1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

এবার সংবিধানে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে স্থান দেয়া হউক

এম এ মজিদ, হবিগঞ্জ
  • মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে
এবার সংবিধানে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে স্থান দেয়া হউক

প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কতবার বাংলাদেশ সংবিধান কাটাছেড়া (সংযোজন বিয়োজন) করা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান যতবার সংশোধন করা হয়েছে বৃটেনের অলিখিত সংবিধানও এতোবার সংশোধন করা হয়নি। মাথায় একেক জনের একেকটি বুদ্ধি আসে আর সেটা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেয়ারও নজির রয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশেও সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে। সুবিধাজনক কারণে সংবিধান পরিবর্তিত হতেই পারে।

৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব বিএনপির কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ, আওয়ামীলীগের কাছে তা বিষফোড়া।১৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ, ফ্রিডম পার্টির (কর্নেল ফারুর রহমানের গড়া নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল) কাছে তা দ্বিতীয় স্বাধীনতা।১৭ মার্চ আওয়ামীলীগের কাছে সম্মানের দিন, ৩০ মার্চ বিএনপির কাছে পূজনীয় দিন। এভাবে একেকটি বিষয়, একেকটি দিন, একেকটি দল বা ব্যক্তির কাছে বিশেষ কারণে অকারণে পূজনীয় ও নিন্দনীয়।

৫ আগষ্ট ২০২৪ কে আমি দেখি ভিন্ন চোখে। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের একক কৃতিত্ব নয়। না জামায়াতের, না বিএনপির। যদিও বিএনপি জামায়াত সক্রিয় ভূমিকা পালন না করলে বিজয় দেখা কঠিন হয়ে যেত। ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি ছাত্রদল যুবদলের ১১৭জন, জামায়াত শিবিরের ৮৭ জন নেতাকর্মী নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। ১৫ বছর যাবত ভোটে, বিনা ভোটে, রাতের ভোটে ক্ষমতায় থাকা একটি দলকে একেবারে তছনছ করে দেয়ার মতো কোনো শক্তি বাংলাদেশে আছে বলেই আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। খুবই সাধারণ দাবী নিয়ে ছাত্ররা মাঠে নামে। ২০১৮ সালে একই দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ভিপি নুরুল হক নুর।

কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তিনি হলেন ডাকসুর ভিপি।২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বৈষম্যের সুবিধা নেয়া শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়েছে। যেমন অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, পাহাড়ী জনগোষ্টির সম্পৃক্ততা ছিল, মেয়েরা যারা ১০ শতাংশ কোটার সুযোগ পেয়ে আসছিল তারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দারা, যারা জেলা কোটা হিসাবে সুযোগ পেয়ে আসছিল তারা আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। অনেক সময় দেখা যায় ঘরের পুত্র সন্তান কোনো একটি দাবী নিয়ে আন্দোলন করছে তো একই ঘরের কন্যা সন্তানদের কোনো খবরই ছিল না। ছাত্র আন্দোলনে এ দৃশ্য দেখা যায়নি, ভাই আন্দোলনে গিয়েছে, বোনও তাতে যোগ দিয়েছে।

আবার দেখা যায় শিক্ষার্থী ভাই বোন দাবী নিয়ে মাঠে মিছিল করছে তো তাদের মা বাবারা বিষয়গুলো ভালোভাবে নিচ্ছেন না। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে এ দৃশ্যও দেখা যায়নি। বরং ছেলে মেয়েদের আন্দোলনে সাহস যুগিয়েছে তাদের মা বাবারা। ছেলের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে, মা পিঠ চাপড়ে সন্তানকে বলছেন- সাহস হারাবি না, আমি আছি, মিছিল মিটিং করে ক্লান্ত শ্রান্ত সন্তানকে ভালো কিছু খাইয়ে পরের দিন মিছিলে পাঠিয়েছেন মা। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি-সন্তান পরের দিনের মিছিলে যাবে, রাতে তাহাজ্জুতের নামাজে দাড়িয়ে সন্তানের জন্য চোখের পানি ফেলেছেন মা। যারা পরের দিন মিছিল মিটিং এ যাবে তারাও রাত জেগে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েছে। ওযু করে মিছিল মিটিং এ গিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

তারা জানতো হয়তো ঘর থেকে এ যাওয়াই শেষ যাওয়া, প্রিয়জনদেরকে এ দেখাই শেষ দেখা। গুলিতে নিহত পুত্রকে গোসল করাতেও রাজি হননি বাবা। বাবার দাবী তার পুত্র শহিদ হয়েছেন, তার গোসলের দরকার নাই, আল্লাহর কাছে সে শহিদ হিসাবে, রক্ত ঝড়ছে এমন অবস্থায়ই উঠে দাড়াবে। এমন একটি আন্দোলন ব্যর্থ হতে পারে না, এমন একটি আন্দোলনকে হেলাফেলা করা চলে না। আজ থেকে ৫০ বছর ১শ বছর পরেও যাতে কেউ স্বৈরাচারী না হয় তজ্জন্য এসব ইতিহাস মানুষকে জানাতেই হবে। সংবিধানে ছাত্র আন্দোলনের কৃতিত্বকে স্থান দিতেই হবে। ছাত্র আন্দোলনের ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের ইতিহাস লিখতেই হবে।

রাজধানী থেকে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কাদের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন সুসংগঠিত হয়েছে তার একটা লিখিত ইতিহাস দরকার। যারা পত্রিকায় লিখে, টিভিতে দেখিয়ে, মুক্ত আলোচনায় ভূমিকা রেখে ছাত্রদের সাহস যুগিয়েছেন তাদের অবদানও লিখে রাখা দরকার। এসব বিষয় আজ হয়তো মূল্যহীন কিন্তু ভবিষ্যতে তার ওজন অনেক হতে পারে।

এম এ মজিদ
আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ।
০১৭১-৭৮২২৩২

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD