বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ সারাদেশের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহার এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আটক নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করার ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের, বিএনপি মহাসচিবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার, রিমান্ডে গ্রহণ, বিএনপি অফিসকে তালাবদ্ধ করে রাখা- এ সবই জনপ্রিয় দল বিএনপিকে নেতৃত্বশূণ্য করার নীল নকশার অংশ। যাতে বিএনপি এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান ‘এক দফার’ আন্দোলন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রের এই লড়াই অব্যাহত থাকবে।
এতে আরো বলা হয়, তথাকথিত রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ সারাদেশের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আটক নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তি ও দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে কথিত ভাঙচুরের ঘটনাটিও এই নাটকের অংশ, যেন বিএনপি নেতাকর্মীরা বিচার বিভাগ থেকে কোনো ন্যায় বিচার না পান। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তা না হলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে কথিত ভাঙচুরের ঘটনায় আমাদের দায়িত্বশীল পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী সদস্যকে কেন আসামি করা হবে? আমরা এই নীল নকশা প্রণয়নকারীদের প্রতি ধিক্কার জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারদেশের ১৭ জন আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিএনপি নেতাদের বাসায় না পেয়ে তাদের স্বজনদের ধরে আনা হয়েছে।
তথাকথিত ক্রাইম জোন ঘোষণা করে বিএনপি অফিস বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যাতে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করতে পারে। আমরা স্পষ্টত বলতে চাই, দায়েরকৃত মামলাগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুলিশ কন্সটেবল মোঃ আমিরুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলা থেকেই এর প্রমাণ মিলবে।
এই মামলায় বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, অংগ সংগঠনসমূহের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দেশের জেলা ও থানা পর্যায়ের ১৬৪ জন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য যে পুলিশ এই বিপুল সংখ্যক নেতাদের নাম, ঠিকানা, মা-বাবার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেছে। পূর্ব প্রস্তুতি ও পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বিএনপির মত একটি জনপ্রিয় দলকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তথাকথিত সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের মত জঘন্য অপরাধের সাথে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে আসামি করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রমুখ।