কোনো ঔষধেই আর কাজ হচ্ছে না। না নির্যাতনে, না আদর সোহাগে। না জেলে দিয়ে, না ছেড়ে দিয়ে। না বন্ধের দিনে কোর্ট বসিয়ে, না রাতের আধারে জেলের তালা খুলে দিয়ে। দুধ কলা দিয়েও শিক্ষার্থীদের আর পোষ মানানো যাচ্ছে না। কথায় কথায় আন্দোলনকারীদের বিশেষ গোষ্টির ট্যাগ লাগিয়েও মানুষকে গিলানো যাচ্ছে না।
সব মানলেন, তাহলে প্রাণ ঝড়ল কেন ৩২ শিশুসহ কয়েকশ মানুষের? আবু সাঈদ হত্যায় ২ পুলিশকে সাসপেন্ড করলেন, তাহলে ২৬৬ জন (পত্রিকায় তালিকা প্রকাশ) হত্যাকারীদের কি দুধ কলা দিয়ে পোষবেন? ছাত্র আন্দোলন একটি বিশাল বিষয়। খোজ নিয়ে দেখেন এই আন্দোলনে গুলি ছুড়া কর্মকর্তার ছেলে মেয়েও আছে, এই আন্দোলনে মন্ত্রী এমপির ছেলে মেয়েও আছে। ইতিমধ্যে সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলের পোষ্ট ভাইরাল হয়েছে।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলেছেন অনেকে। কেউ কি জোরালোভাবে দাবী করেছে ঘটনা তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে? কেউ কি দাবী করেছে- জাতিসংঘকে তদন্তে সম্পৃক্ত করতে হবে? অথচ তা করা হচ্ছে। এসবে তো কোনো কাজ হচ্ছে না।
ছাত্ররা যদি আজ ঘরে ফিরে যায় তাহলে নিহত ৩২ শিশুসহ ২৬৬ জনের (প্রতিদিনই হত্যার এ তালিকা বাড়ছে) পরিবারের কাছে কি জবাব দেবে তারা?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দেশ-বিদেশের যত মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করেছে তন্মধ্যে জাতীসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন বিশ্বকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে। ইউনিসেফের দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক সঞ্জয় উইজে সেকেরা জাতীসংঘে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন যে, বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে ৩২ শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
এ প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরাসহ বিশ্বের বড়বড় মিডিয়া এবং বাংলাদেশের প্রায় সকল মিডিয়া ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। বিবিসি টপ আইটেমে সংবাদটি প্রকাশ করেছে “ ডজেন্স অব চিল্ড্রেন কিল্ড ইন বাংলাদেশ প্রোটেস্ট” শিরোনামে। তাছাড়া বিবিসি “ ড্রেন্স্ড ইন ব্লাড- হাউ বাংলাদেশ প্রোটেস্ট টার্ন্ড ডেডলী” এবং হোয়াই ইজ দ্যা বাংলাদেশী গভর্ণমেন্ট ফেসিং সো মাচ এ্যাংগার” শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। ৩২ শিশুর হত্যার বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন- সরকারের কাছে ৩২ শিশু হত্যার কোনো তথ্য নেই।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন “ ইউনিসেফ কোথা থেকে এসব তথ্য পেয়েছে?”। মিষ্টার উইজে সেকেরা বলেছেন “ চিল্ড্রেন মাস্ট বি প্রোটেক্টেড এ্যাট অল টাইমস”। কিন্তু বাংলাদেশ শিশুদের জন্য নিরাপদ স্থান হিসাবে নেই। বাবার কুলে, বারান্দায়, ছাদের উপরে, রাস্তায় শিশুরা গুলিতে নিহত হয়েছে। বিবিসি বলেছে- আইন শৃংখলা বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, গুলি ছুড়ার কারণে অনেক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তা অস্বীকার করে বলেছে- এসব বিরোধী দলগুলোর অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
চরমভাবে মানবাধিককার লংঘন হওয়ায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমেরিকার ২২জন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেনের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ইউনিসেফের প্রতিবেদন, আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ২২ সিনেটরের চিঠি, জাতিসংঘের উদ্বেগ, চীন ভারতের নীরবতা, মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ, ইউরোপিয় ইউনিয়নের নজরদারী বাড়ানো এসবকে হেলাফেলা মনে করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশীদের নাক গলানো কারো জন্য সুখকর বা সম্মানের নয়।
এম এ মজিদ
আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply