বিলম্বে হলেও ইসলামের নামে গড়ে উঠা জঙ্গি সংগঠন সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে গ্রেটব্রিটেনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটিকে ইহুদি বিরোধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এর সদস্য হওয়া ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছে ব্রিটিশ সরকার। ফিলিস্তিনের উগ্রপন্থি সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলার প্রশংসা করার জন্য সংগঠনটিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও একটি উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তান-বাংলাদেশ ভারত এবং মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশে এই সংগঠনটিকে কয়েক বছর পূর্বেই নিষিদ্ধ করা হয়। গণতান্ত্রিক দেশ গ্রেট ব্রিটেনে উদার মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগে এরা তাদের উগ্রবাদি কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল।
সমগ্র গ্রেটব্রিটেনে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক, হিযবুত তাহরির ব্রিটেন একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়ে খেলাফত প্রতিষ্টার আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। তাদের শাখা গুলো যেমন হিযবুত তাহরির ব্রিটেন বাংলা শাখা, হিযবুত তাহরির ব্রিটেন উর্দু শাখা, হিযবুত তাহরির ব্রিটেন আরবী, হিযবুত তাহরির ব্রিটেন ফেঞ্চ শাখা, হিযবুত তাহরির বিটেন ইংরেজী শাখা, হিযবুত তাহরির ব্রিটেন হিন্দি শাখা ইত্যাদি।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, এই গোষ্ঠী ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং ‘সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসবাদের প্রচার ও উৎসাহ দেয়।’ লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে হিযবুত তাহরীর অনুসারীদের ‘জিহাদ’–এর পক্ষে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বহু আগেই। এরপরই যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হলো।
ঢাকা জেলার অধিবাসী নাসিম গণির হাত ধরে গ্রেটব্রিটেনে হিযবুত তাহরির বাংলা শাখার যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে ২৮ বছর পূর্বে। বর্তমানে এই সংগঠনটির ব্রিটিশ বাংলাদেশী সদস্য সংখ্যা দশ হাজারেরও উপরে। বর্তমানে বাংলা শাখার নেতৃত্বে রয়েছেন ঈমাম লিয়াকত সরকার, নূরে আলম হামিদি, সলিসিটর কুদ্দুস, রুকন উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সলিসিটর অনেকই এই সংগঠনের সদস্য, সংগঠনটির উদ্দেশ্য বিশ্বে খিলাফত প্রতিষ্টা।
হিযবুত তাহরীর একটি আন্তর্জাতিক উগ্রবাদি সংগঠন। তারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক। বাংলাদেশে ২০০৯ সালে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের মার্চে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যার অভিযোগে সংগঠনটির নেতা শফিউর রহমান ফারাবীকে অভিযুক্ত করা হয়।
যুক্তরাজ্যে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার আদেশ সোমবার পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদেশের বিপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পড়লে আগামী শুক্রবার থেকেই নিষিদ্ধের আদেশ কার্যকর হবে। ব্রিটিশ আইনে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। নিষিদ্ধ হওয়ার পর সেই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত যে কোনো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটিশ সরকারের কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে এখনো গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেননি। গত অক্টোবরে হিযবুত তাহরীরের অনুসারীরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বড় একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল। সেখানে জিহাদের ডাক দেওয়ার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী খিলাফত প্রতিষ্টার লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালে ফিলিস্তিনে সংগঠনটির জন্ম। এর পর ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার ঘটে। প্রতিষ্টার পর থেকেই সংগঠনটি সমগ্র মুসলিম বিশ্ব মিলে একক ইসলামি সরকার বা খিলাফত কায়েমের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply