এম এ মজিদ : যে কোনো নদীর উৎপত্তিস্থল একটি আকর্ষণীয়। আমরা নদী দেখি, নদীর গথিপথ দেখি, কিন্তু উৎপত্তিস্থল দেখি না। কোথা থেকে শুরু কোথায় গিয়ে শেষ তাও জানি না। একেকটি নদীর উৎপত্তিস্থল হতে পারে একটি নির্দিষ্ট জায়গা। কিন্তু একই স্থান থেকে তিনটি বড় নদীর সূচনা বিরল।
সুরমা, কুশিয়ারা এবং বরাক নদীর উৎপত্তিস্থল সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরি ইউনিয়নে অবস্থিত তিন নদীর মোহনা। স্থানীয়রা তিন নদীর মোহনাকে তি-গাঙ্গা হিসাবেও ডাকেন। এর পাশেই রয়েছে গায়েবী দিঘি।
বরাক নদীঃ বরাক নদীটি ভারত থেকে আসা একটি দীর্ঘ নদী। ভারতের মনিপুর রাজ্যের আঙ্গামীনাগা পাহাড়ের ৩শ ফুট উচু থেকে বরাক নদীর সৃষ্টি। সেটি নাগাল্যান্ড, মনিপুর, আসাম, মিজোরাম রাজ্যের উপর দিয়ে এসে বাংলাদেশের জকিগঞ্জের আমলশীধের কাছে এসে সংযুক্ত হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারার সাথে। বরাক নদীটি ভারতের অংশে ৫৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক খরস্রোতা নদী।
কুশিয়ারা নদীঃ কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তিস্থল জকিগঞ্জের বারঠাকুরিয়া ইউনিয়ন ও আমলশীধ এর মধ্যবর্তী স্থানে। ১৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশিয়ারা নদীটি জকিগঞ্জ থেকে সিলেটের বুক ছিড়ে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। কুশিয়ারা নদীটি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের দিলালপুরে গিয়ে মেঘনায় মিলিত হয়। কুশিয়ারার অনেক শাখা নদী রয়েছে। সেগুলো হল- বিবিয়ানা, ধলেস্বরী, কালনী ইত্যাদি।
সুরমা নদীঃ বাংলাদেশের সিলেটের জকিগঞ্জের আমলশীধ হয়ে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর দৈর্ঘ্য ২৪৯ কিলোমিটার। ইবনে বতুতা সুরমা নদী দিয়ে একাধারে ১৫ দিন যাতায়াত করেছেন। সুরমা নদীটিও ভৈরবের কাছে গিয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। জকিগঞ্জের আমলশীধ থেকে বরাক নদী দুই দিকে প্রবাহিত হয়।
উত্তর দিকে বয়ে যাওয়া নদীটি সুরমা এবং দক্ষিন দিকে বয়ে যাওয়া নদীটি কুশিয়ারা। সুরমা, কুশিয়ারা মেঘনায় মিলিত হয়েছে। আর মেঘনা মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। বলা যায় জকিগঞ্জের আমলশীধ থেকে সৃষ্টি হওয়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানিই গিয়ে পড়ছে বঙ্গোপসাগরে। সুরমা ও কুশিয়ারা যে নদী থেকে সৃষ্টি সেই বরাক নদীটি সৃষ্টি হয়েছে মূলত ভারতের ৩শ ফুট উচু আঙ্গামীনাগা পাহাড় থেকে।
তিন নদীর মোহনায় কিভাবে যাবেনঃ সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে চারখাই হয়ে কালিগঞ্জ বারঠাকুরি ইউনিয়ন। সিলেট থেকে দুরুত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। বিআরটিসির বাসে কিংবা জকিগঞ্জের স্থানীয় গেইটলক বাসে আপনি যেতে পারবেন বারঠাকুরি ইউনিয়নের তিন নদীর মোহনার খুব কাছাকাছি। জকিগঞ্জ থেকে পূর্ব দিকে এর দুরুত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। তিন নদীর মোহনার পাশেই বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে।
তিন নদীর মোহনা থেকে ভারতের বিএসএফ আর টহল বাহিনীকে আপনি দেখতে পারবেন। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর এপার ওপার দুই পাড়েই বাংলাদেশী জমি রয়েছে। সেখানে কৃষকরা নির্ধিদ্বায় তাদের জমি চাষাবাদ করতে পারে। নদীর কুল ঘেষে অনেক সবজি চাষাবাদ হয়। আপনি ইচ্ছা করলে স্বল্পমূল্যে লাউ, সিম, টমেটো, কাচামরিচ, বেগুন, মুলা ইত্যাদি সবজি নিজের হাতে তুলে নিয়ে আসতে পারবেন।
ভারতের ওয়াচটাওয়ার গুলো থেকে প্রতিনিয়ত নজরদারী করা হয়ে থাকে। নিরাপত্তার কারণে আপনি বিজিবি ক্যাম্পের কোনো ছবি তুলতে পারবেন না। বেশি সময় অবস্থানের তেমন কিছু নেই সেখানে। উল্লেখ্য, চাদপুরেও তিন নদীর মোহনা রয়েছে। বর্ষার মওসুমে চাদপুরের তিন নদীর মোহনায় থাকে ভয়ংকর রুপ।
সেখানে প্রায়ই জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি আমি এবং আমাদের গ্রামের ছোট ভাই জকিগন্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুল মোমিন মুবিন জকিগন্জের তিন নদীর মোহনা ঘুরে আসি, দিনের শেষ মুহুর্তে সেখানে খুব ভালো লাগে
এম এ মজিদ, আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply