1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
ভারতে মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে বিধবা বিয়ের সিদ্ধান্ত - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

ভারতে মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে বিধবা বিয়ের সিদ্ধান্ত

বাংলা কণ্ঠ ডেস্কঃ
  • শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে
ভারতে মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে বিধবা বিয়ের সিদ্ধান্ত
বিধবা বিয়ের সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে, বিরোধিতা করেনি কেউ - ছবিঃ বিবিসি

হিন্দু বিধবা বললেই হয়তো সাদা কাপড় পরা গয়নাগাটিহীন, কিছুটা রুগ্ন চেহারার নারীদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে চলেছে ভারতের মহারাষ্ট্রের কোলাপুর জেলার একটি গ্রামে।

জেলার হেরওয়ার গ্রামে স্থানীয় বিধবাদের এখন থেকে প্রচলিত কঠোর রীতি-নীতি মানতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে। মজার ব্যাপার হলো, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাপটের ভেতরও ওই গ্রামের কেউই করেনি এমন একটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা।

পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, বিধবারা দ্বিতীয় বিয়ে যেমন করতে পারবেন, তেমনই রঙ্গিন পোষাক পরা বা সাজগোজ করায় থাকবে না আর কোনো বাধা।

বিধবাদের নিয়ে কী কী সিদ্ধান্ত নিল মহারাষ্ট্রের এই গ্রাম?

হেরওয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত ঠিক করেছে যে, এখন থেকে গ্রামের কোনো বিধবা নারীর দ্বিতীয়বার বিয়েতে কোনও বাধা থাকবে না। বিধবারা গলায় হার বা কপালে টিপ বা হাতে চুড়ি যেমন পরতে পারবেন, তেমনই রঙিন পোশাক পরবেন, আর তাদেরকে কোনো শুভ অনুষ্ঠান থেকে দূরে রাখা হবে না।

গ্রামের বাসিন্দা এক নারী বৈশালী পাতিল ৯ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পরে বিশেষ করে যখন কোনো কাজে বাইরে বেরুতে হয়, সেটা হয় সব থেকে কষ্টের সময়। পোশাক-পরিচ্ছদ বেছে নেয়া থেকে শুরু করে পুরুষমানুষদের কটু চোখের দৃষ্টি এড়ানো– সবই সহ্য করতে হয় আমার মতো নারীদের।’

‘কোনো শুভ কাজে হয়তো আমাকে ডাকা হয়েছে, সেখানে গিয়ে কথা শুনতে হয় যে, বিধবারা ওরকম অনুষ্ঠানে গেলে ওই পরিবারটির কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকবার পড়তে হয়েছে আমাকে,’ বলেছেন পাতিল।

তার কথায়, গ্রাম পঞ্চায়েত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে তার মতো বিধবারা এমনসব পরিস্থিতি থেকে এবার মুক্তি পাবে। এসব নিয়ম আর আচার দীর্ঘকাল ধরে হিন্দু সমাজের সিংহভাগ পরিবারে কঠোরভাবে মানা হয়ে আসছে।

‘স্বামীই বলে গিয়েছিলেন যেন বিধবার বেশ না নিই’
হেরওয়ার গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মানিক কালাপ্পা নাগাভেও বিধবা হয়েছেন বছর পনেরো আগে। কিন্তু তার স্বামী মৃত্যুর আগেই বলে গিয়েছিলেন যে, তার স্ত্রী নাগাভে যেন কোনো মতেই বিধবার বেশ না নেন।

তার কথায়, ‘কপালে টিপ পরা, সাজগোজ করা, গলায় হার পরা, ভাল ভাল শাড়ি পরা– এসবই তো নিষিদ্ধ ছিল সমাজে। তবে আমি নিজে এগুলো সবই করতাম, কারণ আমার স্বামী মৃত্যুর আগেই এরকম বলে গিয়েছিলেন।’

‘আরো কেউ কেউ হয়তো নিজেরা এরকম ভেবেছেন, কিন্তু একটা গোটা গ্রামের মানুষ এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে– এটা খুবই ভাল হয়েছে,’ জানালেন প্রধান শিক্ষিকা নাগাভে।

কী করে সম্ভব হলো যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্ত নেয়া

গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান সুরগোন্ডা পাতিল জানালেন, ‘করোনার প্রথম আর দ্বিতীয় ঢেউতে অনেক তরুণ-যুবক মারা গেছেন গ্রামে। তাদের বিধবাদের বয়স সব ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে। প্রায় সবারই ছোট বাচ্চা আছে।’

তিনি জানান, ‘সমাজে বিধবাদের যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়, তা আমাকে এসে জানাতো ওরা। তখনই মাথায় একটা চিন্তা আসে যে, কিভাবে এসব আচার, রীতিনীতি থেকে মুক্তি এদের দেয়া যায়।’

সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্য গ্রামের মানুষদের সাথে, বিশেষত নারীদের সাথে নানাভাবে আলোচনা চালিয়েছেন তারা। মতামত নেয়া হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও।

ponchayet

হেরওয়াড় গ্রাম পঞ্চায়েতে বৈঠকে বসেছেন বাসিন্দারা।

পাতিলের কথায়, ‘তারপর পয়লা মে গ্রামের সব মানুষকে ডেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেউই তো বিরোধিতা করেনি সিদ্ধান্তের।’

সিদ্ধান্তটা গ্রামের মানুষ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেজন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছিল একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার প্রধান প্রমোদ ঝিঞ্ঝাডের মাথাতেও বিধবাদের এই রীতি-নীতি থেকে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা আসে– এক সহকর্মীর মৃত্যুর পরে তার বিধবা স্ত্রীর অবস্থা দেখে।

তিনি বলছিলেন, ‘সহকর্মীর করোনায় মৃত্যুর পরে তার পরিবারের পাশে খুব বেশি মানুষ গিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তবে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তখন তার সদ্যবিধবা স্ত্রীর গা থেকে এক এক করে গয়নাগাটি খুলে নেয়া হচ্ছে, মঙ্গলসূত্র খুলে নেয়া হলো, সিঁদুর মুছে দেয়া হলো। পরে সেসব ফেলে দেয়া হলো আগুনে। আর এসবই করাচ্ছিলেন আবার কয়েকজন বিধবা নারী।’

রামমোহন রায়ের ২৫০তম জন্মবছরেও বিধবাদের এই অবস্থা!

ওই দৃশ্যটাই ঝিঞ্ঝাডের মনে দাগ কেটে যায়– তিনি ভাবেন যে, রাজা রামমোহন রায় প্রায় দু শ’ বছর আগে হিন্দু বিধবাদের স্বার্থের কথা ভেবেছিলেন, অথচ এই প্রথা এখনো চলছে।

সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে আর হিন্দু বিধবাদের স্বার্থ রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়, সেই মনীষীর জন্মের এখন আড়াই শ’ বছর পালন করা হচ্ছে।

কলকাতার নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ হেরওয়ার গ্রামের সিদ্ধান্তের খবর পত্রিকায় দেখেছেন। তার আক্ষেপ, ‘আমরা রামমোহন রায়ের আড়াই শ’ বছর পালন করছি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন করি, অথচ তাদের যে আকাঙ্ক্ষাগুলো ছিল বিধবাদের নিয়ে, সেগুলো পূরণ করতে সচেষ্ট হই না!’

ঘটনাচক্রে হেরওয়ার গ্রামেই প্রায় এক শ’ বছর আগে ভারতের সংবিধানের রূপকার ও সমাজ সংস্কারক ভীমরাও আম্বেদকার আর শাহজি মহারাজ প্রথম যৌথসভা করেছিলেন।

বিধবাদের কষ্ট লাঘবে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ওই গ্রামের সিদ্ধান্ত দেখে এখন মহারাষ্ট্র সরকারও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। গোটা রাজ্যেই বিধবা বিয়ের এ নিয়ম চালু করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছে রাজ্যসরকার।

সূত্র : বিবিসি

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD