পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় আজ সোমবার আরো ১৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। নিখোঁজদের সন্ধানে তাদের স্বজনরা ভিড় করছেন নদী তীরে।
স্থানীয়দের সাথে নিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে অনেকেই ভিড় করছেন মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্রে। নতুন করে কোনো লাশ উদ্ধার হওয়ার সাথে সাথে তথ্যকেন্দ্রের বাইরে বোর্ডে ছবি লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরিচয় নিশ্চিতের পর সেখানে নাম ও ঠিকানা লেখা হচ্ছে।
আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলো- বোদা উপজেলার মাড়েয়া শালবাড়ী গ্রামের সুচিত্রা রানী (২২), আটোয়ারী উপজেলার ঝর্ণা পাল, শালডাঙ্গা মধ্য শিকারপুর গ্রামের দিপবাবু (২২), মাড়েয়া বটতলী গ্রামের জগদীশ (৩৫), মাড়েয়া আরাজী শিকারপুর গ্রামের কবিতা রানী (৩৩), মাড়েয়া গেদীপাড়া গ্রামের বেজ্য বালা ৫০), পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার দেবীপুর মুজাবনী গ্রামের দীপশিখা রানী, মাড়েয়া শাশবাড়ী গ্রামের সুব্রত (২), বোদা কলেজপাড়ার যতি মিম্রয় রায় (১৫), বোদা উপজেলার পাঁচপীর বংশিধর পুজারী গ্রামের দেন্দা রানী, একই উপজেলার মাড়েয়া কাউয়াখাল গ্রামের সুমিত্রা রানী, চন্দনবাড়ী শিকারপুর প্রধানপাড়া গ্রামের আদরী (৫০), দেবীগঞ্জের লক্ষ্মীরহাট কেকে বাড়ির পুষ্পা রানী।
আজ সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থল, তথ্যকেন্দ্র ও নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তার সাথে ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো: জহুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সলেমান আলীসহ জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিকেলে তারা দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্র শিকারপুর হাতিডোবা গ্রামের স্বর্গীয় বীরেন চন্দ্র রায়ের বাড়িতে যান।
নৌকাডুবিতে বীরেন রায়ের দুই পুত্রবধূ ও দুই নাতি মারা গেছেন। সেখানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চারজনের জন্য এক লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রতি পরিবারের স্বজনদের হাতে লাশ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার সকালে আউলিয়ার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস এবং ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছেন স্থানীয়রা। সেখানে ভিড় করছে নিখোঁজদের স্বজনেরা।
নাতির খোঁজে উপজেলার পাঁচপীর এলাকা থেকে এসেছেন বৃদ্ধ সুমল চন্দ্র। তিনি বলেন, নাতির লাশটা পেলে অন্তত নিজেরা সৎকারের কাজটা করতে পারতাম। মাড়েয়া বটতলি এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশীসহ সাতজন নিকটাত্মীয় এখনো নিখোঁজ। নৌকাডুবির পর থেকে তিনি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, বোদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পুজায় যোগ দিতে আমার ভাতিজা, ভাতিজার বউ, ভাতিজার শ্বশুর, শ্যালিকা এবং আমার ভাতিজি নৌকায় ওঠে দুর্ঘটনায় পড়েন। এখন পর্যন্ত কারো খোঁজ পাইনি। এখন তাদের লাশের অপেক্ষা করছি।
আউলিয়া ঘাট থেকে দিনাজপুর জেলার খানসামা জিয়া সেতু পর্যন্ত করতোয়া নদীর ৩০ কিলোমিটার ভাটি অংশের তিনটি স্থানে ১২ সদস্যের ডুডুরি দল উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা সদর দফতরের পরিচালক অপারেশন লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, পানিতে ডুবে থাকা যেকোনো মানুষের লাশ সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভেসে উঠে। সেই মোতাবেক ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালু রাখা হবে।