জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরা পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ পার্টির যে ১০ম জাতীয় সম্মেলন ডেকেছেন তারা তার বিপক্ষে।
শনিবার জাতীয় পার্টি সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় এমন মনোভাব ব্যক্ত করেন নেতারা। জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় প্রেসিডিয়ামের ৪১ সদস্যের মধ্যে ৩৮ জন এবং ২৬ এমপির মধ্যে ২০ জন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আগামী ২৬ নভেম্বর দলের যে কাউন্সিল ডেকেছেন তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হয়। জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করার বিষয়েও কেউ কেউ দাবি তোলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, শেষবারের মতো রওশন এরশাদকে আগামী ২৬ নভেম্বর পার্টি কাউন্সিল বাতিল করার অনুরোধ করা হবে। তিনি (রওশন এরশাদ) যদি কাউন্সিলে অনড় থাকেন তাহলে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্তেও যেতে পারে জাতীয় পার্টি। তবে এর আগে রওশন এরশাদের সাথে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগিনা আদেলুর রহমান আদেল এমপিকে। রওশন এরশাদ যদি ফোন না ধরেন সে ক্ষেত্রে তার সন্তান সাদ এরশাদের সাথে কথা বলবেন তিনি।
গতকাল শনিবার বনানী কার্যালয়ে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, জাতীয় পার্টি থেকে কিছু দিন আগে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পার্টির সাধারণ সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, সে যত বড় বা শক্তিশালী হোক না কেন। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমি যেকোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নেবো।
এ দিকে পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি নেই, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। এখন জাতীয় পার্টির কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না, জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের সময় এখনো হয়নি। কিছু মানুষ একটি কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করছে। আসলে ওই কাউন্সিলের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আমরা ওই কাউন্সিলকে আমলেই নিচ্ছি না। সবাই জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এখন বিরোধীদলীয় নেতা। জাতীয় পার্টি সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যবৃন্দ জি এম কাদেরের নেতৃত্বেই সংসদে যাবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ আজো ঐক্যবদ্ধভাবে ওই সিদ্ধন্তের সাথে একমত পোষণ করেছেন। জি এম কাদেরই বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, এটি অলঙ্কারিক পদ। তিনি বলেন, কাউন্সিল আহ্বান করার এখতিয়ার নেই বেগম রওশন এরশাদের। দলীয় বা প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব নেই বেগম রওশন এরশাদের। নৈতিকতার প্রশ্নেই দেশে ফিরে বেগম রওশন এরশাদের বিরোধীদলীয় নেতার পতাকা ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, সংসদীয় দলের সদস্যরা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করেছেন। আর মসিউর রহমান রাঙ্গা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি করবেন না। তাই তার বিরোধীদলীয় হুইপের পদে থাকার প্রশ্নই আসে না।
মুজিবুল হক চুন্নু আরো বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় পার্টি আর কোনো জোটে নেই। জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে গণমানুষের পক্ষে কথা বলছে, এতে কেউ কেউ মনে করে জাতীয় পার্টি বুঝি বিএনপির সাথে যোগ দিচ্ছে। আসলে জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি কারো জোটে নেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের সাথে আছে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply