১৯২১ সালের ১ জুলাই শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষাকার্যক্রম। ওই হিসেবে আজ শনিবার (১ জুলাই) ১০৩তম বর্ষে পদার্পণ করছে দেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ছোট্ট পরিসরে। মাত্র তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ শিক্ষার্থী এবং তিনটি আবাসিক হল নিয়ে। বর্তমানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ১৩ অনুষদ, ৮৪ বিভাগ, ১৩ ইনস্টিটিউট, প্রায় ২০০০ শিক্ষক, ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও চারটি হোস্টেল নিয়ে।
বাংলাদেশের শতায়ু পার করা একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সব আন্দোলন ও সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। এখনো সারা দেশের সুস্থ চিন্তা বিকাশের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কেন্দ্র এটি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারি, সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান।
দিবসটি উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়’। দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বর্ণালি সাজে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো।
কর্মসূচি অনুযায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখে পায়রা চত্বরে গমন এবং সেখানে সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হবে।
এছাড়া সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়’ নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব কথা
বাঙালির আর সব অর্জনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিল। বাঙালি নাগরিক সমাজের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের দীর্ঘ বোঝাপড়ার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ রদের অল্প কিছুদিন পরই ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, মননশীলতায় নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে বাঙালি শিক্ষিত সমাজ।
১৯১২ সালের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব অর্পিত হয় নাথান কমিশনের ওপর। ১৯১৩ সালে নাথান কমিশনের ইতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই রিপোর্টটি অনুমোদিত হয়। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হয়। কিন্তু এরপরের বছরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পথে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই যুদ্ধ। তবে এত সব প্রতিকূলতার মধ্যেও নাগরিক সমাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।
১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ধাপ তৈরি হয়ে যায়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভায় ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০’ পাস হয়। ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি দেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব সন্দেহের অবকাশ ঘটে। এই আইনকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইনটির বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply