প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমানর ফারুকের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের কমিটির দেড় যুগ চলছে। এতে নেতৃত্বে নতুন মুখ না আসায় সংগঠনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে বর্তমানে কার্যতঃ কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি বহাল নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য সফরে আসলেই নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন।
কিন্তু প্রতিবারই নেতাকর্মীরা হতাশ হন, দাবী আর ফলপ্রসূ হয় না। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।যেখানে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চারবার নতুন ভাবে রদবদল হয়েছে সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ পদে ।যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মি বলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন যেখানে বিগত এক যুগেও কোনো সম্মেলন হয়নি।
যদিও নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোনো শাখা সংগঠন নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রতি সংহতি জানিয়েই প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো চলে, তাই যুগপত সাংগঠনিক কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি লন্ডনের হিলটন হোটেলে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিলো ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। এছাড়া করোনায় কমিটির পাঁচ জন সহ-সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। খালি হওয়া পদগুলো পূরণ করা হয়নি। অন্যদিকে, কমিটির কেউ কেউ নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে দায়িত্ব পালন করতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যত কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি বহাল নেই।
সাধারণত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবার নিজে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন। তার সিদ্ধান্ত ছাড়া কখনোই কমিটি হয় না। বিগত কয়েক বছর যাবত যখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য আসেন তখন নতুন করে নেতাকর্মিদের মাঝে আগ্রহ দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী এবারের আগমন ঘিরেও একই রকম প্রত্যাশা ও উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটির বিষয়ে দলীয় সভাপতি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা এখানকার নেতা-কর্মীদের কথা শুনবেন এবং সম্মেলনের বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবেন বলেও প্রত্যাশা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, দলের মধ্যে গণতন্ত্রের স্বার্থে সম্মেলন ও নতুন কমিটি হওয়াটা জরুরি। দলের মধ্যে যোগ্য অনেকেই আছেন সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে দলের জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।
কারণ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ৬৫টি শাখা সংগঠনের মধ্যে গত ১৩ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি শাখার সম্মেলন করা হয়েছে। বাকীগুলোতে সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বন্দ ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। শুধু অভিযোগই নয়, বেশ কয়েকটি শাখা কমিটি রয়েছে এসব কমিটিতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, প্রবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেনতা বিরোধীরা। মানবতা বিরোধী অপরাধের কারণে যুদ্ধাপরাধী সাইদির সাজার রায় ঘোষনা করা হলে নর্থওয়েষ্টের একটি শাখা কমিটি এখানকার আওয়ামীরীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধী সাইদীর মুক্তি দাবি করে মিটিং করে। এই কমিটির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি, মিলটনকিং আওয়ামীলগের সভাপতি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পেইড মেম্বার ও কেন্দ্রীয় জমিয়তের সদস্য।
নেতাকর্মীদের অনেকেরই অভিযোগ- একটি গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ দেন না। তাদের মতে, নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানামুখী সমস্যা তুলে ধরতে পারতেন নেত্রীর কাছে। তাই অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত দলের জন্য নিবেদিত মাঠের কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি করা হোক।
এদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে নতুন কমিটিতে কারা দায়িত্ব পেতে পারেন তা নিয়েও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। নতুন সভাপতি হিসাবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আবুল হাশেম, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মজম্মিল আলী, বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি হরমুজ আলী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া বর্তমান সভাপতি সুলতান শরীফ মাহমুদ শরীফ আরেক মেয়াদ বহাল থেকে যেতে পারেন বলেও ধারণা রয়েছে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এতদিন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন অবস্থানও ছিল তার শক্ত। কিন্তু আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় পদে তাঁর আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যার ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে এখন যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক শাহ শামীম আহমেদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ।তবে দলের শীর্ষ দুইপদে যারা সার্বক্ষণিক দলকে সময় দিতে পারবেন এমন সক্ষমদের নেতা-কর্মীরা চান বলে জানা গেছে, এছাড়া এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে যারাই নেতৃত্বে আসবে তাদের অবশ্যই উচ্চশিক্ষিত হওয়া বাঞ্জনীয় এমন দাবী তুলেছেন নেতাকর্মিদের অনেকে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply