রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাসের সরবরাহ যায় এরকম একটি প্রধান গ্যাস পাইপ-লাইনে গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
রাশিয়া বলছে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাল্টিক সাগর দিয়ে যাওয়া নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপ-লাইনটি ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
কিন্তু জার্মানির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হাবেক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে গ্যাসের সরবরাহ যদি আবার চালু না হয়, সেরকম পরিস্থিতির জন্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব হিসেবে ক্রেমলিন এখন গ্যাসকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
হাবেক স্বীকার করেন যে জার্মানি রাশিয়ার গ্যাসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তবে তিনি বলেন, তরলায়িত গ্যাস (এলএনজি) আনার জন্য জার্মানির দুটি ভাসমান গ্যাস টার্মিনাল এ বছরের শেষ নাগাদ চালু হয়ে যাবে।
গত জুন মাসের মাঝামাঝি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গ্যাস কোম্পানি গ্যাযপ্রম নর্ড স্ট্রিম ওয়ান গ্যাস পাইপ-লাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ এটির পূর্ণ ক্ষমতার ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনে। রাশিয়া তখন বলেছিল, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি জার্মানির সিমেন্স এনার্জির কাছে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো সময় মতে ফেরত না আসার কারণে এটি ঘটেছে।
জার্মানিতে এমন আশঙ্ক দেখা দিয়েছে যে এই গ্যাস পাইপলাইন হয়তো আদৌ আবার খুলবে না। সে ক্ষেত্রে জার্মানির গ্যাস সংরক্ষণাগারগুলো শীতের জন্য পুরোপুরি ভরে রাখা যাবে না।
জার্মানির শিল্পখাত ও বসতবাড়িগুলো রুশ গ্যাসের ওপর বিপুলভাবে নির্ভরশীল। অন্য কিছু ইউরোপিয়ান দেশেও গ্যাস সরবরাহের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ।
প্রতি বছরের গ্রীষ্মে গ্যাস পাইপ-লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চালানো স্বাভাবিক ঘটনা, কারণ গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা কম থাকে।
গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ থাকায় ইতালিতেও এর প্রভাব পড়েছে। ইতালির একটি জ্বালানি কোম্পানি ‘এনি’ বলছে, গত কয়েক দিনের গড় সরবরাহের তুলনায় সোমবার তারা রাশিয়ার গ্যাযপ্রমের কাছ থেকে এক তৃতীয়াংশ কম গ্যাস পাবে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার প্রধান ফাতিহ বিরল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে রাশিয়া হয়তো ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ একদম বন্ধ করে দিতে পারে এবং ইউরোপকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
রাশিয়া এরই মধ্যে পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে গ্যাসের দাম পরিশোধের নতুন ধরণের এক ব্যবস্থা মানতে অস্বীকৃতি জানানোর পর।
নর্ড স্ট্রিম ওয়ান গ্যাস পাইপ-লাইন দিয়ে চেক প্রজাতন্ত্র এবং অস্ট্রিয়াতেও গ্যাসের সরবরাহ যায়, তবে এই দুটি দেশে রাশিয়া থেকে ইউক্রেন হয়ে ভিন্ন একটি পাইপ-লাইনেও গ্যাস যায়।
রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর জার্মানি রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা ৫৫ শতাংশ হতে ৩৫ শতাংশে কমিয়ে এনেছে। জার্মানি রাশিয়ার গ্যাস ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চায়।
জার্মানিতে আর যেসব দেশ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে তাদের মধ্যে আছে নরওয়ে (৩১%) এবং নেদারল্যান্ডস (১৩%)।
রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের জন্য দ্বিতীয় একটি গ্যাস পাইপ-লাইন নর্ড স্ট্রিম টু নির্মাণও শেষ হয়েছে, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই পাইপ-লাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে।
যদি রাশিয়া থেকে হঠাৎ করে জার্মানিতে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, এটি দেশটিকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কারণ জার্মানির পুরো শিল্প খাতই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। অনেক আবাসিক গ্যাস সংযোগও রাশিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
ইউরেশিয়া গ্রুপের জ্বালানি বিশ্লেষক হেনিং গ্লয়স্টাইন বলেন, ‘যদি অগাস্টের শুরু নাগাদ নর্ড স্ট্রিম ওয়ান দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ আর চালু না হয়, জার্মান সরকারকে গ্যাস নিয়ে তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি করতে হবে, যেটা ওদের সর্বোচ্চ সংকেত।’
‘এর মানে হচ্ছে পুরো পাইকারি গ্যাস বাজার বন্ধ করে দেয়া হবে এবং সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণের দায়িত্ব নেবে। এর মানে হচ্ছে সামনের শীতে জার্মানিতে গ্যাসের রেশনিং করতে হবে। আর জার্মানিতে যা ঘটবে, দুঃখজনক-ভাবে তা সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়বে।’
জার্মান সরকারের জরুরি পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষের ঘরবাড়ি এবং হাসপাতালকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সূত্র : বিবিসি
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply