এম এ মজিদ : দেশে একদিনে একে একে ৬ ছাত্রকে খুন করা হয়েছে। তাদের উচ্ছাভিলাশ বলতে এতোটুকুই, “আমরা রাত জেগে পড়ব, মেধার জন্য লড়ব, অথচ চাকুরী পাবে অন্যরা, এমন বৈষম্য মানি না”। তারা ক্ষমতার মসনদে বসার জন্য আন্দোলন প্রতিবাদ করেনি। তারা কেউ এমপি মন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়েও নেই।
দেশে ঝেঁকে বসা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও নেই। গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনেও নেই। তাহলে ক্ষমতাবানরা কেন তাদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছেন? এমন তো কোনো সংবাদ আমরা দেখিনি যে, প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করেছে, কোনো কর্মকর্তাকে দিগম্বর করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে, সচিবালয়ে যাতায়াতকারী কোনো মন্ত্রী এমপির গাড়ি আটকে দিয়েছে। তারপরও যদি শিক্ষার্থীদের এমন পরিনতির শিকার হতে হয়, তাহলে বলতেই হবে-“ যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তারা ভালোই করছে”।
আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, যারা কোটায় চাকুরী পেয়েছেন তারা তা গোপন করতে যথেষ্ট চেষ্টা করে থাকেন। অতি প্রয়োজনীয় না হলে তারা তা প্রকাশই করতে চান না। যদি তা সম্মানের হতো তা হলে কেন তারা কোটায় নিয়োগ পেয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন না? কোটায় নিয়োগ প্রাপ্তদের অনেকেই সহকর্মীদের ভালো বন্ধু হতে পারেননি। মেধায় নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছে তারা সব সময় “মেধাহীন, করুনার পাত্র” হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকেন।
কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তরাও নিজেরা একটা মানসিক অশান্তিতে থাকেন, সবসময় লুকোচুরি করেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তরা স্বাভাবিক আচরণ পাননি বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। “ আপনি করুনায় বিশেষ সুবিধাভোগকারী” বিষয়টিই যেমন কেমন লাগে।
আমাদের সংবিধানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানে স্বীকৃত একটি বিষয় যে, অনগ্রসর কোনো জাতীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পোষ্য কোটার আমি ঘোর বিরোধী। আপনি সরকারী চাকুরী করবেন, আপনার সন্তানরা কেন সেই সুযোগ নিবে? আপনার সন্তানকে কেন অনগ্রসর জাতী হিসাবে গন্য হতে হবে? জেলা কোটাও বাতিল হওয়া দরকার। এখন সব জেলাই অগ্রসর।
অনগ্রসর বলতে কিছু নেই। নারী কোটা তো আরও আগে বাতিল হওয়া জরুরী। আপনি যদি কোনো নারীকে বলেন- আপনারা সমাজের অনগ্রসর একটি অংশ, তাহলে মাইরও খেতে পারেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আজীবন সম্মানের চোখে দেখতে চাই, কিন্তু তারাও তো মেধাহীন একটি জাতী চান না। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রতি মাসে ১ম শ্রেণীর (৯ম গ্রেড) কর্মকর্তাদের বেতনের প্রায় সমতূল্য অর্থ সম্মাননা দেয়া হচ্ছে, বলতে পারবেন কেউ এর প্রতিবাদ করেছে? সুযোগ থাকলে আরও দেন, কেউ প্রতিবাদতো করবেই না, বরং সমর্থন জানাবে।
আপনি একটি ক্রিকেট লীগ জিতে আসা খেলোয়াড়দের কোটি কোটি টাকা দেন, বাড়ি গাড়ি সবকিছু দেন। একটি দেশকে জিতিয়ে আনা, বিশ্বের বুকে মানচিত্র এনে দেয়া বীর সেনানীদের আরও বেশি দেন, কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু তাদের সন্তানদেরকে কেন কোটার মতো একটা সিস্টেমের ভেতরে আনতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কেন সমাজের অনগ্রসর অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে? তারা তো সমাজের, দেশের, সবচেয়ে অগ্রসর অংশ। আমার কাছে মনে হয় প্রতিবন্ধী এবং উপজাতীয়রা কোটার সুবিধা পেতে পারে।
প্রতিবন্ধীরা ইচ্ছা করলেও স্বাভাবিক মানুষের সাথে দৌড়ে পারবে না। তারা কেউ নিজে থেকে প্রতিবন্ধী হয়নি। তাদেরকে এগিয়ে নেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় হচ্ছে উপজাতী। উপজাতীয়রা জন্মগতভাবে খাটো হয়। ইচ্ছা করলেই তারা বিশেষ বাহিনীতে যোগদান করতে পারবে না। অন্য আরও অনেক কারণও রয়েছে। তাছাড়া আর কোনো শ্রেণীর বা সমাজের কোটার সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে হবে তা বিবেচনার সুযোগ কম। সর্বত্র মেধার জয় হউক।
লেখক: এম এ মজিদ
সাংবাদিক ও আইনজীবি
হবিগঞ্জ, ১৭ জুলাই ২০২৪
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply