বিএনপির সরকার পতনের জন্য ঘোষিত এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, এই এক দফার মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই, সবই গতানুগতিক। এর আগেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ও রাজবন্দীদের মুক্তির কথা বলেছে। তারা আগেও ১০ দফা, ২৭ দফা ও ৩১ দফা দিয়েছে। এখন পুরাতন বিষয় পরিবর্তন করে নতুন করে এক দফা ঘোষণা করেছে। আর এই দাবি আদায়ে তারা ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে। এর আগেও তারা একই রকম কর্মসূচি পালন করেছে; কিন্তু কোনো সাড়া পড়েনি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির এক দফায় নতুন কিছু না থাকলেও তাদের এক দফায় বেশ সাড়া পড়েছে। আওয়ামী লীগের এক দফা হলো- সংবিধান সম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান।
আওয়ামী লীগ সবসময় সংবিধান অক্ষুন্ন রাখার জন্য সচেষ্ট ছিল, এখনো আছে। গত এক দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের রায়ে জাদুঘরে গেছে। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী ইতিমধ্যে দু’টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান ছিলেন, আগামীতে থাকবেন। শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। সংবিধান সম্মতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব থাকবে দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। একই সুরে কথা বলছে কিছু বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থা। আওয়ামী লীগও চায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সবার চাওয়া যখন আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক- সেই দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। আর এই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ যে এক দফা ঘোষণা করেছে তা অক্ষুন্ন রাখতে আওয়ামী লীগ আগের মতোই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে।
এরমধ্যে রয়েছে, শান্তি সমাবেশ, শান্তি শোভাযাত্রা, শান্তি সভাসহ এ ধরনের কর্মসূচি। আর এই কর্মসূচি পালন করার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন রাজপথে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি দল। নেতারা বলছেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপি অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই অপচেষ্টা জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গতকাল বলেন, বিএনপি এক দফা আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা বরাবরের মতো। তারা আগেও এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে; কিন্তু তারা ঘোষণা দিয়ে ভুলে গেছে। তাদের কর্মসূচি বা তাদের দাবিগুলো জনগণের সমর্থন এবং আস্থা পায়নি- এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তারা সকাল-বিকাল-রাতে বিদেশীদের কাছে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য আমরাও এক দফা ঘোষণা করেছি। আমাদের এক দফা হলো- সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা শান্তি সমাবেশ, শান্তি শোভা যাত্রাসহ এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব। কেউ যদি দেশের শান্তি বিনষ্ট করতে আসে তাহলে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করব।
বিএনপি ঘোষিত এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা প্রসঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এক দফা তারা মাঝে মধ্যেই ঘোষণা করে। গত বছর একবার এক দফা ঘোষণা দিয়ে বলেছিল বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে এসে সভায় যোগ দেবেন। তারেক জিয়া উড়ে এসে যোগ দেবেন। তারেক জিয়া কিভাবে উড়ে আসবেন সে ব্যাখ্যা তারা এখনো দেয়নি।
তারা এ রকম অনেক কিছু বলেছিল; কিন্তু সে আন্দোলন গরুর হাটে মারা গেছে। এর আগেও বিএনপি নানা ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল; কিন্তু কোনোটিই হালে পানি পায়নি। তবে তিনি বিএনপির সংসদ বিলুপ্তির দাবিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। ড. হাছান মাহমুদ মনে করেন, বুধবার বিএনপির কর্মসূচি থেকে দেয়া সরকারের পদত্যাগের দাবি পুরনো কথাই নতুন করে বলা। তবে সেখানে একটি বিষয় অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক, সেটি হচ্ছে তারা যে দাবি দিয়েছে সেখানে তারা বলেছে- সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।
আমাদের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ পরবর্তী সংসদ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকে। সংসদ বিলুপ্ত করার দাবি দেয়া একটি দুরভিসন্ধি। এতে প্রমাণ হয়, তারা আসলেই দেশে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করতে চায় এবং সেটি করে তারা অসাংবিধানিক কোনো কিছুকে জায়গা করে নিতে চায়। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার হীন উদ্দেশ্যেই বিএনপি এই দাবি দিয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা।
এ দিকে বিএনপির রাজনীতি দফার বিভ্রান্তিতে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কখনো ১০ দফা, কখনো ২৭ দফা, কখনো এক দফা, আবার কখনো ৩১ দফা! বিএনপি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ঘোষিত এসব দফা জনগণ কর্তৃক ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তাই তারা কিছু দিন পর পর নতুন নতুন দফা নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এই দফা জনগণের চাহিদা বিবেচনা করে নয়, বরং ঐতিহ্যগতভাবে তাদের দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের স্বৈরতান্ত্রিক অপরাজনীতি ফিরিয়ে আনার কূটকৌশল। তাদের এসব দফা ও রূপরেখায় জনকল্যাণের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপন্থা নেই। জনগণ তাদেরকে আস্থায় না নিলেও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তারা মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।