1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ অপরাহ্ন

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

আবদুল কাইয়ুম শেখ
  • মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না। ছবিঃ সংগৃহীত

৬১ হিজরির ১০ মহররম মোতাবেক ৬৮০ সালের ১০ অক্টোবর কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেদিন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করে মহানবী সা:-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন রা: সপরিবারে কারবালার প্রান্তরে এজিদের সৈন্যদের হাতে শাহাদতবরণ করেন। তার শাহাদতের ঘটনা অতি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। এই শোকাবহ ঘটনা প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সত্যের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে শাহাদতবরণ করা কোনো বিফলতা নয়, বরং প্রকৃত মুসলমানদের জন্য পরম আরাধ্য বিষয়। আল্লাহর পথে শাহাদতবরণ চিরসুখের কাক্সিক্ষত দরজা খুলে দেয়।

সত্য ও ন্যায়ের ঝাণ্ডা সমুন্নত করতে গিয়ে যারা মহান আল্লাহর পথে শাহাদতবরণ করেন, তারা সফল। তাদের সুখভোগ ও সফলতার বিবরণ দিয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার কাছে জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করো। কারণ তাদের কোনো ভয়ভীতিও নেই এবং কোনো চিন্তাভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯-১৭১)

শহীদদের অনন্য সম্মান ও মর্যাদা তুলে ধরে আল কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সূরা বাকারা-১৫৪) বিশ্বনবী সা: নিজেও আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে শাহাদতবরণ করার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। ‘হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, মহানবী সা: বলেছেন, আমার মন চায়, আমি আল্লাহর পথে শহীদ হই। এরপর আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই। আবার জীবিত হয়ে আবার শাহাদতবরণ করি। এরপর আবার জীবিত হয়ে আবার শাহাদত লাভ করি।’ (বুখারি-৩৬)
প্রতীয়মান হয়, আল্লাহর পথে শাহাদতবরণ করা কোনো বিফলতা নয়, বরং সফলতা। আল্লাহর পথে লড়াই করে জীবন দান করা অনাকাক্সিক্ষত নয়, বরং চিরকাক্সিক্ষত।

হজরত হোসাইন রা:-এর শাহাদত দিবসকে কেন্দ্র করে ক্রন্দন, বিলাপ, মাতম, শোক-তাপ ও তাজিয়া মিছিল করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। বাংলাদেশের পুরান ঢাকার হোসনি দালানসহ বেশ কিছু স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা আশুরার দিনে তাজিয়া মিছিল বের করে। তারা পরিহিত জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং দেহের বিভিন্ন অংশ রক্তাক্ত করে শোক প্রকাশ করে। এতে সাধারণ কিছু মুসলমানও না বুঝে অংশ নেয়। এ-জাতীয় শোকানুষ্ঠান নব উদ্ভাবিত ও বিদআত। তাই এগুলো বর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক।

হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, হজরত জয়নাব বিনতে মুহাম্মাদ সা: যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন নারীরা কান্নাকাটি করতে থাকেন। হজরত উমার রা: তাদেরকে বাধা দিয়েছিলেন। এ সময় আল্লাহর রাসূল সা: হজরত উমার রা:-কে সরিয়ে দেন। এরপর নারীদের সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমরা শয়তানের মতো ক্রন্দন ও বিলাপ হতে বিরত থাকো। এই ক্রন্দন ও বিলাপের প্রকাশ কখনো কখনো চোখ ও অন্তরের মাধ্যমে হয়। যদি এমনটি হয়, তা হলে একে রহমত জ্ঞান করবে। আর শোক ও মাতম কখনো কখনো হাত ও রসনার মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়ে থাকে। যদি এমনটি হয়, তা হলে মনে করবে এটি শয়তানের কর্ম!’ (সুনানে কুবরা বায়হাকি-১৬০)

যেসব লোক নব উদ্ভাবিত বিদআতি পন্থায় শোক প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে মহানবী সা: কঠোর হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেছেন। শরিয়তপরিপন্থী উপায়ে যেসব লোক শোক পালন করে তাদের সাথে মহানবী সা: নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যারা শোকে গণ্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ও জাহিলি যুগের মতো চিৎকার করে, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ বুখারি-১২৯৭ অন্য এক হাদিসে বিশ্বনবী সা: মাতমকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। ‘হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: মাতমকারী ও শ্রবণকারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ-৩১২৮)

আল্লামা শেখ সাদি রহ: বলেন, ‘শহীদগণের জন্য শোকপ্রকাশ করা উচিত নয়। প্রাণ একটি তুচ্ছ বস্তু। বেহেশত এর থেকে অনেক মূল্যবান।’ উর্দু ভাষার কবি বলেন, ‘হজরত হোসাইন রা: জীবন্ত অবস্থায় জান্নাতে বিচরণ করছেন। এমন লোকদের জন্য আফসোস ও পরিতাপ যারা অকারণে মাতম ও বিলাপে মশগুল রয়েছে! তাদের আনন্দে যারা আনন্দিত হয় তারা শোক হতে মুক্ত। যারা তাদের প্রতিহিংসা পোষণ করে তারাই মূলত শোক বিলাপের কৃত্রিমতায় যুক্ত।’ সিমাব আকবর আবাদি চমৎকার বলেছেন, ‘যারা শহিদগণের জন্য শোকতাপ করে তারা মূলত তাদের শাহাদত-পরবর্তী জীবন্ত অবস্থাকে অস্বীকার করে। কেননা আমরা জীবিত কারো জন্য তো শোকতাপ প্রকাশ করি না।’

হজরত ইমাম হোসাইন রা: কারবালার প্রান্তরে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করতে গিয়ে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন। আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে জীবন দেয়ার কারণে বর্তমানে তিনি জান্নাতের সবুজ-শ্যামল বাগিচায় বিচরণ করছেন। মহানবী সা:-এর এক হাদিসে হজরত হাসান ও হোসাইন রা:-কে জান্নাতি যুবকদের সরদার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘হাসান ও হোসাইন জান্নাতের অধিবাসী যুবকদের সরদার হবে।’ (তিরমিজি-৩৭৬৮)

ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে ইমাম হোসাইন রা:-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। আর আত্মত্যাগের মাধ্যমেই মূলত ইসলামের প্রতিটি বিপ্লব সাধিত হয়। এ জন্যই উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক মাওলানা মুহাম্মাদ আলি জাওহার বলেন, “কাতলে হোসাইন আসল মে মর্গে এজিদ হ্যায়, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারাবালা কি বা’দ।” অর্থাৎ ‘ইমাম হোসাইন রা:-এর শাহাদতবরণ প্রকৃত অর্থে এজিদের মৃত্যু। প্রতিটি কারবালার পরই ইসলামের নব উত্থান ঘটে।’ কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে চলতে ও ইসলামের বাণী সমুন্নত করার প্রাণপণ প্রয়াস চালাতে প্রেরণা জোগায়। তাই হজরত হাসান রা:-এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে ক্রন্দন, বিলাপ, শোকতাপ ও মর্সিয়া করার পরিবর্তে তার আত্মদান ও ত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হওয়া আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, ফিরে এলো সেই মহররম মাহিনা/ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD