সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশনঃ
অমর একুশে গানের রচয়িতা প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশন। সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেণ্ট সাবেক কাউন্সিলার নূর উদ্দিন আহমদ এক শোকবার্তায় বলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ ৪৭ বছরের। তারই উৎসাহ অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক গবেষণার জন্যে আমরা ব্রিটেনে সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টা করি। প্রতিষ্টালগ্ন থেকেই তিনি সংগঠনটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় আমাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশন হারিয়েছে তার একজন অভিবাবককে। জাতি হারিয়েছে তার এক শ্রেষ্ট সন্তানকে। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর শূন্যতা কোনদিনই পূরণ হওয়ার নয়। আমরা তার বিদেহী আত্মর শান্তি কামনা করি ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনঃ
বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন গভীর শোক ও দুঃখের সংগে জানাচ্ছে যে মহান একুশের অমর সংগীতের রচয়িতা জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরী আজ ১৯ মে ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬.৪৯ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন। এক শোকর্বাতায় তিনি বলেন, “মহান একুশের অমর সংগীতের রচয়িতা জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত এবং দু:খ ভারাক্রান্ত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমি মরহুম আবদুল গাফফার চৌধুরীর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ হাইকমিশন সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষনিকভাবে মরহুমের পরিবারের পাশেই রয়েছে। জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি হারালো তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি হারালো তাঁদের বাতিঘর ও অভিভাবককে বাংলাদেশের বরেণ্য সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী মহান একুশের অমর সংগীত, তাঁর অসাধারণ লেখা ও কমের্র মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও অশেষ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।আমি মরহুম আবদুল গাফফার চৌধুরীর বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও মহান আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে তাঁর জান্নাতুল ফেরদৌস প্রাপ্তির জন্য বিশেষভাবে দোয়া করছি।
যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চঃ
কিংবদন্তীতুল্য সাংবাদিক, লেখক, মানবাধিকার নেতা ও ভাষা সংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ‘যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ যুক্তরাজ্য শাখা। এক শোকবার্তায় বিচার মঞ্চের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী ও সেক্রেটারী রুমী হক বলেন ‘কালজয়ী একুশের গানের রচয়িতা, কিংবদন্তীতুল্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, মানবাধিকার নেতা ও ভাষা সংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাভিভূত। শোকবার্তায় আরও বলা হয়, যার একুশের গান বিশ্বের ৩০ কোটি বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন, যিনি তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর দ্বারা জাতির সকল সংকটকালে বাতিঘর হিসেবে বিরাজ করেছেন, তাঁর মৃত্যুতে আমাদের জাতীয় জীবনে এবং গণমাধ্যমের জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবে না। দীর্ঘদিন রোগশয্যা থেকে গাফফার চৌধুরী বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকীতে অবিরাম লিখেছেন জাতির বিবেক হিসেবে। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী অবস্থানের কারণে বহুবার তিনি তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারপরও তিনি লক্ষ্যচ্যূত হননি। আমরা তাঁর পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্য, অগণিত গুণগ্রাহী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য
স্বাধীনতাপদক প্রাপ্ত লেখক ও অমর একুশে গানের রচয়িতা কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে । সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম বলেন, প্রয়াত আবদুল গাফফার চৌধুরীর অনুপ্রেরণা ও তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সালে যুক্তরাজ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। তিনি আজীবন যুক্তরাজ্য কমিটির উপদেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন জাতীয় সমন্বয় কমিটির ইউরোপিয়ান সমন্বয়কারী ছিলেন। শোক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রয়াণে বাঙালী জাতি হারালো এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে, নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য হারালো এর অভিভাবককে। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। উল্লেখ্য, আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটি
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা বর্ষীয়ান লেখক,বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জনপ্রিয় কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে এক শোক বার্তায় গভীর শোক জানিয়েছেন ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনসার আহমদ উল্লাহ, সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, বর্তমান সহ-সভাপতি মতিয়ার চৌধুরী, এটি এম মনিরুজ্জামান, সৈয়দ শাহ সেলিম আহমদ, সেক্রেটারি মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান, এসিসটেন্ট সেক্রেটারি আমিনুল হক ওয়েছ, ট্রেজারার মুহাম্মদ সালেহ আহমদ, এসিসটেন্ট ট্রেজারার আশরাফুল হুদা বাবুল, মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারি শাহ রুমি হক, সোসিয়াল ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মীরু, সালেহা আক্তার জোছনা, সাপ্তাহিক বাংলা সংলাপের আনসার মিয়া , ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেইন, ২৬শে টিভির সিইও জামাল খান ও বিশ্ববাংলা নিউজ এর সম্পাদক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল প্রমুখ। উল্লেখ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী বৃহস্পতিবার (১৯ মে ২০২২) ভোর ৬টা ৪৯ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের বার্ণেট হাসপাতালে মারা যান।১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে গাফফার চৌধুরী পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এ সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান।
সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান তিনি। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে লন্ডনে যান। এরপর তার প্রবাসজীবনের ইতিহাস শুরু হয়।সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন।কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক,একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।