কেস স্টাডি-১ঃ নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক কন্যা সন্তানকে প্রশ্ন করেছিলাম- “তুমি তোমার মা-বাবার বিরোধ মিমাংসায় ভূমিকা রাখতে পার না? মেয়েটি কান্না জড়িত কন্ঠে জবাব দিল, আমি আর কত বুঝাব, ওনারা তো কেউই বুঝতে চায় না, আমি মুরুব্বীদের লাগিয়েছি, তাদের কথাও শুনে না, কেউই যখন তাদেরকে বুঝাতে পারে না, আমি একটি বাচ্চা মেয়ে, আমি কি ভূমিকা রাখতে পারি, আমি তো আমার মাকেও চাই, বাবাকেও চাই”।
নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ের মা একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা, বাবা ছোট খাটো ব্যবসায়ী। সন্তানদের রেখে স্কুল শিক্ষিকা পালিয়ে চলে গেছে তার চেয়ে কম বয়সী এক ছেলের সাথে। সাবজেক্ট- পরকিয়া প্রেম। উপায় না পেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটি আশ্রয় নিয়েছে নানার বাড়িতে, ছোট ভাইটি রয়ে গেছে তার বাবার সাথে। স্বামীর অভিযোগ স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার সময় জমি বিক্রির ১২ লাখ টাকাও নিয়ে গেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে মামলার উদ্ভব হলে কোর্টে আসে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটি।
সামাজিক অবক্ষয়ের নিকৃষ্ট উদাহরন এসব মামলা শুনানীতে বিবেকবান বিচারক ও আইনজীবীগন কিংকর্তব্যবিমুড় হন প্রায় সময়ই। আদালত প্রথমে স্কুল শিক্ষিকার জামিন না মঞ্জুর করা হবে বলে ঘোষনা দিয়ে পরে আবার উভয় পক্ষের আইনজীবীদের ডাকেন। বেশ কয়েক ঘন্টা আদালতের কাঠগড়ায় বসে থাকা স্কুল শিক্ষিকার ঘর্মাক্ত চেহারা ছিল চোখে পড়ার মতো। আদালত পরে বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে স্কুল শিক্ষিকার জামিন মঞ্জুর করেন।
কেস স্টাডি-২ঃ প্রায় ১৩ বছর পূর্বে তুচ্ছ ঘটনায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়। তখন একমাত্র ছেলের বয়স ছিল ২ বছর। ছেলে জন্মের পর মা হন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা। বাবা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে কর্মরত। বাবা-মা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকায় ১৩ বছরের কঠিন জার্নি শেষে ছেলেটি এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আজ মার কাছে যায় তো কাল সে বাবার কাছে যায়। বাবার কর্মস্থল হবিগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১শ কিলোমিটার দুরে।
আর্থিক অনটনের কারণে ছেলেকে নিয়মিত দেখতে আসতে পারেন না। সেদিন দেখলাম একটি হোটেলে বাবা বসে আছেন আর ছেলে ভাত খাচ্ছে। বাবা ছেলে বিভিন্ন গল্প করছেন। আমার মনে খুব খটকা লাগলো ছেলের সাথে বাবা খাচ্ছেন না কেন? পরে জানতে পারলাম- শুধু নিজের চোখের সামনে ছেলেকে খেতে দেখতে বাবা চলে এসেছেন ১শ কিলোমিটার দুর থেকে। আসা যাওয়ার ভাড়া আর একমাত্র ছেলেকে খাওয়ানোর টাকা ছাড়া তার হাতে কোনো টাকাই ছিল না। তাই ছেলে খাচ্ছে আর বাবা শুধু দেখছেন।
কেস স্টাডি-৩ ঃ ক্লাশ ফোর ফাইভে পড়া ছেলেটি পরিবারে কিছু অর্থ যোগান দিতে একটি ক্লাবে কাজ করে। ক্লাবের কাজটিও সন্ধার পরে রাত ৯/১০টা পর্যন্ত। ছেলেটির বয়সী অন্যান্য ছেলে মেয়েরা এ সময় পড়ার টেবিলে। ওই ছেলেটি পড়ার টেবিলে থাকলে হয় তো তার খাবার টেবিল ফাকা থাকতো।
স্কুলে পরীক্ষা চলছে, ক্লাবের সদস্যরা যতটুকু ছাড় দিতে পারেন ততটুকু ছাড় দিচ্ছেন। প্রায় সময়ই দেখি ছুটি হওয়ার আগেই ছেলেটির মা ক্লাবের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করেন। পরীক্ষা সামনে, ছেলে না পড়ে দায়িত্ব পালন করছে কøাবে, মায়ের মন ঘরে বসে থাকার কথা নয়, কারণ এই সময়ে ছেলের পড়ার টেবিলে বসে থাকার কথা। ছেলেটির বাবা থেকেও নেই। সেই একই পুরোনো গল্প।
নোটঃ তালাক কোনো সমাধান নয়। সাময়িক লোভ লালসায় বা ভুল বুঝাবুঝির কারণে একজন আরেকজনকে তালাক দিলেন তো সারা জীবন এর গ্লানি বহন করতে হবে, সন্তানাদি থাকলে এর পুরো ভার বহন করতে হয় তাদেরকে।
এম এ মজিদ
আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ।
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply