গত ১৫ বছর যাবত নিখোজ ব্যক্তির লাশ পাওয়াটাই যেন একেকটি পরিবারের প্রতি আওয়ামীলীগের করুনা ছিল। লাশের জন্য মানুষের মিছিল বিশ্বের আর কোথাও হয়নি, বাংলাদেশে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। স্বজনদের একটিই দাবী আমার নিখোজ বাবার, নিখোজ সন্তানের, নিখোজ ভাইয়ের লাশ চাই, লাশ না পেলেও অন্তত কবরটা যেন দেখিয়ে দেয়া হয়, কবরের পাশে দাড়িয়ে দুচোখ ভরে পানি ফেলতে চাই, চোখের পানিতে বুক ভেজাতে চাই, কী করুন আর্তনাদ স্বজনহারা মানুষের।
আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যাওয়া এসব আর্তনাদ শুধু ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার মন গলাতে পারেনি, মন গলাতে পারেনি টাকার বালিশে ঘুমাতে যাওয়া কিছু অফিসার নামক নর্দমার কীটের। আমি চিন্তা করি একেকটি জীবন্ত মানুষকে গুম করে, খুন করে কিভাবে তারা স্ত্রী সন্তানের সান্যিধ্যে যেত। কিভাবে তারা নিজের সন্তানকে আদর সোহাগ করতো, কিভাবে তারা ঘুমাতে পারতো।
এই অসভ্য মানুষগুলো কি স্বপ্নেও কিছু দেখতো না? আপনি প্রকাশ্যে আইনের শাসনের কথা বলবেন, আর দিনে রাতে মানুষকে গুম করে বছরের বছর অন্ধকার প্রকোষ্টে বিনা বিচারে বন্দী করে রাখবেন, তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন না, তাদের পরিবারের কাউকে জানাবেন না তাকে মেরে ফেলা হয়েছে না কি জেলে দেয়া হয়েছে, তা হয় না।
বিগত ১৫ বছরে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা, সরকারের বিরোধীতাকারী ব্যক্তি, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ব্যক্তিগত জেদের কারণে বলি কয়েক হাজার মানুষকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সময়ে সময়ে কিছু মানুষকে ছেড়ে দেয়া হলেও এখনো নিখোজ ৬শ এর মতো ব্যক্তি। সর্বশেষ মাইকেল চাকমা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, ব্যারিষ্টার আরমানকে ফেরত দেয়ার মধ্য দিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত সুইডেনের নেত্র্র নিউজের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সত্যতা মিলেছে মায়ের ডাক নামক স্বজনহারানো পরিবার গুলোর অভিযোগের।
আমি বুঝিনা এসব অপরাধের কি জবাব আছে আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনার কাছে। স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতারা এসব প্রশ্নের কি জবাব দেবেন জাতিকে। শুধু গুমের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর নাকে খৎ দিয়ে দল ত্যাগ করা উচিৎ, তাদের রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিৎ। খাবার টেবিলে বসে যদি আপনার সন্তান আপনার কাছে এসব গুমের ঘটনার জবাব চায় কি জবাব দেবেন সন্তানকে? সাড়ে ৫ বছরের মধ্যে একটি দিনের জন্যও মাইকেল চাকমাকে সূর্য্যের আলো দেখতে দিলেন না, ৯
বছরেও একদিন ব্যারিষ্টার আরমানকে প্রাকৃতিক বাতাস গ্রহন করতে দিলেন না, ৯ বছরে একদিনের জন্যও স্বজাতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমীকে আলো বাতাসের মধ্যে নিয়ে আসলেন না, একাধারে ৬১ দিন চোখ বেধে রাখলেন (বাথরুম ও খাবার দেয়ার সময় চোখ খুলা হতো) সাবেক জজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে, সাড়ে ৩ বছর গোপন ঘরে আটকে রাখলেন জেএমবির সাথে সম্পৃক্ততা আছে শুধু এমন সন্দেহে ১৪ বছরের এক কিশোরকে, ভিন্ন মতের
অন্তত ২জন সিনিয়র সাংবাদিককে মাসের পর মাস গোপন বন্দীশালায় আটকে রাখলেন, কোনো কোনো সময় যদিও এক দুজনকে ছেড়ে দিতেন, কী নাটক আর গল্প সাজাতেন তাদেরকে নিয়ে। এসবের কি জবাব আছে আওয়ামীলীগের কাছে? কোনো একটি গণতান্ত্রিক দেশে গোপন কারাগার থাকবেই না, এখনো না, তখনো না, এটাই আইনের কথা।
কাউকে আটকের পর যত দ্রুত সম্ভব তার পরিবারকে জানাতে হবে, এটাই আইন। আটকের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আটক ব্যক্তিকে সোপর্দ করতে হবে, এটাই ফৌজদারী আইনের বিধান। আমার মনে হয় এতোসব অপরাধের কোনো জবাব নেই বলেই শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, অনেক মন্ত্রী এমপি পালিয়ে গেছেন, অনেক মন্ত্রী এমপি নেতা আত্বগোপনে আছেন, অনেক সরকারী কর্মকর্তা অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে আছেন। বাংলাদেশে ক্ষমতা ছাড়ার পর কেউ পালায়নি। এরশাদও না, খালেদা জিয়াও না।
এম এ মজিদ
আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ১৭ আগষ্ট ২০২৪
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply