1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
চাকুরীর অনিশ্চয়তায় ইমাম সাহেবগন সত্য গোপন করে থাকেন - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

চাকুরীর অনিশ্চয়তায় ইমাম সাহেবগন সত্য গোপন করে থাকেন

এম এ মজিদ, হবিগঞ্জ
  • শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে
ফাইল ছবি

ব্যক্তিজীবনে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ একটি অপরিহার্য বিষয়। ঠিক এই জায়গাতে যখন আঘাত আসে তখন মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা চেতনা হৃাস পায়। ক্ষেত্র বিশেষে বিচ্যুত হয়। হাতেগুনা কিছু মানুষ ছাড়া এ তালিকায় প্রায় সবাই।

চাকুরীর অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুকিতে থাকেন মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনগন। যাদের হাতে এসব আলেম ওলামাদের চাকুরী, তারা কিন্তু আলেম ওলামা নন। ব্যক্তিজীবনে উদ্যুত, ঝগড়াটে, রগছটা, পারিবারিক বলয়, বৈধ অবৈধ অর্থের মালিকদের অনেকেই মসজিদ কমিটির কর্তা। নিয়মিত ঘুষখুর এমন লোককে দেয়া হয় মসজিদের অর্থের দায়িত্ব। কয়েক ডজন মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্তা পাওয়া যাবে যারা ব্যক্তিজীবনে ইসলামী জীবন ধারণ করেন না। তারা নিয়মিত ফরজ তরক করেন, সুন্নতের ধার ধারেন না।

পবিত্র কোরআনের দু একটি সুরা শুদ্ধভাবে পড়তে পারবেন না, অযু বা নামাজ ভঙ্গের কারণ সমুহ বলতে পারবেন না। তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা লাইনের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী আলেম ওলামা মসজিদের খতিব ইমাম মুয়াজ্জিন। আমাকে একবার একটি মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে রাখার জন্য বলা হয়েছিল, আমি সবিনয়ে না বলে দিয়েছি এই কারণে যে, আমি নিয়মিত ফরজ পালন করতে পারি না, অন্যতম ফরজ টাকনুর উপরে প্যান্ট পায়জামা পড়ার অভ্যাসটি এখনো আমার মধ্যে গড়ে উঠেনি, সুন্নত তো অহরহ ছুটে যায়ই, এখনো আমি দাড়ি রাখিনি।

আমার মতো একজন ব্যক্তি যদি মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্তা হন তাহলে অঘটন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনও মসজিদ আমি দেখেছি বছরে অন্তত ৬ বার ইমাম সাহেবকে পরিবর্তন করা হয়েছে। ইমামের চাকুরী খাওয়ার জন্য তার দোষ চাকুনী দিয়ে যাচাই করা হয়, অথচ যারা দোষ খুজেন তারা আপাদ মসÍক ষোল আনাই দোষী। একজন আলেমকে যখন আপনি ওয়াজ করানোর জন্য দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসবেন, দেখবেন তিনি বেশ কিছু হক কথাই বলছেন, আবার ওই আলেম যদি কোনো মসজিদের ইমাম হন, তাহলে তার মসজিদে গিয়ে তিনি একইভাবে হক কথা বলতে পারছেন না।

এর অন্যতম কারণ হল চাকুরী হারানোর ঝুকি। এর বিপরীত দৃশ্যও রয়েছে। ইমাম সাহেবগন মসজিদে নিয়োগ পাওয়ার সাথে সাথে একটি প্রভাবশালী মহলকে হাত করতে দলবাজীর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, নিজের একটি বলয় তৈরী করেন। ইমাম সাহেবদের আকাশচুম্মি মর্যাদা ক্ষুন্নের জন্য প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই দায়ী। আমার বিশ্বাস ইমাম সাহেবগন যদি ইসলামের প্রকৃত সত্য নির্দ্বিধায় তুলে ধরেন, নিজেদের মধ্যে ইসলামের জজবা ফুটিয়ে তুলেন, একটি সমাজ পরিবর্তন হতে বাধ্য। কিন্তু এই প্রকৃত সত্যটা তুলে ধরবে কে? একদিকে ইমাম সাহেবদের চাকুরীর নিশ্চয়তা দরকার, অন্যদিকে ইসলামের দায়ী হিসাবে ইমাম সাহেবদের সত্য কথা বলা দরকার। এক্ষেত্রে এমনটা করা যেতে পারে, ধরা যাক হবিগঞ্জ পৌর এলাকা।

পৌর মেয়রের নেতৃত্বে (পৌর মেয়র যদি ইসলামধর্মী না হন তাহলে পর্যায়ক্রমে প্যানেল মেয়র) পৌর এলাকার মসজিদগুলোতে ইমাম নিয়োগের জন্য একটি ইমাম নিয়োগ বোর্ড থাকবে। পৌর এলাকার সিনিয়র মাদ্রাসার সুপার, পৌর এলাকার বাসিন্দা খ্যাতি সম্পন্ন সিনিয়র মুফতি, মুহাদ্দিস, কোরআনে হাফেজদের নিয়ে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ইমাম নিয়োগ বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। সকল মসজিদ কমিটির সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক পদাধিকার বলে ইমাম নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হবেন।

কোনো একটি মসজিদে ইমাম নিয়োগ প্রয়োজনবোধ করলে সংশ্লিষ্ট মসজিদের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ইমাম নিয়োগ বোর্ডে লিখিত আবেদন করবেন। ইমাম নিয়োগ বোর্ড ইমামের যোগ্যতা, ভাতা, সুযোগ সুবিধা উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেবেন। আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নেবেন পৌর মেয়রের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বোর্ড এবং পদাধিকার বলে সদস্য হওয়া সংশ্লিষ্ট মসজিদের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৭জন। স্বচ্ছতার সাথে মসজিদের ইমাম নিয়োগ দেবেন নিয়োগ বোর্ড।

নৈতিক স্খলন জনিত কারণে বা অন্য কোনো কারণে ইমাম নিয়োগ বাতিল হবে কিভাবে? ইমাম নিয়োগ বাতিল করতে হলে সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটির সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক লিখিতভাবে নিয়োগ বোর্ডের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করবেন। নিয়োগ বোর্ড ৭ দিনের মধ্যে বিশেষ বৈঠকে বসবেন। তারা অভিযোগুলো তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। তদন্ত কমিটি পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন।

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে ইমাম সাহেব তার চাকুরী হারাবেন। তদন্তে অভিযোগে সত্যতা না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট মসজিদের ইমাম নিয়োগ বাতিলের জন্য আবেদনকারী সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক তাদের পদ হারাবেন। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে মসজিদ কমিটি নতুন সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন। একইভাবে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অনুরুপ ইমাম নিয়োগ বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। ইমাম নিয়োগ এবং নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াটি একটু কঠিন ও জবাবদিহী মূলক হলে কথায় কথায় চাকুরী হারানোর ভয় কেটে যাবে। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে ইসলামের সত্য ফুটে উঠবে। উপকৃত হবে সমাজ।

লেখকঃ এম এ মজিদ
আইনজীবী ও সংবাদকর্মী,
হবিগঞ্জ ৩০ এপ্রিল ২০২২
০১৭১১-৭৮২২৩২

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD