ঈদুল আজহার সময় দুর্ঘটনা এড়াতে সাত দিনের জন্য সরকার মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলা নিষিদ্ধ করলেও বাইকচালকদের দাবি, বাস মালিকদের ব্যবসার সুবিধা করে দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা করে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত ঈদুল ফিতরের সময় সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশই ঘটেছে মোটরসাইকেলের কারণে।
আর পরিবহন মালিকরাও বলছেন, কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
রোববার বিকেলে এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান মোটরসাইকেলচালকরা। তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধও করেছেন।
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো মোটরসাইকেলের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাহন চলাচলের উপযুক্ত নয়।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক শেষে জানানো হয়, যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের তিন দিন, এই সাত দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।
এ সময় দেশের সব মহাসড়কে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসও (ভাড়ায় চলা) বন্ধ থাকবে। ঢাকা, বরিশাল বা চট্টগ্রামের রাইড শেয়ারিং বাইকের যেটি যে জেলার মোটরসাইকেল, সেটি সেই জেলাতেই চালাতে হবে।
এর কারণ হিসেবে সরকার বলছে, ঈদের আগে পরে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার সকালে বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে সচিবালয়ে ঈদ প্রস্তুতি সভায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের বিষয়ে আলোচনাও হয়। সেখানে মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের জন্য বাস মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি করা হয়, যদিও সরকার ওই বৈঠক শেষে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
সরকারের ওই সিদ্ধান্তের পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে মোটরসাইকেলচালকরা। বিভিন্ন স্থানে তারা মানববন্ধন করার ঘোষণাও দেন।
বাংলাদেশের মোটরসাইকেলচালকদের একটি বড় ফেসবুক গ্রুপ বাইকবিডিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তে নিজেদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে মোটরসাইকেলচালকরা।
লাবিব হাসান নামে একজন লেখেন, ‘এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা বাস মালিক-শ্রমিকদের ঈদে ঘরমুখো মানুষের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একটি ষড়যন্ত্র।’
ফজলুল হক মন্তব্য করেছেন, ’এ সবকিছুর পেছনে বাস মালিকদের ষড়যন্ত্র কাজ করছে, বাইকাররা ঐক্যবদ্ধ না হলে বাইক যাদুঘরে তুলে রাখতে হবে।’
বাইকবিডি গ্রুপের অ্যাডমিন আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারকে ট্যাক্স-ভ্যাট সব দিয়ে, বিআরটিএ-এর নিয়ম মেনে শহরের ভেতরে বা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালাই। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহনের অবস্থা বিচার করলে মোটরসাইকেলে খুব দ্রুত, কম সময়ে, কম খরচে যাতায়াত করা যায়। বিশেষ করে এই ঈদের সময় যখন টিকেট নিয়ে হাহাকার পড়ে যায়, তখন বাইকে যাতায়াত অনেকের জন্যই স্বস্তির।’
তিনি মনে করেন, বাস মালিকরা যদি সরকারের কাছে সুপারিশ না করত, তাহলে সরকার এটা করত না। তাদের চাপে বা অনুরোধে সরকার এটা করে থাকতে পারে। কারণ গত ঈদের সময় মোটরসাইকেলে অনেকে যাতায়াত করায় তাদের ব্যবসা হয়নি। তাই তারা এবার এ রকম চাপ তৈরি করেছে।’
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘পরিসংখ্যান যদি দেখেন, আমাদের কাছে এসবির রিপোর্ট আছে, গত তিন বছরে সড়কে মোট দুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে মোটরসাইকেলের কারণে। গত এপ্রিল পর্যন্ত দুই হাজার ২০০ দুর্ঘটনা হয়েছে, তার মধ্যে ৮০০-এর বেশি মারা গেছে মোটরসাইকেলের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেল কিন্তু মহাসড়কের যানবাহন নয়। মহাসড়ক হচ্ছে বাসের মতো দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য। একটি পরিবার যখন মোটরসাইকেলে করে যায়, তখন তার পাশ দিয়ে দ্রুত গতির একটি বাস গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা। মোটরসাইকেলে কতজন যাত্রী যাবে? এই সংখ্যা একেবারে নগণ্য। যত মানুষ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে যাতায়াত করে সেই তুলনায় এটা হয়তো পরিসংখ্যানেও আসবে না। সুতরাং এটা মোটরসাইকেলচালকদের অযৌক্তিক বক্তব্য। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।’
সূত্র : বিবিসি
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply