ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের নারায়ণপুর গ্রামের হোসনা বেগম (২৬) সুবিধা বঞ্চিত শিশু থেকে নিজ চেষ্টায় হয়েছেন মুদি দোকানের মালিক।
মৃত আব্দুল হেকিম ও মৃত সখিনা বেগমের একমাত্র কন্যা সন্তান তিনি। স্বামী পরিত্যক্তা হোসনা বেগম মাদ্রাসায় পড়ুয়া এক মেয়ে জাকিয়া সুলতানা ইভাকে (১০) নিয়ে বর্তমানে স্থায়িভাবে বসবাস করছেন আলীয়াবাদ পশ্চিম পাড়ায়।
বাংলা সিনেমার গল্পের মতোই যেন তার জীবন! তিনি যেন আরেক সাবানা! ছোট কালে কালো কুচকুচে চেহারা হওয়ায় ছোট থেকে তাকে হতে হয়েছে বর্ণ বৈষম্যের শিকার। অভাব-অনটনের পরিবারে একমাত্র সদস্য হওয়ায় তাকে কাঁধে তুলে নিতে হয় বাবা-মার দায়িত্ব। হাতুড়ি নিয়ে নেমে পড়েন ইট ভাঙার কাজে। এরই মধ্যে মাত্র ১২ বছর বয়সে ভাই-বোনহীন একমাত্র কন্যা হোসনা বেগমের বিয়ে হয়। ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান জন্মের পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়।
বাবা-মাকে সাথে নিয়ে মাঝিকাড়ার একটি ভাড়া বাসায় থেকে আবার হাতে তুলে নেন হাতুড়ি। ধীরে ধীরে নিজের সদ-ইচ্ছায় ও সাহসী শ্রমে কন্সট্রাকশনের কাজের ইট ভাঙার মেশিন নিয়ে মা-মেয়ে ছুটতেন। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে আলীয়াবাদ তজ্জব আলী মার্কেটে ভাড়াটে জায়গায় দিয়েছেন মুদির দোকান। সাহায্য -সাহস ও অনুপ্রেরনার একমাত্র ভরসা ছিলেন তার মা-বাবা বলে জানা যায়। তারাও কেউ এখন নেই।
মুদির দোকানের উপার্জন আর ইট ভাঙার জমানো টাকায় ২ শতাংশ জায়গা কিনে বানিয়েছেন টিনের ঘর। হোসনা বেগম ও তার মেয়ে ইভাকে নিয়ে থাকছেন ওখানেই। দৈনিক ৩/৪ হাজার টাকা বিক্রি করে মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় চলে তার সংসার।
উদ্যোক্তা হোসনা বেগম জানান, কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য পাইছি না। আমার আম্মা অই একমাত্র ভরসা ছিল। এখন তো আমার ১০ বছরের মাইয়া ছাড়া আর কেউ নাই। আম্মা সব সময় কইতো, নিজে ভাল হইয়া চললে আল্লাহ সহায় হয়।
সমাজের বিত্তবান ও মানবদরদী মানুষ যেন তার বন্ধুর সংগ্রামী পথটা সহজ-সুখের করতে তাকে আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। বর্তমানে ব্যবসায়ীক মন্দা ও ২২ দিন আগে মারা যাওয়া মায়ের অভাবে অতিরিক্ত খাটুনি যাচ্ছে তার। মেয়েকে পড়ানো, রান্নাবান্না, দোকানদারি একা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
Leave a Reply