তাকে প্রাণঢালা সর্বধনা জানাতে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল লাখো মানুষ। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ লোক ছিল। সে দিনের ভাষণে তিনি সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতাপূর্ণ হবে যদি এ দেশের মানুষ পেট ভরে খেতে পায়, যুবকরা চাকরি পায়, মা-বোনেরা শান্তি পায়, আজ থেকে বাংলাদেশের যেন চুরি ডাকাতি না হয়, লুটতরাজ না হয়। তারপর কী মনে করে ১৯৭৫ সালে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ (বাকশাল) গঠন করেন। অনেকের মতে, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েম কিনা গণতন্ত্র নিধনে প্রথম আঘাত। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে শেখ মুজিব সপরিবারে হত্যা হন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। সে বছর নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে দু’টি বড় অভ্যুত্থান ঘটে। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মওদুদ আহমদ একটি বই লিখেছিলেন। বইটির ভূমিকায় লিখেছিলেন, ‘পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে দেখা একটি সরকারকে উৎখাত করা সহজ হলেও ক্ষমতা দখলের পর শাসক হিসেবে বৈধতা অর্জন সহজ নয়। এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, স্বাধীনতা লাভের আগে জাতীয়তাবাদী নেতারা উদারনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তীতে নিজেরা প্রত্যাখ্যান করেন।’

রাজনীতির এক চরম জটিল অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ক্ষমতার দৃশ্যপটে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ঐতিহাসিক গওহর আলী মন্তব্য করেছিলেন, জিয়া সব কিছু নিয়ন্ত্রণে নিলেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। এ প্রবন্ধে তিনি আরো বলেছিলেন, সামরিক বাহিনী মূলত চার ভাগে বিভক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসারী ও রক্ষীবাহিনী থেকে আসা অংশ। জিয়ার অনুসারী, পাকিস্তান প্রত্যাগত অংশ ও জাসদপন্থী দল। সব সামলেই জিয়া এক ধরনের গতিশীলতা এনে প্রায়ই পাঁচ বছর দেশ শাসন করেছেন। প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার পাশাপাশি গণমুখী কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল খাল খনন কর্মসূচি। এই সময়ে তিনি দেড় হাজারেও বেশি খাল খনন করেছিলেন। যার অর্থনৈতিক সুফল এখন জাতি পাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাসসুল হক, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বিভিন্ন সময় জিয়াউর রহমানের সাথে কাজ করেছেন। দেশের প্রধান বাম দল বিজিপি খাল খনন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ড. ইউনূসকে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি শুরু করতে সহায়তা করেছিলেন জিয়া। জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী (বিএনপি) দল গঠন করেন। জিয়া তার রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সঙ্ঘটিত একটি সংঘর্ষের মধ্যস্থতা করতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জিয়াউর রহমান নিহত হন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসেন এশরাদ। এরশাদ কবিতাও লিখতেন। মঙ্গার দেশের লোক এরশাদ। ২০১৬ সালে গিয়েছিলাম এরশাদের জন্মভূমি রংপুর। রংপুর যাওয়ার কারণ, সকালে যখন হাঁটতে বের হই, তখন উত্তরবঙ্গ থেকে কয়েকটি বাস এসে থামে আমাদের এলাকায় লিংক রোডে। বাস থেকে যাত্রী নামার দৃশ্য চোখে পড়ে। অবস্থা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ওরা দীন-দরিদ্র ও খেটে খাওয়া যাত্রীদের চেহারা, পরিধেয় পরিচ্ছদ, সাথে থাকা পুঁটলি ও গাঁটরি-বোঁচকার মানুষ।

আমার বাসার কাজের মেয়ের বাড়িও উত্তরবঙ্গে। মঙ্গা এলাকাসহ তিস্তা দেখার আকাক্সক্ষা অনেক দিনের। ২৯ অক্টোবর রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড থেকে রওনা হয়ে পরদিন সকাল ৮টায় তিস্তা ব্রিজ। ব্রিজ পার হয়ে উত্তর পাশে দু’টি চায়ের দোকানে তিনজন নাশতা করলাম। ডাল দিয়ে তিন জোড়া পরোটা, সাথে চা ও পান। বিল মাত্র ৫৪ টাকা। আমি জানতে চাইলাম হিসাব ঠিক আছে কি-না। একজন পুলিশ জানায়, ঠিক আছে। পরোটা পাঁচ, চা তিন, পান তিন টাকা আর ডাল ফ্রি। ডাল ফ্রি দিয়ে মোটা পরোটা মাত্র পাঁচ টাকা! কী করে সম্ভব?

হ্যাঁ সম্ভব। কারণ, এখানে মানুষের মূল্যের চেয়ে টাকার মূল্য অনেক বেশি। সারা দিন কাজ করে একজন পুরুষ পায় ২০০ আর নারী পায় ১২০ টাকা। এখানে মেয়েদের কদর আরো কম। তাই, গরির বাবা-মা বিয়ের টাকা জোগাড় করতে শৈশবে কন্যাসন্তানদের বাসার কাজে লাগিয়ে দেয়। তিস্তা আসা-যাওয়ার পথে রাস্তার পশ্চিম দিকে পাকা ও উঁচু দেয়াল দেখেছি। দেয়াল যেন আর শেষ হয় না। আমার সাথে ছিল রংপুরের লোক। জানতে চাই এত বড় জমি কোনো হাউজিং কোম্পানির কি-না? জি না, এই জমি এরশাদ সাবের।

এরশাদের সম্পদ সম্পর্কে ২০১৫ সালে ১০ ডিসেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় আলী রিয়াজ বলেন, ‘১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সারা পৃথিবীতে ‘রিচেস্ট প্রেসিডেন্ট অব দ্য পুওরেস্ট কান্ট্রি’ (সবচেয়ে গরিব দেশের সবচেয়ে ধনী প্রেসিডেন্ট) পরিচয়ে পরিচিত হন। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে রাষ্ট্রক্ষমতা কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটি উদাহরণ হচ্ছে তৎকালীন সরকারপ্রধানের সাথে আন্তর্জাতিক ব্যাংক বিসিসিআই, বিশেষ করে এর প্রধান আগা হাসান আবেদির সম্পর্ক। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে ১৯৯১ সালের ২ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জেনারেল এরশাদ একটি দেশে বাংলাদেশের কূটনীতিক হিসেবে বিশাল বেতনে নিয়োগ দিয়েছিলেন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তাকে, যাতে ওই ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা হয়।’

এরশাদ ক্ষমতা ছেড়েছিলেন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। ৬ ডিসেম্বরকে রাজনৈতিক দলগুলো আলাদা আলাদাভাবে চিত্রিত করেছে। কেউ এটিকে বলে ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’, কেউ বলে ‘গণতন্ত্র দিবস’ কোনো কোনো রাজনৈতিক দল দিনটি ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।

১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাস। বিএনপি সরকার যখন একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তখন রাস্তায়। তখন আওয়ামী লীগ করছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে আন্দোলন। আন্দোলনের একপর্যায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সদস্যরা। পদত্যাগের রাস্তা বেঁছে নেন জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয় পার্টির এমপিরাও। বেকায়দায় পড়ে ক্ষমতাসীন বিএনপি। শুধু তাই নয়, হামলা শুরু হয় বিএনপির নেতাদের বাড়িতে ও অফিসে। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে বোমা নিক্ষেপসহ লাগাতার হরতাল শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারবিহীন নির্বাচন। ২৬ মার্চ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে পাস হয়।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস, ইরাকের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ, আত্মগোপনে লাদেন তোলপাড় সারা বিশ্বে। এর হাওয়া লেগেছিল বাংলাদেশেও। বাংলা ভাইয়ের উত্থান। ২০০৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের তৎকালীন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের শেষ ভাগে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।

সারা দেশে সহিংসতা হানাহানির অবসান ঘটে। রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদের জরুরি অবস্থা জারি করার মধ্য দিয়ে একই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন তিনি। বাতিল হয় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন। এরপর সেনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যার প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ফখরুদ্দীন আহমদ। এই সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে। দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আবার গণতন্ত্রে ফেরে দেশ।

২০০৭-এর ঘটনাকে বলা হয় ওয়ান-ইলেভেন। সেনা নিয়ন্ত্রিত অন্তর্বর্তী সরকার দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল। তা করতে গিয়ে সেই দুই বছর দল ভাঙা দল গড়ার খেলাও ওই সময় দেখে জনগণ। সেনানিয়ন্ত্রণে গঠিত সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে।

দুই নেত্রীকে জেলে নেয়ার সময় এক নেত্রী বলেছিলেন, কাজটা আপনারা ভালো করেননি। আমি শিগগির মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসব এবং তখন কাউকে ছাড়া হবে না। সেনানিয়ন্ত্রিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জাতির মঙ্গল করতে গিয়ে জড়িয়ে গেছে রাজনীতির জটিল জালে। এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর প্রথমে সাবেক উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন এবং পরে তখনকার সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালের ঘটনা প্রতিদিন মিডিয়াসহ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই দেখা যায়। ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। গত ২১ জুলাই ভারতীয় ইংরেজি পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গণতন্ত্রের মৌলিক চেকবক্সই ছিল না, বিরোধী দল ছিল জেল-হাজতে, নির্বাচনের নামে প্রহসন করে, বিচারব্যবস্থাকে অধীন করে যে সুখ পেয়েছে সে সুখ দেখে মনে পড়ে জ্ঞানদাসের, ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু/ আগুনে পুড়িয়া গেল, অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে/সকলি গরল ভেল’।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
adv.zainulabedin@gmail.com

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD