সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামের ব্যানারে এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় মহসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করলে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানিয়ে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়। এরপর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্বরোড অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে তারা পুলিশি বাঁধার মুখে পড়েন। পরে জাদুঘর সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে কোটবাড়ি বিশ্বরোডে অবস্থান নেন।
এ সময় প্রায় চার-পাঁচ শ’ শিক্ষার্থী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘মেধা যার মেধা যার চাকরি তার চাকরি তার’ ‘মুক্তি যুদ্ধের মূল কথা সুযোগে সমতা’, ‘স্বাধীনতার মূল কথা সুযোগে সমতা’, ‘রেলের ৪০ ভাগ কোটা মুক্ত করে রেল সম্পদ রক্ষা করো’ ও ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি।
বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধের বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান বলেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিল না হলে আমরা আন্দোলন করে যাব। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিল তারা আজ সংসদে বসে আছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ তারা ধ্বংস করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে সকল কোটা ব্যবস্থা উঠিয়ে দেন। তবে তবে আজ কেন এই কোটা। সকল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা উঠিয়ে দিতে হবে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে সংগ্রাম ছাড়া অধিকার পাওয়া যায়নি। তাই আজ আমাদের মহাসড়ক অবরোধ। মেধা দিয়ে যদি চাকরি না পায় তাহলে একটি স্বাধীন দেশে মৌলিক অধিকার কোথায়? পাকিস্তান আমলে বৈষম্যের করণে আমরা রাজপথে নেমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। আজো আমরা সেই বৈষম্যের শিকার।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন বলেন, আজকে আমরা রাজপথে এসেছি। কারণ হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছে কোটা প্রথা পুনর্বহাল থাকবে। সর্বসাকুল্যে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকবে। যদি এই কোটা বহাল থাকে তবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে না। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিপক্ষে আমাদের আন্দোলন নয়। সারা দেশে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিশেষ গুরুত্ব আছে। উপর মহল যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদেরকে আমরা বার্তা দিতে চাই। যদি তারা ব্যবস্থা বাতিল না করে তাহলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন করব।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হল, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে, প্রতিবন্ধী ও উপজাতি কোটা ছাড়া প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সকল কোটা বাদ দিতে হবে। অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহার করতে হবে এবং উল্লিখিত তিন দফা দাবি সমূহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর পৌঁছে দিতে হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান বলেন, আপনারা চার দফা দাবি লিখিত আকারে আমাদের দিন। আমি বিকেলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বরাবর আপনাদের দাবি সমূহ পৌছে দেব।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply