1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
বিনম্র শ্রদ্ধা প্রিয় গাফ্ফার ভাই (১৯৩৪-২০২২) - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন

বিনম্র শ্রদ্ধা প্রিয় গাফ্ফার ভাই (১৯৩৪-২০২২)

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন থেকে
  • সোমবার, ৩০ মে, ২০২২
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে
আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। ছবিঃ বাংলা কণ্ঠ

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট, সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী  ১৯শে মে ২০২২ ঈসায়ী  লন্ডন সময় ভোর ছয়টা উনপঞ্চাশ মিনিটে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহি…. ওয়া ইন্না…… ইলাহী রাজিউন)। গাফ্ফার ভাইয়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতি কথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন , তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টি ।

লেখকের সাথে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী।

বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে গাফ্ফার ভাইয়ের সাথে  আমার পরিচয় ঘটে একুশের প্রভাত ফেরীতে সেই স্কুল জীবনে, তাঁর সৃষ্টি কালজয়ী সঙ্গীত ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানু  একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি তুমায় ভুলিতে পারি গানের মাধ্যেমে‘‘। তখনও মানুষটিকে আমি সরাসরি দেখিনি।  চিন্তা করি তাঁর সাথে দেখা করব, কিন্তু  আমার পক্ষে দেখা করা সম্ভব হয়নি।

তিনি লন্ডনে আর আমি বাংলাদেশে। তবে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ক্রমশ বাড়তে থাকে তাঁর লেখা লেখির মাধ্যমে, বাংলাদেশে নিয়মিত তার লেখা পড়তাম।  আমি বিলেতে স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্যে ১৯৯৫ সালে লন্ডন আসলে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা করি।  এর পর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। পরামর্শ নিতাম এছাড়া আদর্শিক ভাবে আমরা একই আদর্শের অনুসারী।

সত্যবানী পত্রিকার বর্ষপূর্তি অনুষ্টানে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক উত্তরপূর্ব সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। চেয়ারে বসা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী পাশে দাড়ানো যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, বিসির‘র উদয় শংকর দাস, লেখক মতিয়ার চৌধুরী অন্য পাশে সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাছ পাশা পেছনে দাড়ানো যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাংবাদিক নিলুফা হাসান, সংবাদ পাঠিকা জাকি রেজওয়ানা ও শিল্পি গৌরী চৌধুরী।

লন্ডন সফররত দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরীর সম্বর্ধনা অনুষ্টানে মধ্যখানে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী সালেহ চৌধুরী মতিয়ার চৌধুরী, সৈয়দ আনাছ পাশা, অন্য পাশে তৎকালীন লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাদি, ওমর ফারুক প্রমুখ।

আমি শুরু থেকে-একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটর সাথে সম্পৃক্ত তিনি নির্মুল কমিটির সাথে যুক্ত ছিলেন । এছাড়া লন্ডনে আসার পর লন্ডনের সাপ্তাহিক গুলোতে আমার কাজ করার সুবাতে তাঁর সাথে ঘনিষ্টতা বাড়তে থাকে আমি লন্ডনের সাপ্তাহিক সিলেটের ডাক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করার সময় তাঁর হাতের লিখা গুলো পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে টাইপ করতাম। একারনে তাঁর সাথে কথা হত  নিয়মিত।  এছাড়া বিভিন্ন সভা সমাবেশে সাক্ষাৎ হত । তিনি ছিলেন আমাদের আদর্শ এবং অনুপ্রেরণা।

ছবিতে লন্ডনের চ্যানেল আই ষ্টুডিওতে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ৮২তম জন্ম দিনের অনুষ্টানে লন্ডনের সাহিত্যিক সাংবাদিক , বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অথিথি বৃন্দ।

আজীবন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী  যা বিশ্বাস করতেন তাই লিখতেন।  আর একারণেই  স্বাধীনতা বিরুধী উগ্রগোষ্টী তাঁর বিরুদ্ধে হরহামেশাই অপপ্রচার চালাতো, তার মৃত্যুর পরও এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বসে নেই  তাদের মিথ্যাচার অব্যাহত রয়েছে।

লন্ডনের চ্যানেল আই ষ্টুডিওতে রাষ্ট্রপতির সচিব শফিকুল ইসলাম ভূইয়ার চারটি গ্রন্থের লাইভ প্রকাশনা অনুষ্টানে প্রধান অতিথি আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী মূল আলোচক মতিয়ার চৌধুরী, চ্যানেল আই ইউরোপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী শোয়েব, গ্রন্থের লেখক শফিকুল ইসলাম ভূইয়া,ও জামাল আহমদ খান। দাড়ানো অন্যান্য অতিথি বৃন্দ।

এর একটি কারণও আছে আলবদর কমান্ডার ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত  যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী চৌধুরী মইনুদ্দিন সহ জামাতে ইসলামির  বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেশ স্বাধীনের পর ব্রিটেনে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয় পরবর্তিতে অনেকেই এদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে যায়।

এরাই বিভিন্ন নামে ব্রিটেনে গড়ে তোলে অসংখ্য সামাজিক এবং চ্যারিটি সংগঠন। ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশের সাস্প্রদায়িক গোষ্টী সব সময়ই দেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর কলম সবসময়ই ছিল এদের বিরুদ্ধে। স্পষ্টবাদিতা দেশপ্রেম এবং সত্যকথা প্রকাশ করার কারণে তিনি স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর রোষাণলে পড়েন।

আমার বেশ মনে আছে লন্ডনের চ্যানেল আই ষ্টুডিওতে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৮২তম জন্ম দিনের অনুষ্টানটি পালন করা হয় এই অনুষ্টানে আমি সহ ব্রিটেনের সাহিত্যিক সাংবাদিক এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মিনিষ্টার প্রেস প্রখ্যাত সাংবাদিক নাদিম কাদির, বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফাষ্ট সেক্রেটারী  মনিরুল ইসলাম কবীর বর্তমানে ডিএফপিতে কর্মরত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এই অনুষ্টানে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর জীবনের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেছিলেন বিলেতে বাংলা সাংবাদিকতার অনেক কথা । তিনি বলেছিলেন অধিক শিক্ষিতি বা বড় ধনীরা সংবাদপ্রত্র প্রকাশ করতে চায়না।  জেনে শুনে এই অলাভজনক ব্যবসায় আসেনা। যারা এই লোকসানী ব্যবসায়  আসেন তাদের কেউই অধিক শিক্ষিত বা বড় ধনী নয়।  অনুষ্টানটি চ্যানেল আই লন্ডন ষ্টুডিও থেকে লাইভ প্রাচার করা হয়।

পরদিনই লন্ডনে  জামাতে ইসলামের ইউরোপীয় সংস্করণ দাওয়াতুল ইসলাম নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী কয়েকটি  সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করতে থাকে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী নাকি “ সিলেটীদের বলেছেন লাঙ্ল টু লন্ডন“।

এমনকি একটি  পত্রিকায় সে কলাম লিখে অপপ্রচার চালাতে থাকে।  আমাদের বাঙ্গালী সমাজে মানুষ হুজুগে বিশ্বস করে অনেকেই আমাদের ফোন করতে থাকেন। এর পর  আমি নিজে, আনসার আহমেদ উল্লাহ, জামাল আহমদ খান, শাহ মুস্তাফিজুর রহমান বেলাল, কাউন্সিলার নূরুদ্দিন আহমেদ, হরমুজ আলি, সাংবাদিক ইসহাক কাজল, জুয়েল রাজ  সহ বেশ কয়েকজন,  ’’আমরা সিলেট বাসীর“ ব্যানারে প্রেস কনফারেন্স ডেকে অপপ্রচারের তীব্র প্রতিবাদ করি।

আমাদের প্রতিবাদের কারণে স্বাধীনতা বিরুধীদের মিশন ব্যর্থ হয়।  লিখার সাথে অপপ্রচারের কাটিং এবং সংবাদ সম্মেলনের চিত্রটি সংযুক্ত করে দেয়া হলো। বিলেতের বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াশীল স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী গাফফার চৌধুরীকে নিয়ম করে গালি দিতে না পারলে অনেকেরই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন কিংবা  তাঁকে নিয়ে মিথ্যাচার করা স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের ‘ঈমানী’ দায়িত্ব মনে করে।

অন্যদিকে গাফফার চৌধুরীকে বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির উদারপন্থীরা  পুরোহিত মনে করেন। তাঁর পৌরহিত্য ছাড়া সভা, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক উৎসব রূপহীন তাৎপর্যহীন হয়ে উঠতো। জীবনের শেষ বছরগুলোতে বেঁচে থাকাটা আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্য ক্রমশই ক্লান্তিকর ও আকর্ষণহীন হয়ে পড়ছিল।

এক দশক আগে স্ত্রীর মৃত্যু ছিল তাঁর জন্য এক বড়ো ধাক্কা। এরপর দীর্ঘদিনের  সহযোদ্ধা (বঙ্গবন্ধুর  প্রেস সেক্রেটারী)  সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশার মৃত্যু সবশেষ  কনিষ্ট কন্যা বিনীতা চৌধুরীর অকস্মাৎ চলে যাওয়া তাঁকে দীর্ঘ সময় জ্বলে জ্বলে ক্ষয়ে যাওয়া মোমবাতির মতো নিঃশেষ করে দিচ্ছিল।

তিনি নিঃসঙ্গতা পছন্দ করতেন না। কিন্তু স্বজন এবং নিকটজনের এই অনুপস্থিত হয়ে যাওয়া তাঁকে নিঃসঙ্গ করে তুলছিল। পঁচাত্তরের অগাস্ট ট্রাজেডি নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবন নিয়ে চেয়েছিলেন আরেকটি সিনেমা বানাতে, কিন্তু তা আর হল না। তার আগেই  বিদায় নিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক কিংবা চলচ্চিত্র নির্মাতার পরিচয় ছাপিয়ে যিনি একুশের গানের রচয়িতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন যুগ ‍যুগ ধরে।  

দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও কিডনির জটিলতায় ভোগা গাফফার চৌধুরী ৮৮ বছর বয়সে  ১৯শে মে ২০২২ ঈসায়ী বৃহস্প্রতিবার  লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ২০১৫ ঈসায়ীতে কনিষ্ট কন্যা বিনীতা চৌধুরীকে নিয়ে হজ্ব পালন করেন। তাঁর লিখা রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ অবলম্বনে ২০০৭ সালে একটি টিভি চলচ্চিত্র তৈরি করেন।

তাতে অর্থায়ন করে শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টার, লন্ডন।  তার আগে ২০০৫ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি নাটক করার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। পরে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। সেই চলচ্চিত্রের নাম দেন ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিক্স’। কিন্তু অর্থের সংস্থান করতে না পারার কারণে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে সিনেমাটির কাজ আর এগোয়নি।

বাঙালির বাতিঘর খ্যাত কিংবদন্তি সাংবাদিক, অমর একুশে গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো‘র রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ ঈসায়ীর ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার  মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে। তার পিতা  হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন চৌধুরী। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে  আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী দ্বিতীয়, বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী।

বোনেরা হলেন- মানিক বিবি চৌধুরী, লাইলী খাতুন চৌধুরী, সালেহা খাতুন চৌধুরী, ফজিলা বেগম চৌধুরী ও মাসুমা বেগম চৌধুরী। বিবাহিত জীবনে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক তার সন্তারেনা হলেন পুত্র অনুপম চৌধুরী, কন্যারা হলেন তানিমা চৌধুরী, ইন্দিরা চৌধুরী ও বিনীতা চৌধুরী (বিনু)।

১৯৩৪ সালে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে জন্ম নেওয়া গাফ্‌ফার চৌধুরী ১৯৫৮ সালে ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স পাস করে ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’ এর দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মুখপাত্র ‘জয়বাংলা’য় কাজ করেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ভারতে অবস্থান কালীণ সময় আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী কলকাতার আনন্দবাজার ও যুগশঙ্খ পত্রিকায় কলাম লিখেছেন নিয়মিত।

১৯৭৪ সালে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে  আসেন এরপর লন্ডনেই স্থায়ী হন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশ নেন । লন্ডন থেকে দেশের সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখেন তিনি। ১৯৪৬ সালে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় কলাম লেখা শুরু করেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় তার প্রথম লেখার শিরোনাম ছিল ‘সমাচার সন্দেশ’।

৬০ বছর ধরে মিঠাকড়া, ভীমরুল, তৃতীয় মত, কাছে দূরে, একুশ শতকের বটতলায়, কালের আয়নায়, দৃষ্টিকোণ ইত্যাদি শিরোনামে কলাম লিখেছেন তিনি। কলাম ছাড়াও কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ওপর লেখা ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ তার বিখ্যাত নাটক। ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‍‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন  মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফফার চৌধুরী।

১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, স্বাধীনা পদক,  শেরেবাংলা পদক, মানিক মিয়া পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।  লন্ডন থেকেও তিনি নতুন দিন, পূর্বদেশ সহ বেশ কয়েকটি সাপ্তাহিক প্রকাশ করেন।  বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিল রুগে আক্রান্ত জনাব চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত বার্নেট হাসপাতালেই শয্যাশায়ী ছিলেন।

এবছরের  ১৩ই এপ্রিল ক্যানসার আক্রান্ত তাঁর তৃতীয়া কন্যা বিনীতা চৌধুরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী গাফ্ফার চৌধুরী হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিলেন, ‘যাবার সময় আমার, অথচ চলে গেলো আমার মেয়ে’। তাঁর এই কান্নার একমাস পেরুতেই শেষ পর্যন্ত তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

হাসপাতাল থেকে মরদেহ  রিলিজ করার পর ২১শে মে ইষ্ট লন্ডনের ব্রিকলেন  জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে জনাব চৌধুরীর মরদেহ  নেয়া হয় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে  সেখানে তাঁকে ব্রিটেনের সর্বস্থরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান।

এর পর ২৮শে মে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের তত্বাবধানে প্রধান মন্ত্রির নির্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায় ২৯শে মে সেখানে সর্বস্থরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে লাশ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় মসজিদ ও জাতীয় প্রেসক্লাবে দু‘দফা নামাজে জানাজা শেষে  তার অসিহত অনুসারে স্ত্রীর কবরের পাশে  মীরপুর  শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে তাঁকে  রাষ্ট্রীয় মর্জাদায় সমাহিত করা হয় । মৃত্যুর পর তাঁকে দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা খেতাব।

আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলতেন আমি যা, সেই পরিচয়ে নিন্দিত হতে রাজী আছি। যা নই সেই মিথ্যা পরিচয়ে নন্দিত হতে রাজী নই।  আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে  কোনদিনই আপোষ করেননি। লালন করতেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বঙ্গবন্ধুকে স্থান দিতেন সবার উর্ধে। কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কমলামিষ্ট বহু পরিচয়ে পরিচিত আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী চিরকাল বেঁচে থাকবেন তার অমর সৃষ্টি আমার ‘‘ভাইয়ের রক্তে রাঙানো অমর একুশের গানের মাধ্যমে। হাজার বছরে গাফ্ফার চৌধুরী একজনই জন্মায়।

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD