কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের “ঘেটু পুত্র কমলা” বাংলা চলচিত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বাতাসার প্রশংসা করতে দেখা গেছে। এক সময় জনশ্রুতি ও পুঁথিতে নবীনগরের বাতাসা-সন্দেশের জনপ্রিয়তা ও শ্রেষ্ঠত্বের সুনাম থাকলেও এখন হাট-বাজারে তেমন একটা দেখা মেলে না নামকরা এ মিষ্টি জাতীয় মুখরোচক বাতাসা-সন্দেশের।
বাঙলাদেশে আধুনিক মিষ্টির ইতিহাস ২০০ থেকে ৩০০ বছরের হলেও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য সামগ্রীর ইতিহাস ২ হাজার বছরেরও পুরনো বলে জানা যায়। যা পৌরাণিক কল্পকাহিনী ও ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে লিপিবদ্ধ আছে। বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং এর স্ত্রী লেডিক্যানির নামেও এদেশে মিষ্টির নামকরণ করা হয়েছে। যা আদতে লালমোহন ভোগ জাতীয় মিষ্টি। হিন্দুদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাবার ছিল মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বিশেষ করে দই, ক্ষীর, মাখন ও ঘি।
বর্তমানে নবীনগরের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। উপজেলার নবীনগর টু কোম্পানিগঞ্জ সড়কের ইব্রাহিমপুর বাঁশবাজার, ভোলাচং, কোনাঘাট, নবীনগর সদর বাজার, নবীনগর টু আড়াইহাজার ফেরিঘাট সড়কের শ্যামগ্রাম ইউপির শ্যামগ্রাম, ছলিমগঞ্জ টু বাঞ্ছারামপুর সড়কের বড়িকান্দি ইউপির ছলিমগঞ্জ, লাউর ফতেহপুর ইউপির বাশারুক, ফতেহপুর, শিবপুর ইউপির শিবপুর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের মিষ্টি এনে দিয়েছে সুখ্যাতি। এ যেন মিষ্টির নগরী। তবে মিষ্টি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি সুনাম কেড়েছেন সলিমগঞ্জ বাজারের রাধাকৃষ্ণের দোকান ও শ্যামগ্রাম বাজারের লেবার দোকানের মিষ্টি।
স্থানিয় উদোক্তাদের খামার ও চাষীদের পালিত গাভীর দুধ বাড়ি ও বাজার থেকে সংগ্রহ করে। এ সব দোকানে তৈরিকৃত প্রতি কেজি রসগোল্লা নরমাল ২৪০ টাকা, সাদা চমচম ২৮০ টাকা, লাল চমচম ২৮০ টাকা, মাওয়া স্পেশাল চমচম ৩২০ টাকা, কালো জাম ২৪০ টাকা, সাদা নরমাল মিষ্টি ২৫০ টাকা, জাফরান ভোগ ৫০০ টাকা, বেবি আঙ্গুরি ৩৫০ টাকা, কাঁচা ছানা বরফি ৫০০ টাকা, ছানা আমৃত্তি স্পেশাল ৫০০ টাকা, ছানামুখি ৫০০ টাকা, ছানা মিষ্টি ৩২০ টাকা, রাজভোগ স্পেশাল ৪৫০ টাকা, কাঁচাগোল্লা ৫৫০ টাকক, স্পেশাল রসমালাই ৩২০ টাকা, ক্ষীর পেরা সন্দেশ ৬০০ টাকা, সাদা সন্দেশ ২৫০ টাকা, গজা ২২০ টাকা, ক্ষীর দধি ১ গ্লাস ৩০ টাকা, লালমোহন ২৮০ টাকা, লালমোহন স্পেশাল ঘি ভাঁড় ৪৫০ টাকা, নিমকি ২২০ টাকা, চিনির সাদা জিলাপি ১৪০ টাকা, মাষের আমৃত্তি ১৮০ টাকা, সরমলাই ৫০০ টাকা দরেসহ সুস্বাদু মজার বাহারি নামের মিষ্টি বিক্রি করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও দই-মাঠা, লাচ্ছি, সন্দেশ, নারিকেলের নাড়ু, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, লুচি, গুড়ের জিলাপি, মাষের ডালের জিলাপি, মন্ডা মিষ্টি, বালিশ মিষ্টি, কাঁচাগোল্লা, পানতোয়া, সাবিত্রী, রসমঞ্জুরি, রসকদম, খন্ডাল, মতিচুর, লাড্ডু, মাখন, ঘি, স্পঞ্জ, প্রাণহরা, লালমোহন, কাঁচা মরিচের মিষ্টি, প্যারাসহ নানা মিষ্টি জাতীয় খাবারের সমাহার থাকে উপজেলার মিষ্টি দোকান গুলোতে।
রাধাকৃষ্ণ মিষ্টি দোকানের মালিক জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মিষ্টি খেতে আসে। কেউ কেউ ১ থেকে ২০ কেজিও সঙ্গে করে নিয়ে যায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য।
লেবার মিষ্টির দোকানের মালিক জানান, দৈনিক গড়ে ভালোই মিষ্টি বিক্রি করি। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়। মেয়র এডভোকেট শিবশংকর দাস বলেন, আমাদের মিষ্টির সুখ্যাতি ধরে রাখতে হবে। এতে মিষ্টির জন্য আসা মানুষের জন্য এখানকার মানুষের নানা কাজের সুযোগ তৈরি হবে। এলাকারও উন্নতি ঘটবে।
ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, এটা একটা এলাকার জন্য গর্বের বিষয়। এতে একটা ব্র্যান্ডিং নাম তৈরি হয়। যার কারনে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে এতে অনেক বেকার সমস্যার সমাধানও হবে এবং এলাকার সুনামও বৃদ্ধি হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, কুমিল্লার নাম আসলেই আমাদের প্রথমেই মাথায় আসে “রসমালাই” এর কথা। সেক্ষেত্রে নবীনগরের নাম আসলেই সুনামের সাথে মিষ্টির প্রসঙ্গ আসে।
নবীনগরের মিষ্টি খেতে চাইলে চলে আসতে পারেন। সেজন্য বর্তমান প্রযুক্তির জামানায় গুগুল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আসতে পারেন খুব সহজে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর, বাঞ্ছারামপুর সদর, মুরাদনগর থানার কোম্পানিগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে সিএনজি যোগে আসতে পারেন নবীনগরের রসালো মিষ্টির স্বাদ নিতে। স্থান ভেদে আকার ও মিষ্টির ভিন্নতায় দাম হবে প্রতি কেজিতে ২২০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা কেজি মাত্র। সর্বোচ্চ ১২ টি কিংবা ১ টি মিষ্টিই হতে পারে ১ কেজি ওজনের। চাইলে অর্ডার করে নিজের চাহিদা মতো সাইজ করে নিতে পারেন নবীনগরের মিষ্টি।
Leave a Reply