1. admin@wordpress.com : Adminroot :
  2. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
কামরুল হাসান তরফদার ও ‘আশা’ : এস এম খোকন - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

কামরুল হাসান তরফদার ও ‘আশা’ : এস এম খোকন

এস এম খোকন
  • শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

ক্ষুদ্র ঋণের অগ্রদূত হচ্ছে বাংলাদেশ। গ্রামের দরিদ্র জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশে বিকল্প ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে দরিদ্র মহিলাদের মধ্যে গোষ্ঠীভিত্তিক ঋণ প্রদানের একটি কর্মসূচি হিসেবে প্রথমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়। এরপর বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি সংস্থা এই ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা নিয়ে এসেছে। কর্মসংস্থান এবং আয় সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে চালু হওয়া এই সেবার বিস্তৃতি বাড়ে। অন্যান্য সহায়ক সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় সামাজিক সচেতনতা,  পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রম। ভাল ফলাফল ও আশার মুখ দেখলেও একসময় গণঅসন্তুষের কারণ হয় এই ক্ষুদ্র ঋণ।

তবে অবাক করার মত তথ্য হল, শুধু বাংলাদেশে নয় প্রবাসের মাটিতেও বেসরকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প চালু করেছেন এক বাংলাদেশী। ফিলিপাইনে কামরুল হাসান তরফদার নামেই পরিচিত তিনি। ১৯৮২ সাল থেকে সমাজসেবার কাজ শুরু করেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থাতে। বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি সংস্থা আশা’র সহকারী ব্যবস্থাপক ছিলেন তিনি। বর্তমানে ফিলিপাইনে অবস্থান করছেন। সে দেশের অন্যতম প্রধান বেসরকারি সংস্থা আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৪ সালের ২ আগষ্ট যাত্রা শুরু করে দশ বছরের কম সময়ে আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্যতম ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার মর্যাদা অর্জন করে। কামরুল হাসান তরফদার আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশনের একজন সহ প্রতিষ্ঠাতাও।

বাংলাদেশে আশা’য় কাজ করার সময় ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিপাইনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর ক্ষুদ্রঋণ সহায়ক প্রকল্প চালু করার লক্ষে বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান হিসেবে নিয়োজিত হন। আশা’র ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের সহজ প্রক্রিয়া তখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিল। ফিলিপাইনের বেসরকারি সংস্থা, গ্রামীন ব্যাংকগুলো ও সমবায়গুলোর সাথে ক্ষুদ্রঋণকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই ক্ষুদ্রঋণ সহায়ক প্রকল্প চালু হয়। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০০৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছর চলে এই প্রকল্প। ২০০৪ এর শুরুতে CGAP ও UNCDF যে ৬৫ টি দেশে ক্ষুদ্রঋণ সহায়ক প্রকল্প চালু করে তার মধ্যে ফিলিপাইনকে বিস্তৃতি ও টেকসই বিবেচনায় সেরা ঘোষণা করে।

ফিলিপাইনে গিয়ে কামরুল হাসান তরফদার অনুধাবন করেন এই দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পগুলোর অবস্থা নাজুক এবং শুধু বিশেষজ্ঞ সহায়তার সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি। নতুন নিজস্ব প্রকল্প করে সূচক বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখেন তিনি। বাংলাদেশে আশা’র উর্ধ্বতন পক্ষকে বিশেষজ্ঞ সহায়তার বদলে নতুন বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন তিনি। প্রথমে তারা বিষয়টিকে স্বাগত জানালে, কামরুল ফিলিপাইনে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। যদিও পরবর্তীতে আশা (বাংলাদেশ) তার এই ধারণাকে বর্জন করে। স্বপ্নভঙ্গ হলেও তিনি অটল থাকেন। এবং আশা বাংলাদেশকে ফিলিপাইনে আশা নামেই আলাদা ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা প্রতিষ্ঠার কথা জানান তিনি। কামরুলকে অবাক করে দিয়ে আশা তার প্রস্তাবে রাজী হয় এবং তাকে নিজে সেই সংস্থা চালুর করার কথা বলা হয়। স্বপপূরণের জন্য আশা (বাংলাদেশ) ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কামরুল।

২০০২-০৩ সালে ফিলিপাইনে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর পড়ছিলেন তিনি। এমন সময় নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে রাজধানী ম্যানিলার অনেক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে তার পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে থাকেন। ২০০৩ সালের দিকে ভ্যাটিকানে নিযুক্ত ফিলিপাইনের সাবেক দূত হাওয়ার্ড কিউ ডি কামরুলের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। ডি এবং কামরুল ‘আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশন’ নামে নতুন ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। কামরুলের পরিকল্পনায় দেড়শো হাজার দরিদ্র গ্রহীতার কাছে পৌঁছাতে পাঁচ বছরের মাঝে দেড়শো মিলিয়ন ফিলাপাই্নি পেসো প্রয়োজন ছিল। এমন সময় গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি ফিলিপাইনের সাবেক রাষ্ট্রপতি কোরাজন একুইনোকে তারা এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। একুইনো আনন্দের সাথে তাদের প্রস্তাবে রাজী হন। অবশেষে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে নিবন্ধনের পর আগষ্টের ২ তারিখে কামরুল ও ৩ জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশন’ নামের নতুন সংস্থা।

বর্তমানে দেশটির ৮২ টি প্রদেশ ও ১৪৫ টি শহরজুড়ে সংস্থাটির ১৪৫৫ টি শাখা ও প্রায় ৯০০০ কর্মী রয়েছে। ১.৮ মিলিয়ন দরিদ্র মহিলাকে ১৮ বিলিয়ন ফিলিপাইনি পেসো ঋণ দিয়েছেন তারা। কোন অনুদান গ্রহণ ছাড়াই ৩ বছরের মাথায় সংস্থাটি আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরতা অর্জন করে। তখন থেকে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ব্যংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

শুধু তাই নয়, একইসাথে সংস্থাটি তাদের গ্রহীতা ও সেদেশের মানুষকে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, দাফন সহায়তা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তিপ্রদান, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, বিপণন সহায়তা, পরিবেশগত সুরক্ষাসহ বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করে আসছে। শুধুমাত্র সামাজিক কার্যক্রমে গত ১৪ বছরে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষের সহায়তায় ১.৯ বিলিয়ন ফিলিপাইনি পেসো খরচ করেছেন তারা। সে দেশের মানুষের ভালবাসায় সংস্থাটি বেশকিছু মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছে। ‘আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশন’ ফিলিপাইনের প্রথম ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা যা নয় বছরের মাথায় এক মিলিয়ন গ্রহীতার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে এবং সব প্রদেশে শাখা স্থাপন করতে পেরেছে।

আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশনের বর্তমান কার্যক্রম চমৎকার হলেও শুরুর পথটা মসৃণ ছিলনা। শুরুতে কামরুলের সাথে যাদের কাজ করার কথা ছিল, সংস্থাটির যাত্রা শুরু হওয়ার ঠিক আগে তারা প্রায় সবাই চলে যান। ফলে একেবারে নতুন কর্মী নিয়ে তাকে শুরু করতে হয়। আর তাই কাজের চাপ কর্মীদের সিংহভাগ উদ্যোম কেড়ে নেয়। সংস্থাটি দাঁড় করাতে মারাত্মক খাটুনি দিতে হয়েছে তাকে। কর্মীদের অনবরত প্রেরণা দিয়ে, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমে সংস্থাটিকে সফলতার মুখ দেখাতে পেরেছেন তিনি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞের পর্যায় থেকে একেবারে সাধারণের পর্যায়ে নিজেকে নামিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে শুধুমাত্র নতুন কিছু শুরু করার জন্য যেখান থেকে সফলতা কেউ আশা করেনা। কামরুল হাসান তরফদারের ভাষায়, ‘একটা নতুন সংস্থার যাত্রা শুরু করা অনেক কষ্টের। আর প্রথম বাঁধাটা আসে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব থেকে। কিছু বন্ধুবান্ধব তখন বলেছিলেন কেন আমি অনিশ্চিত সফলতার পেছনে ছুটতে যেয়ে প্রতিষ্ঠিত পেশা ছেড়ে দিচ্ছি। ঘনিষ্ট আত্মীয়স্বজন আমার পরিবার ও অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভেবে শংকা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতি মানুষের আত্মবিশ্বাসকে অবশেষে মূল্য দেয়’।

১৯৫৭ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার শ্রীবাউর নামক গ্রামে কামরুল হাসান তরফদার জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবু আলি তরফদার ও মা শাহেনা বেগন চৌধুরী দুজনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। বড় সন্তান হওয়ায় উপার্জনে নামতে হয় তাকে। হবিগঞ্জের  বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক এক প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন। কাজে থাকাকালীন তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি আশা (বাংলাদেশ) এ আঞ্চলিক সমন্বয়ক হিসেবে যোগ দেন। কামরুল হাসান তরফদার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, হংকং, অষ্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, চায়না সহ বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক আয়োজিত সেমিনার ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত থাকেন। ২০১৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সম্মেলনে ‘মাইক্রো ফিনান্স ইন কনফ্লিক্ট জোনঃ দ্য ব্যাটল অফ মারাওই’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

 

লিংক- http://asaphil.org

https://www.facebook.com/asaphilippines/

এস এম খোকন

সম্পাদক ও প্রকাশক, বাংলা কণ্ঠ নিউজ পেপার

০১৭১১-৯১২৫৮৪

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD